‘রমজানের শেষ দশকে অধিক ইবাদতে মনোযোগী হোন’



নাজমুল হুদা, মক্কা মোকাররমা থেকে
সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের বৈঠক, ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের বৈঠক, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের স্থানীয় হিসাবমতে রমজানের শেষ দশক শুরু হয়েছে বুধবার (১৩ মে)। মহিমান্বিত রমজানের শেষ দশকের আগমনে সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বিশেষ কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

আলেমদের বোর্ড থেকে রমজানের শেষ দশকে সবাইকে ইবাদত-বন্দেগি পালনের জন্য যথাসম্ভব সবধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য বলা হয়।

বোর্ড থেকে বলা হয়, বছরের অন্যান্য দিনসমূহের মাঝে রমজানের শেষ দশক হলো- মর্যাদাপূর্ণ। এই দশকের রাতগুলো সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ এবং প্রতিদানও অনেক বেশি।
এই দশকে আল্লাহতায়ালা কদরের রাত দান করেছেন। এ রাতকে হাজার রজনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সাব্যস্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘কদরের রজনী হলো- এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ -সূরা কদর: ৩

হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন রমজানের শেষ দশকের আগমন হতো, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব রাতগুলোতে বিনিদ্র থাকতেন, পরিবারের লোকদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতেন এবং (অধিক আমলের জন্য) শক্তভাবে কোমর বেঁধে নিতেন।’ –সহিহ বোখারি: ২০২৪

সৌদি আরবের শীর্ষ আলেমরা আরও বলেন, রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো- আল্লাহর ফরজ বিধানকে আদায় করা। আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তু হতে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর সমীপে নিয়তের সচ্ছতা প্রদর্শন করা।

হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) নবীজির পবিত্র জবানে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে বর্ণনা করেন, আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আমার বান্দার ওপর আমি যা ফরজ করেছি, তার চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদত দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করতে পারবে না।’ –সহিহ বোখারি: ৬৫০২

ফরজ হুকুম আদায়ের পর নৈকট্য লাভের নানা পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তার নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করা। যেমন অধিক পরিমাণে নফল নামাজ আদায় করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, জিকির-আজকার এবং অধিক পরিমাণে সদকা করা।

যেমনটি হজরত আয়েশা (রাযি.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) (রমজানের) শেষ দশকে এতো পরিমাণ ইবাদত করতেন, যেমনটি তিনি অন্য সময় করতেন না।’ -সহিহ মুসলিম: ১১৭৫

বর্ণিত হাদিসটি ইবাদতের নানা প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাই আখেরাতের জন্য নিজেদের আমলের নজরানা পেশ করুন। আমলের মাঝে আত্মনিয়োগ করুন। তার সামনে বিনীত হোন। অধিক পরিমাণে দোয়া করুন। আল্লাহর ইরশাদ, ‘(হে নবী) আর আমার বান্দারা যখন আমার ব্যাপারে আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে- বস্তুত আমি তাদের সন্নিকটেই আছি। প্রার্থনাকারী যখন প্রার্থনা করে, তখন আমি তার প্রার্থনা কবুল করে থাকি। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎ পথে আসতে পারে।’ -সূরা বাকারা: ১৮৬

তারা আরও বলেন, কল্যাণ লাভ ও মসিবত দূরীকরণে দোয়ার মর্যাদাপূর্ণ এক প্রভাব রয়েছে। সাথে নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিস্থিতির সংশোধন এবং অধিক আমলের তওফিক ও রিজিকে বরকত আনয়নে দোয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

রমজানের শেষ দশকের মহান প্রাপ্তি ও অনুসন্ধানের বিষয় হলো- মহিমান্বিত কদরের রাত। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাতে বিশ্বাসের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় দণ্ডায়মান হবে, আল্লাহতায়ালা তার অতীতের সব গোণাহ মাফ করে দেবেন।’

বৈঠকে সবার জন্য শেষ দশকের অবারিত সুযোগকে কাজে লাগানোর তওফিকের দোয়া করা হয়। আর সবাই যেন তওবা ও ইস্তেগফারের সুযোগ লাভে নিজেকে ধন্য করেন- সেই দোয়াও করা হয়।

