ইতিকাফ কি ও কেন?

  • মুফতি জাওয়াদ তাহের, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ, ছবি: সংগৃহীত

রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ, ছবি: সংগৃহীত

রহমত, বরকত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে হাজির হয় মাহে রমজান। রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে- ইতিকাফ।

ইতিকাফ শব্দটি আরবি। এর অর্থ অবস্থান করা। পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করা। কদরের রাত প্রাপ্তির আকাঙ্খায় মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে লাভের জন্য রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফকে সুন্নত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

একজন বান্দা সবকিছু ছেড়ে শুধুমাত্র আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়ে তার দরজায় পরে থাকবে এবং নিরিবিলি পরিবেশে তার ইবাদতে মশগুল থাকবে।

আল্লাহতায়ালা মানুষকে ফেরেশতা চরিত্র ও পশু চরিত্রের এক সমন্বিত রূপে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের চরিত্রে ও তার সৃষ্টিতে ওই সব জৈবিক চাহিদা রয়েছে যেগুলো অন্যান্য পশুদের মাঝে থাকে। সেই সঙ্গে তার সৃষ্টিতে ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। আর মানুষের সফলতা তখনই আসবে যখন তার পশুসুলভ স্বভাবের ওপর ফেরেশতাদের স্বভাব বিজয়ী হবে হবে।

বিজ্ঞাপন

রোজার সাধনার বিশেষ উদ্দেশ্যে ও লক্ষ হলো- রোজার মাধ্যমে মানুষের পশু শক্তিকে আল্লাহর আহ্কামের অনুসরণ এবং আত্মিক ও ঈমানি দাবিসমূহের তাবেদারিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে নেওয়া। এজন্যই রোজা সাধারণ মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই রোজার সময় আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং ঊর্ধ্বজগতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইতিকাফের রীতি বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য রমজানের শেষ দশকে কোনো এলাকার মসজিদ ইতিকাফশূন্য থাকলে পুরো এলাকাবাসী সুন্নতে মোয়াক্কাদা বর্জনের কারণে গোনাহগার হবেন।

কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা দু’জন (ইবরাহিম ও ঈসমাইল আ.) আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও অবস্থানকারীদের জন্য পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে রাখবে।’ –সূরা বাকারা: ১২৫

হাদিস শরিফেও ইতিকাফের গুরুত্ব ও মর্যাদা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন তার এ রীতি মৃত্যু পর্যন্ত অব্যহত ছিল। পরবর্তীতে তার স্ত্রীগণও ইতিকাফ করেছেন। -সহিহ বোখারি

ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। প্রতিটি খন্দক আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও বেশি দূরবর্তী হবে।’ -আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফকারীর ব্যাপারে বলেছেন, সে (ইতিকাফের কারণে এবং মসজিদে বন্দী হয়ে যাওয়ার দরুণ) গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে এবং পুণ্য অর্জনকারীদের মতো পুণ্য তার জন্যও অব্যহত থাকে। -ইবনে মাজাহ

একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতে পারেননি। পরের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। নবী পত্নীরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ইতিকাফ করতেন। বোখারি শরীফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে বছর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল করেন, ওই বছরও তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। এ বিশ দিন ইতিকাফের কারণ ছিলো- তিনি ইঙ্গিতে জানতে পেরেছিলেন যে, অচিরেই তাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে হবে। তাই ইতিকাফের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমলের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। কেননা (মাওলার) মিলনের প্রতিশ্রুতি যখন ঘনিয়ে আসে, হৃদয়ের উত্তাপও তীব্রতর হয়ে উঠে।

উল্লিখিত হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করেছেন।

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রথম বিশ দিনের তুলনায় শেষ দশদিন (ইবাদতে) অধিক পরিশ্রম করতেন। -সহিহ মুসলিম

ইতিকাফের উদ্দশ্য তিনটি
১. আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন করার মাধ্যমে রবের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা।
২. অপ্রয়োজনীয় ও অহেতুক কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চর্চা করা।
৩. লায়লাতুল কদর তালাশ করা।

শবে কদরের জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন। কারণ শেষ দশকে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। -সহিহ বোখারি

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমৃত্যু ইতেকাফ করেছেন। এটা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আল্লাহতায়ালা সবাইকে এই আমলের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।