বাবা-মায়ের সেবা করে সন্তানকে দৃষ্টান্ত দেখান

  • মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা সওয়াবের কাজ, ইসলামের নির্দেশ, ছবি: সংগৃহীত

পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা সওয়াবের কাজ, ইসলামের নির্দেশ, ছবি: সংগৃহীত

রমজানের ১৮তম তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ২১তম পারা অর্থাৎ সূরা আনকাবুতের ৪৫ নম্বর আয়াত থেকে সূরা আহজাবের ৩০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত।

আজকের তারাবির গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গ হলো- পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার। এ প্রসঙ্গটি আজকের তারাবিতে থাকছে সূরা লুকমানের ১৪ ও ১৫ নম্বর আয়াতে।

বিজ্ঞাপন

ওই আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আমি মানুষকে তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। পিতামাতা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন বিষয়কে শরিক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে অবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয় তার পথ অনুসরণ করবে।’

পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের প্রসঙ্গ কোরআনে কারিমের আরও কয়েকটি জায়গায় স্থান পেয়েছে। যেমন- ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কাউকে অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে ‘উহ্’ শব্দটিও বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বলো তাদেরকে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো, হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ -সূরা ইসরা: ২৩-২৫

বিজ্ঞাপন

পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার, বৈধ বিষয়ে তাদের আনুগত্য, তাদের সম্মান রক্ষা করা সন্তানের ওপর ফরজ। ইসলাম পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার ও তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের নির্দিষ্ট কোনো দিবসে বিশ্বাসী নয়। সূর্যোদয়ের প্রতিটি দিনে আর সূর্যাস্তের প্রতিটি রাতে, প্রতিটি সেকেন্ডে, আর প্রতিটি মিনিটে, জীবনের প্রতিটি ক্ষণে পিতামাতার প্রতি বিনয়ী, বিনম্র ও অনুগত থাকতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সুস্পষ্ট কুফরির আদেশ না করেন। পিতামাতা কাফের হলে আর তারা কুফরি করতে বললেও তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে অবস্থান করতে হবে। তাদের কুফরির আদেশ মান্য করা যাবে না আবার তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করা যাবে না। হাদিসে আছে, পিতার সন্তুষ্টির মাঝেই প্রভুর সন্তুষ্টি , আর পিতার অসন্তুষ্টির মাঝেই প্রভুর অসন্তুষ্টি। হাদিসে আরও আছে, জান্নাত মায়ের পদতলে।

সন্তানের ওপর পিতামাতার অধিকার ১৪টি। তারা জীবিত থাকলে তাদের অধিকার ৭টি। যথা-
১. তাদের সম্মান রক্ষা করা, ২. তাদের ভালোবাসা, ৩. তাদের আনুগত্য করা, ৪. তাদের সেবা করা, ৫. তাদের প্রয়োজন-অভাব দূর করা, ৬. তাদের আরাম-আয়েশের প্রতি যত্নবান থাকা ও ৭. মাঝে মাঝে তাদের দেখতে যাওয়া।

তারা মারা গেলে তাদের অধিকার ৭টি। যথা-
১. তাদের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করা, ২. তাদের উদ্দেশ্যে নেক আমলের সওয়াব প্রেরণ করা, ৩. তাদের বন্ধুদের ও তাদের নিকটত্মায়ীদের সম্মান করা, ৪. তাদের বন্ধুদের ও তাদের নিকটাত্মীয়দের সহায়তা করা, ৫. তাদের ঋণ ও আমানত পরিশোধ করা, ৬. তাদের শরিয়তসম্মত অসিয়ত কার্যকর করা ও ৭. মাঝে মাঝে তাদের কবর জিয়ারত করা।

এ ১৪টি অধিকার নিজেরা মুখস্ত করা ও মান্য করা দরকার এবং নিজের সন্তানদেরও মুখস্ত করানো দরকার। আপনি আপনার সন্তানের সামনে আপনার পিতামাতার সেবা, ভক্তি করে আপনার সন্তানের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আপনার সন্তান আপনার কর্ম দেখে শিখবে। সেও আপনাকে ভক্তি করবে, সম্মান করবে, সেবা করবে।

মৃত পিতামাতার জন্য নিজে দোয়া না করে, কবর পাকা করা, নীরবতা অবলম্বন করে দাঁড়িয়ে থাকা, পুষ্পস্তবক দেওয়া, নিজের কৃত নেক আমলের সওয়াব প্রেরণ না করে টাকা-পয়সা দিয়ে দোয়া করানো, বিনিময় দিয়ে কোরআন খতম করানো, বিভিন্ন খতম অথবা প্রথাগত কুলখানি, চেহলামে কোনো ফায়দা নেই। এতে কোনো সওয়াব নেই। তবে এগুলোতে নিজের কিছুটা সুনাম-সুখ্যাতি বাড়বে। কিন্তু মৃত পিতামাতার কোনো উপকারে হবে না। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনার করণীয় কোনটা?