এদিকে রমজানের শেষ দশক শুরু উপলক্ষে মসজিদে হারামে শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস এবং মসজিদে নববীতে শায়খ আবদুল্লাহ বুআইজান তারাবির আগে উপস্থিত মুসল্লিসহ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। ওই বক্তব্যেও রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগি, তওবা-ইস্তেগফার ও দান-খয়রাত করার বিষয়গুলো উঠে আসে। বিশেষ করে, করোনা পরিস্থিতি থেকে দ্রুত মুক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়ার কথা বলা হয়।

   

ইসরায়েলি খেজুর বয়কট করল মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে ইসরায়েলি পণ্য আমদানি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে ইসরায়েলি পণ্য আমদানি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র রমজান মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসরায়েলি খেজুর বয়কট চলছে। এই অঞ্চলের বৃহৎ দুই মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে এই পণ্য। মালয়েশিয়ার কাস্টমস স্থানীয় বাজারে ইসরায়েলি খেজুর বিক্রির অভিযোগে একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে ইসরায়েলি পণ্য আমদানি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় পর্যন্ত ৩৩ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এহেন নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের মুসলমানরা ইসরায়েলি পণ্য ও কোম্পানি বয়কট করেছে। মালয়েশিয়ায় এই বয়কট কার্যকর হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ফলে। এতে দেশটিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন সব কোম্পানির বিক্রি কমে গেছে। স্টারবাক্সের মালয়েশিয়া শাখা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে নানা কাকুতি-মিনতি করে যাচ্ছে। ম্যাকডোনাল্ডস আবার ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।

সর্বশেষ এই বয়কট পণ্যর তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইসরায়েলি খেজুর। মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চ্যাট গ্রুপে বলা হচ্ছে, ইসরায়েলি খেজুর মুসলিম দেশগুলোতে বেনামে বিক্রি হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সেলাঙ্গরের ক্লাং পোর্টে একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে একজনকে আটকের পর সতর্ক করে মালয়েশিয়ার একজন মন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলি পণ্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যারা ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি করে তাদের কোনো ছাড় নেই।

মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী আরমিজান মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘অভিযানে অফিসাররা জাম্বো মেডজুলের ৭৩ প্যাকেট খেজুর বাজেয়াপ্ত করেছে। এসব খেজুর ইসরায়েল থেকে এসেছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং যারা ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।’

অন্যদিকে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলি খেজুর আমদানি ও বিক্রি বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।

;

রমজানে একাধিক উমরা পালনে নিষেধাজ্ঞা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রমজানের শুরু থেকেই উমরা পালনকারীদের এমন ভিড় দেখা যাচ্ছে কাবা চত্বরে, ছবি : সংগৃহীত

রমজানের শুরু থেকেই উমরা পালনকারীদের এমন ভিড় দেখা যাচ্ছে কাবা চত্বরে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানে উমরা পালন করা হজের সমতুল্য ইবাদত।’ -সুনানে ইবনে মাজা : ২৯৯৩

ইসলামের বিধানে, জীবনে একবার উমরা পালন করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা। তা ছাড়া তা যখনই করা হোক, তার জন্য প্রতিদান ও বরকত রয়েছে। আর রমজানে উমরা পালন করা মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজ থেকে ফিরে এলেন, উম্মে সিনান নামের আনসারি মহিলা সাহাবিকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে তোমাকে হজ পালনে বাধা প্রদান করেছিল? তিনি জবাবে বললেন, আমাদের পানি টানার দুটি উট আছে, একটিতে সওয়ার হয়ে ছেলে ও তার বাবা হজ আদায় করতে গেছেন, আর অপরটি আমাদের জমিতে পানি সিঞ্চনের কাজে আটক আছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, রমজান মাস এলে তুমি উমরা করে নিও। কেননা রমজান মাসে ওমরা করা হজের সমান মর্যাদা রাখে।’ -সহিহ বোখারি : ১৬৯০

তাই রমজান মাসকে উমরা পালনের জন্য আদর্শ মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়। এ মাসে অনেক মুসলমান পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় যাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। তবে এবার রমজান মাসে একাধিকবার উমরা পালনের সুযোগ দিচ্ছে না সৌদি কর্তৃপক্ষ। মূলতঃ অতিরিক্ত চাপ হওয়ার কারণে রমজান মাসে দ্বিতীয়বার উমরা পালনের সুযোগ দেবে না সৌদি আরব।

সৌদি আরবে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পবিত্র রমজানে কাউকে দু’বার উমরা পালনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এ ছাড়া পবিত্র এ মাসে উমরা পালনকারীদের মক্কা-মদিনায় দীর্ঘ সময় না থাকার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।

সৌদির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নতুনদের সুযোগদান এবং ভিড় এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সৌদি সরকার উমরার জন্য ই-ভিসা দুইভাবে দিয়ে থাকে। যারা নুসুক অ্যাপ ব্যবহার করে উমরা পালন করতে যাবেন, তারা মূলতঃ এই নিষেধাজ্ঞার পড়বেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে একই ব্যক্তি যদি দ্বিতীয়বার উমরা পালনের জন্য আবেদন জানায়, তাহলে তার আবেদন গৃহীত হবে না। তবে অ্যাপ থেকে নতুন কেউ আবেদন করতে পারবেন। পবিত্র রমজানে সৌদি আরবসহ বিশ্বের অনেক মুসলমান উমরা পালনের জন্য মসজিদে হারামে ভিড় করেন। এ জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং ভোগান্তি ছাড়া উমরা পালনে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

উমরা ও হজ পরিকল্পনা ঝামেলামুক্ত করতে এবং পর্যটকদের ভ্রমণে সহায়তা দিতে সৌদি আরব ২০২২ সালে নুসুক অ্যাপ চালু করে। এটি সৌদি সরকারের প্রথম অফিশিয়াল প্ল্যানিং, বুকিং এবং এক্সপেরিয়েন্স প্ল্যাটফর্ম, যার লক্ষ্য মক্কা ও মদিনায় উমরা ও হজ পরিকল্পনা করতে সাহায্য এবং একইসঙ্গে অন্যান্য স্থান ভ্রমণে সহায়তা প্রদান।

নুসুক ব্যবহার করে সারা বিশ্বের ভ্রমণকারীরা খুব সহজেই তাদের ভিজিট পরিকল্পনা সাজাতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে ই-ভিসার জন্য আবেদন থেকে শুরু করে ফ্লাইট ও হোটেল বুকিংয়ের সুবিধা।

এজেন্সির মাধ্যমে ভিসাধারীরা সরাসরি এই নিষেধাজ্ঞায় পড়েননি। তবে উমরার তাওয়াফ ছাড়া নফল তাওয়াফ ও মাতাফে নামাজ আদায়ের জন্য ইহরাম পরিধান করে কাবা চত্বরে যেতেও নিরুৎসাহিত করেছেন সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।

;

রোজার প্রথম সপ্তাহে মসজিদে নববিতে ৫২ লাখ মুসল্লি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে মদিনার মসজিদে নববিতে ৫২ লাখের বেশি মুসল্লি উপস্থিত হয়েছে। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগিতে অংশ নিয়েছেন।

মসজিদে নববি তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল অথরিটি বিভাগ রমজান মাসে মুসল্লিদের পরিষেবাবিষয়ক এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮ জন পবিত্র রওজা শরিফে নবী কারিম (সা.)-কে সালাম নিবেদন করেছে। একই সময়ে রওজা শরিফে নামাজ পড়েছেন ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ ও ১০ লাখ সাত হাজার ৬৯৭ জন নারী। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নারী-পুরুষ সব মুসল্লির যাতায়াত সুনিশ্চিত করা হয়।

তাতে আরও বলা হয়, গত সপ্তাহে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ১০ হাজার ৪৮২ জন বিশেষ পরিষেবা পেয়েছেন।

তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ ১০ হাজার ৪১২ জনকে একাধিক ভাষায় যোগাযোগ সেবা দেওয়া হয়। আর মসজিদের লাইব্রেরিতে শিক্ষামূলক পরিষেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন ১২ হাজার ২৭৯ জন এবং মিউজিয়ামে চার হাজার ৫৬৭ জন পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে মসজিদে আসা এক লাখ ৪৯ হাজার ১৪৯ জন দর্শনার্থীকে নানা রকম উপহারসামগ্রী দেওয়া হয় এবং মসজিদের সমন্বিত পরিষেবার মাধ্যমে ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৪১১ জনকে সেবা দেওয়া হয়। তা ছাড়া এক লাখ ৪৪ হাজার জমজম পানির বোতল বিতরণ করা হয় এবং রোজাদারদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৪৩টি ইফতারির খাবার বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ২৮ কোটির বেশি মুসল্লি পবিত্র মসজিদে নববিতে আগমন করে। একই বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগামী হজ মৌসুম শুরুর আগেই দুই কোটির বেশি মুসল্লি ওমরাহ পালন করবে বলে আশা করছে সৌদি আরব।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যায়



