হজ উভয় জীবনের জন্য কল্যাণকর এক ইবাদত

  • মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কাবা শরিফ, মক্কা, ছবি: সংগৃহীত

কাবা শরিফ, মক্কা, ছবি: সংগৃহীত

রমজানের চৌদ্দতম তারাবিতে তেলাওয়াত করা হয়েছে কোরআনে কারিমের সতেরোতম পারা। অর্থাৎ সূরা আম্বিয়ার শুরু থেকে সূরা হজের শেষ পর্যন্ত। এই অংশে বেশ কয়েকটি প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। বিশেষভাবে ছিলো পবিত্র হজের আলোচনা। সূরা হজের ২৬ থেকে ৩৩ নম্বর পর্যন্ত আয়াতসমূহে এ প্রসঙ্গটি স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া সূরা বাকারা এবং সূরা আলে ইমরানেও হজ প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে।

হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। সামর্থ্যবানের ওপর জীবনে একবার হজ ফরজ। তাই হজ ইসলামের অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘যখন আমি ইবরাহিমকে বায়তুল্লাহর ঠিকানা দিয়ে বলেছিলাম যে, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখো তওয়াফকারীদের জন্য, নামাজে দণ্ডায়মানদের জন্য এবং রুকু-সেজদাকারীদের জন্য। এবং মানুষে মধ্যে হজের ঘোষণা প্রচার করো। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তার দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও। এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এ সুসংরক্ষিত গৃহের তওয়াফ করে। এটা শ্রবণযোগ্য। আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্য উত্তম।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখিত ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকো এবং মিথ্যা বলা থেকে দূরে থাকো, আল্লাহর দিকে একনিষ্ঠ হয়ে। তার সঙ্গে কারো শরিক করো না এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শরিক করলো সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়লো, অতঃপর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোনো দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করলো। এটা শ্রবণযোগ্য। কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতিপ্রসূত।’

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। যেমন-

বিজ্ঞাপন

আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিম (আ.) কে কাবার ঠিকানা বলে দিয়েছিলেন। এ থেকে বুঝা যায়, তার আগে কাবা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর প্রতিষ্ঠাতা নন। তিনি এর পুনঃনির্মাতামাত্র।

কাবা গৃহ পুনঃনির্মাণ সম্পন্ন হলে মহান আল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.) কে দু’টি আদেশ দিলেন। নামাজি ও হাজিদের জন্য এ ঘরকে পবিত্র রাখো। আর হজের ঘোষণা দিয়ে দাও। পবিত্রতার দু’টি অর্থ। ময়লা, নোংড়া, নাপাক থেকে আল্লাহর ঘরকে পবিত্র রাখা। আর মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি থেকে পবিত্র রাখা।

হজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘যাতে তারা পৌঁছে তাদের কল্যাণের স্থানে’। এ কল্যাণ যেমনিভাবে পার্থিব কল্যাণ তেমনিভাবে পরকালীন কল্যাণও। কাবা ঘর মানুষের সীমাহীন কল্যাণের স্থান। এ ঘরে মানুষ আসে দুই উদ্দেশ্যে। হজের উদ্দেশ্যে অথবা উমরার উদ্দেশ্যে। আর এ দুই কাজের কোনোটা দ্বারাই মানুষ অভাবী হয় না, দরিদ্র হয় না। বরং হজ ও উমরা মানুষের অভাব, দারিদ্য দূর করে। কারও যদি অভাব থাকে আর কোনোভাবে হজ বা উমরা করার সামর্থ্য থাকে তবে সে তা করুক। এতে অবশ্যই সে অভাবমুক্ত হবে। এটা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষণা। পরকালীন কল্যাণ তো আলোচনার অপেক্ষাই রাখে না। এ ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকাও সওয়াব, এ ঘরের চারপাশে প্রদক্ষিণ করাও সওয়াব, এ ঘরে অবস্থান করাও সওয়াব।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে ইবাদত হিসেবে পশু জবাই করার সময় নির্ধারিত। জিলহজের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। বছরের অন্যকোনো সময় পশু জবাই করাতে কোনো সওয়াব হবে না। কোরবানির পশুর গোশত কোরবানি দাতা নিজেও খেতে পারবে, গরিব-মিসকিনকেও দিতে পারবে।

শিকার হারাম হলেও গৃহপালিত পশু ইহরাম অবস্থায়ও হালাল।

ইরশাদ হয়েছে, ‘এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এ সুসংরক্ষিত গৃহের তওয়াফ করে’। এখানে হজের দু’টি মাসয়ালা বলা হয়েছে। ইহরাম খোলা, মাথা মুণ্ডন করা এবং শরীরে বিভিন্ন পশম পরিষ্কার করা- এগুলো সব করতে হবে কোরবানির পর। আর এরও পরে করতে হবে তাওয়াফে জিয়ারত, যে তাওয়াফ হজের একটি রুকন বা ফরজ।

যারা অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে সে আল্লাহর নামজড়িত বস্তুসমূহের সম্মান করবেই। আল্লাহর নাম জড়িত বস্তুকে সম্মান করা অন্তরে আল্লাহর প্রতি সম্মান থাকার প্রমাণ।