আনন্দের কান্নায় মসজিদে নববীতে নামাজ শুরু
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রোববার (৩১ মে) থেকে সর্বসাধারণের জন্য আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত মদিনার মসজিদে নববী।
আর কোন বাধা নেই, পথ আটকে কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করবে না। তাই সবাই সেই চিরচেনা পথ ধরে এসেছেন। সবার মাঝে প্রশান্তির চিহ্ন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। হতাশা ও উদ্বেগ কেটে গেছে। উন্মুক্ত হয়েছে মসজিদে নববীর দ্বার। তাই উপস্থিত মুসল্লিদের হৃদয়াকাশে ছিলো প্রাপ্তির অনাবিল সুখ, সবার মুখ উজ্জ্বল। মনটা স্নিগ্ধতায় পূর্ণ, চোখেমুখে অপার্থিব এক তৃপ্তির ছাপ।
রোববার ফজরের নামাজের মধ্য দিয়ে ১৮ মার্চ বন্ধ হওয়া মসজিদে নববীর দরোজা খুলে দেওয়া হয়েছে। এই আড়াই মাসেরও অধিক সময় বন্ধ ছিলো মসজিদে নববীতে সর্বসাধারণের নামাজ আদায়।
আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেমতে মদিনাবাসীরা তীব্র আবেগ-উচ্ছ্বাস সামলে স্বাভাবিকভাবেই নামাজে অংশ নিয়েছেন। যথাযথ স্বাস্থবিধি মেনে সবাই মাস্ক পরে এসেছেন, অনেকের হাতে ছিলো গ্লাভস। কিন্তু নামাজ শেষে ব্যক্তিগত মোনাজাতে প্রকাশ পেতে থাকে আনন্দ, আবেগ আর খুশির পরিমাণ। চতুর্দিক থেকে ভেসে আসতে থাকে কান্নার আওয়াজ। এ অশ্রু আনন্দের, পরম তৃপ্তির। আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের।
জায়নামাজ হাতে নামাজে আসা মুসল্লিদের মাঝে বইছে খুশির জোয়ার। গত হয়ে যাওয়া ঈদের আমেজ রোববারের ফজরের ওয়াক্তে এসেছে মদিনায়। মসজিদে নববী খুলে দেওয়ায় যেকোনো মুমিন আনন্দে উদ্বেলিত হবে, এটাই স্বাভাবিক! হয়েছেও তাই। এই আনন্দ চোখের পানি ঝরিয়েছে অনেকের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে দরবারে ইলাহিতে হাতু দু’টো উঁচু করে দোয়া করেছেন আল্লাহপ্রেমিকরা। আহ্! কতোদিন হলো আসা হয়নি। সবাই বিনয়াবত কণ্ঠে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। প্রিয়জনের সঙ্গে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর সাক্ষাতে যেমন অনুভূতি হয়, রোববার ফজরের নামাজে হাজির হওয়া তার চেয়েও বেশি আনন্দের, বেশি প্রাপ্তির। এই আনন্দের মাঝেও উপস্থিত মুসল্লিদের একান্ত চাওয়া, করোনার মহামারি থেকে পৃথিবী মুক্তি পাক, সবাই আবার নিজ কর্মে কর্মে ফিরুক।
রোববার ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন বয়োজ্যেষ্ঠ ইমাম শায়খ হুজাইফি। নামাজে একেবারে শান্ত গলায় ভাবগম্ভীর কোরআন তেলাওয়াত করলেন। হৃদয়ছোঁয়া সে তেলাওয়াত সবার হৃদয়কে স্পর্শ করে গেছে। আহ্! এই কণ্ঠ কতোদিন শোনা হয় না।
নামাজ শেষে তিনি সবাইকে স্বাগত জানান। মসজিদে নববীতে সেই জনসমাগম ফিরে আসায় তিনি আল্লাহতায়ালার শোকরিয়া আদায় করেন।
শায়খ হুজাইফি আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা আমাদের নানাভাবে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ করেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রতি বিভিন্নভাবে দয়া প্রদর্শন করেন। আল্লাহতায়ালা আর তার বান্দার মাঝে সম্পর্ক হলো দয়ার। তিনি নিজের জন্য রহমতকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। পাশাপাশি সবাইকে তওবা ও ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা হওয়ার আহবান জানান।
মসজিদ মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও, ধারণ ক্ষমতার ৪০ শতাংশ মুসল্লি উপস্থিত হতে পারবেন মসজিদে নববীতে। অবশ্য মসজিদ খোলার আগে সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করেছে দেশটির সরকার। সংক্রমণ মোকাবিলায় মসজিদে নববী থেকে সব ধরনের কার্পেট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রবেশ পথে বিশেষ জীবাণুনাশক গেইট বসানো হয়েছে। ছোট বাচ্চাদের মসজিদে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মুসল্লিরা এখন থেকে মার্বেলের মেঝেতে নামাজ আদায় করবেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাতারে দাঁড়াতে হবে।
রোববার ফজরের আজানে মদিনাসহ সৌদি আরবের প্রায় ৯০ হাজার মসজিদের মুয়াজ্জিনদের কান্নাজড়িত ‘হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ’র মধুর আহ্বান শোনে ঘুম ভেঙেছে দেশটির মানুষের। এর মধ্য দিয়ে ‘আস সালাতু ফি বুয়ুতিকুম’ বলা বন্ধ হলো।
উল্লেখ্য, মদিনাসহ সৌদি আরবের প্রায় মসজিদ খুলে দেওয়া হলেও মক্কার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে, ধারণা করা হচ্ছে, অচিরেই মক্কার মসজিদে হারামসহ এ এলাকার মসজিদগুলোও খুলে দেওয়া হবে।