মুফতি মো. আবদুল্লাহ
রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজা আদায় করছেন। কিন্তু কি কারণে রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয়, কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কি কারণে ভঙ্গ হয় না, তা অনেকের কাছে অজানা। আজকে এ জাতীয় মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
১. কানে ও নাকে ঔষধ ঢেলে দেওয়া।
২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা।
৩. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে যাওয়া।
৪. কোনো নারীর সঙ্গে আলিঙ্গন বা মাখামাখিতে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া।
৫. এমন কোনো বস্তু গিলে ফেলা যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ, লোহা, কাঁচা গম ইত্যাদি।
৬. লোবান বা উদ কাষ্ঠ ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে বা কণ্ঠনালীর ভেতরে টেনে নেওয়া; বিড়ি, সিগারেট ও হোক্কা পান করারও একই বিধান।
৭. ভুলে পানাহার করার পর এমনটি ধারণা করে যে, আমার রোজা নষ্ট হয়ে গেছে; অতপর পানাহার করা।
৮. রাত বাকী আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পর পানাহার করা।
৯. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা। উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু রোজা কাজা করতে হয়; কাফফারা আবশ্যক হয় না।
১০. ভুলে নয়, জেনে-বুঝে সুস্থ-সবল অবস্থায়, কোনো ওজর-সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলায় পানাহার করলে অথবা স্ত্রী-সঙ্গম করলে, সেই রোজার কাজাও করতে হয় এবং কাফফারাও প্রদান করতে হয়। ‘কাফফারা’ হলো, একটি ক্রীতদাস মুক্তকরণ; অথবা একাধারে ৬০টি রোজা পালন করা। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, সেক্ষেত্রে ৬০জন মিসকিনকে দু’বেলা পেটপুরে খাবার খাওয়াতে হবে। এ যুগে যেহেতু শরিয়তসম্মত ক্রীতদাস বাস্তবে নেই, সে কারণে কাফফারার ক্ষেত্রে শেষোক্ত দু’টির যেকোনো একটি পালন করতে হবে।

যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়
১. রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় অপ্রয়োজনে কোনো বস্তু চিবানো অথবা লবণ ইত্যাদি জিহবায় দিয়ে থু থু ফেলে দেওয়া; টুথপেস্ট বা মাজন বা কয়লা দ্বারা দাঁত মাজা বা পরিস্কার করা।
২. সারাদিন গোসল ফরজ অবস্থায় অপবিত্র কাটিয়ে দেওয়া।
৩. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শিঙ্গা লাগানো এবং দূর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে নিজ শরীর থেকে অন্যের জন্য রক্তদান করা মাকরূহ; কিন্তু তাতে রোজা নষ্ট হয় না।
৪. রোজা অবস্থায় গীবত করা তথা কারও অবর্তমানে তার দোষ বর্ণনা করা রোজার ক্ষেত্রে মাকরূহ বটে; কিন্তু এ গীবত কর্মটি অন্যতম একটি হারাম কাজ ও কবিরা গোনাহ বটে। মাহে রমজানে এর পাপ আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
৫. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ, গালি-গালাজ করা; হোক তা কোনো মানুষের সঙ্গে বা কোনো জীবজন্তুকে বা কোনো প্রাণহীন জড় বস্তুকে; এসব কারণেও রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় না, মাকরূহও হয় না
১. মিসওয়া করা।
২. মাথায় বা মোচ-দাড়িতে তেল ব্যবহার করা।
৩. চোখে ঔষধ বা সুরমা দেওয়া।
৪. আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. গরম ও পিপাসার কারণে গোসল করা।
৬. যেকোনো রকম ইনজেকশন বা টিকা দেওয়া।
৭. ভুলবশত পানাহার করা।
৮. অনিচ্ছাবশত গলায় ধোঁয়া বা ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
৯. কানে পানি দেওয়া (২/১ ফোটা) অথবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করা।
১০. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া।
১১. শোয়া অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে যাওয়া।
১২. দাঁত হতে রক্ত বের হওয়া এবং তা গলা অতিক্রম না করা।
১৩. ঘুমের মধ্যে বা সহবাসের কারণে রাতে গোসল ফরজ হয়েছিল, অথচ সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করা হয়নি; আর এমতাবস্থায় রোজার নিয়ত করে নেওয়া হয়েছে; তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি নেই।

লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গবেষণা বিভাগ।

;