ঈদের রাত, দোয়া কবুলের রাত
প্রত্যেক জাতিরই একটি দিন নির্ধারিত থাকে, যে দিনটি তারা ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করে। সে দিনটিতে সর্বোচ্চ আনন্দ প্রকাশ করে। উত্তম পোশাক পরিধান করে, ভালো খাদ্য গ্রহণ করে নিজেদের সন্তুটি প্রকাশ করে। মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত আনন্দের দিন দু’টি। এক. ঈদুল ফিতর, আরেকটি ঈদুল আজহা।
বাংলাদেশে সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। এবার বিশ্বের মুসলমানদের ভিন্ন পরিস্থিতিতে, ভিন্ন আবহে ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে। এবার খোলা ময়দানে কিংবা ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না। নিষেধ করা হয়েছে কোলাকুলি করা থেকেও। ঈদুল ফিতর উদযাপন শুরু হয় হিজরি দ্বিতীয় সাল থেকে। এর পর থেকে কোনো কোনো দেশে মহামারি কিংবা যুদ্ধাবস্থার কারণে সীমিত আকারে ঈদ উদযাপন করা হলেও এবারই বোধহয় প্রথম তাবৎ বিশ্ববাসী রূদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ঈদ পালন করত যাচ্ছেন।
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আমোদ, আহলাদ, উৎসব, বিনোদন। আর মনের শত অভিব্যক্তি আশা-আকাঙ্খার আত্মপ্রকাশ। এক কথায় ঈদ মানে এক বৈচিত্র্যময় উৎসব আর বিনোদন। যার আত্মপ্রকাশ শুধু তাতেই পরিলক্ষিত হয়। যা কল্পনার ঊর্ধ্বে, ধারণাতীত। এবার এসবের কিছুই নেই, আর জীবনও থেমে থাকে না। এরই মধ্যে ঈদের দিন মসজিদে যেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একই কাতারে দাঁড়িয়ে প্রভুর করুণা কামনায় সেজদায় লুটাবে মুসলমানরা। আল্লাহর রহমত কামনা করবে সমস্বরে। মূলত ঈদ শুধু আনন্দ উৎসব নয়, এটা আল্লাহতায়ার জন্য নিবেদিত এক ইবাদতও বটে।
নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর করোনাকে সঙ্গে নিয়ে রমজান পালন করেছি শুধু আল্লাহর হুকুম রক্ষার জন্য। রমজানের প্রতিনিয়ত আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করেছি। আসন্ন ঈদে ও ঈদের রাতেও আমরা আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করি। আমাদের চাওয়া ঈদের আনন্দ দাওগো প্রভু করোনা মুক্তি দিয়ে।
আমরা জানি, ঈদের রাত দোয়া কবুলের রাত। এ রাতেও আমরা প্রাণভরে আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করবো। রমজান মাস শেষে ঈদের আগের রাতে দয়াময়ের পক্ষ থেকে রোজাদারের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে বেশুমার ফজিলত। হজরত মুয়াজ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত জেগে থাকবে, তার ওপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। রাতগুলো হলো- ১৫ শাবানের রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, ৮ জিলহজ রাত, ৯ জিলহজের রাত ও ঈদুল আজহার রাত।
হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে দুই ঈদের রাতে সওয়াবের নিয়তে ইবাদত করবে, তার অন্তর সেদিন মরবে না, যেদিন অন্যদের অন্তর মরে যাবে।’ -ইবনে মাজাহ
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে আল্লাহতায়ালা চার রাতে সব ধরনের কল্যাণের দরজা খুলে দেন। সেগুলো হলো- ঈদুল আজহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও ১৫ শাবানের রাত (এ রাতে সব প্রাণীর জীবন ও জীবিকা নির্ধারণ করা হয়) ও আরাফার রাত। আর তা এভাবে ফজরের আজান পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।- তারিখে বাগদাদ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি দুই ঈদের রাত জেগে থেকে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দিতেন। হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রা.) আদি বিন আরতকে বললেন, চারটি রাতকে খুবই গুরুত্ব দেবে। সেগুলো হলো- ১ রজবের রাত, শবেবরাতের রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও ঈদুল আজহার রাত। আল্লাহতায়লা এসব রাতে অশেষ রহমত বর্ষণ করেন।
ঈদের রাতটি মুমিনদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত, এ রাতের ইবাদত ও জেগে থাকার ফলে মুমিনের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। তাই এই রাতে অনর্থক কাজে লিপ্ত থাকা, বাজারে বা মার্কেটে ঘোরাফেরা করে সময় নষ্ট করা কোনো মুমিনের কাজ নয়। এ রাতে নিজের গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করা, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য দোয়া করা, আল্লাহর অনুগত বান্দা হওয়ার জন্য দোয়া করা, সুন্নাহ মোতাবেক জীবন চলার জন্য দোয়া করা।
ঈদের রাতে অন্যের কাছে অপদস্থ না হওয়ার দোয়ার পাশাপাশি বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য, বিপদ ও বালা-মসিবত থেকে বেঁচে থাকার জন্য, নিজের হেদায়েতের জন্য, নিজের পরিবারবর্গের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, সন্তান-সন্ততির জন্য দোয়া, স্বামী-স্ত্রীর জন্য, সন্তানাদি যেন প্রকৃত মানুষ হয়- সেজন্য, আত্মীয়-স্বজনদের জন্য, রোগমুক্তির জন্য, হালাল রিজিক সহজ হওয়ার জন্য, হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য, সহজে ঋণ পরিশোধ হওয়ার জন্য, অন্যের ওপর বোঝাস্বরূপ না হওয়ার জন্য, লোক দেখানো ইবাদত থেকে মুক্ত থাকার জন্য, বদঅভ্যাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য, জান্নাতুল ফেরদৌসের জন্য, জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকার জন্য, কবরের আজাব থেকে মুক্তির জন্য, নবীজির শাফায়াত নসিব হওয়ার জন্য, সব ধরনের ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য দোয়া ও চলমান করোনো মহামারি থেকে বিশ্ববাসীর নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা।