হাদিস সংকলনের ইতিহাস



তানভীর মাহতাব আবীর, অতিথি লেখক, ইসলাম
হাদিস সংকলনের ইতিহাস, ছবি: সংগৃহীত

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআন শরীফে থাকা ইসলামি বিধি-বিধানের বিশ্লেষণ এবং তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাদিসে।

হাদিসের পরিচয়
আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাইল আলাহিস সালামের মাধ্যমে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যে অহি নাজিল করেন সেগুলোই হাদিসের মূল উৎস।

অহি প্রধানত দুই প্রকার। একটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ অহি। এই অহি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর সরাসরি নাজিল হতো। অন্যটি হচ্ছে পরোক্ষ অহি। এই অহি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর প্রচ্ছন্নভাবে নাজিল হতো। নবী করিম (সা.) নিজের ভাষা, কথা, কাজ এবং সম্মতির মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন। এগুলোই হাদিস নামে পরিচিত।

তবে মুহাদ্দিসগণ (হাদিস চর্চা করেন এবং বহুসংখ্যক হাদিসের সনদ ও মূল আরবি বক্তব্য (মতন) সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তি) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলি সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদিসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নবী করিম (সা.)-এর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং তার প্রতিটি কাজ ও আচরণ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করতেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদেরকে ইসলামের আদর্শ ও এর যাবতীয় নির্দেশ যেমন মেনে চলার হুকুম দিতেন, তেমনি তা স্মরণ রাখতে এবং অনাগত মানব জাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি সাহাবিদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘আমার পরে লোকেরা তোমাদের নিকট হাদিস শুনতে চাইবে। তারা এই উদ্দেশ্যে তোমাদের নিকট এলে তাদের প্রতি সদয় হয়ো এবং তাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করো।’ -মুসনাদ আহমদ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সাহাবিরা হাদিস সংরক্ষণে উদ্যোগী হন। প্রধানত তিনটি শক্তিশালী উপায়ে নবী করিম (সা.)- এর হাদিস সংরক্ষিত হয়। ১. উম্মতের নিয়মিত আমল, ২. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর লিখিত ফরমান, সাহাবিদের কাছে লিখিত আকারে সংরক্ষিত হাদিস ও পুস্তিকা এবং ৩. হাদিস মুখস্থ করে স্মৃতির ভাণ্ডারে সঞ্চিত রাখা, তারঃপর বর্ণনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে লোক পরম্পরায় তার প্রচার।

সেকালে আরবদের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। কোনো কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য একবার শ্রবণই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। স্মরণশক্তির সাহায্যে আরববাসীরা হাজার বছর ধরে তাদের জাতীয় ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে আসছিল। হাদিস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপায় হিসেবে এই মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নবী করিম (সা.) যখনই কোনো কথা বলতেন, উপস্থিত সাহাবিরা পূর্ণ আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে তা শুনতেন, অতঃপর মুখস্থ করে নিতেন। প্রায় এক লাখ সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী ও কাজের বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন এবং স্মৃতিপটে ধরে রেখেছেন।

এ ছাড়া উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল, পারম্পারিক পর্যালোচনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমেও হাদিস সংরক্ষিত হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যে নির্দেশই দিতেন, সাহাবিরা সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যে পরিণত করতেন। তারা মসজিদ অথবা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হতেন এবং হাদিস আলোচনা করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘আমার নবী করিম (সা.)-এর নিকট হাদিস শুনতাম। তিনি যখন মজলিস থেকে উঠে চলে যেতেন, আমরা শ্রুত হাদিসগুলো পরস্পরে পুণরাবৃত্তি ও পর্যালোচনা করতাম। আমাদের এক একজন করে সবাই হাদিসগুলো মুখস্থ শুনিয়ে দিতেন। এ ধরনের প্রায় বৈঠকেই অন্তত ষাট-সত্তরজন লোক উপস্থিত থাকতেন। বৈঠক থেকে আমরা যখন উঠে যেতাম তখন আমাদের প্রত্যেকেরই সবকিছু মুখস্থ হয়ে যেত।’ –আল মাজমাউয যাওয়াইদ: ১/১৬১

প্রাথমিক পর্যায়ে কোরআনে কারিম ব্যাতিত সাধারণতঃ অন্য কিছু লিখে রাখা হতো না। পরবর্তীকালে হাদিসের বিরাট সম্পদ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। ‘হাদিস নবী করিম (সা.)-এর জীবদ্দশায় লিপিবিদ্ধ হয়নি, বরং তার ইন্তেকালের শতাব্দীকাল পর লিপিবদ্ধ হয়েছে’ বলে যে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে তার আদৌ কোনো ভিত্তি নেই। অবশ্য একথা ঠিক যে, কোরআনের সঙ্গে হাদিস মিশ্রিত হয়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে- কেবল এই আশঙ্কায় ইসলামি দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘আমরা কোনো কথাই লিখো না। কোরআন ব্যাতিত আমার নিকট থেকে কেউ অন্যকিছু লিখে থাকলে তা যেন মুছে ফেলে।’ –সহিহ মুসলিম

কিন্তু যেখানে এরূপ বিভ্রান্তির আশঙ্কা ছিলো না নবী করিম (সা.) সেসব ক্ষেত্রে হাদিস লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি হাদিস বর্ণনা করতে চাই। তাই যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তিনি বললেন, আমার হাদিস কণ্ঠস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে লিখেও রাখতে পারো।’ –দারামি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) আরও বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম। কতিপয় সাহাবি আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন মানুষ, কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন। এ কথা বলার পর আমি হাদিস লেখা থেকে বিরত থাকলাম, অতঃপর তা হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তুমি লিখে রাখো। যেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এই মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না।’ –আবু দাউদ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক আনসারি সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মনে রাখতে পারি না। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও।’ তারপর তিনি হাতের ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।’ -তিরমিজি, হাদিসটি যইফ

হজরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) হাদিস লিখে রাখতেন। চামড়ার থলের মধ্যে রক্ষিত সংকলনটি তার সঙ্গেই থাকত। তিনি বলতেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে এ সহিফা ও কোরআন মজিদ ব্যাতিত আর কিছু লিখিনি। সংকলনটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) লিখিয়েছিলেন। এতে জাকাত, রক্তপাত (দিয়াত), বন্দী মুক্তি, মদিনার হেরেম এবং আরও অনেক বিষয় সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ ছিল। -বোখারি, ফাতহুল বারি

এ সব ঘটনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, নবী করিম (সা.)-এর সময় থেকেই হাদিস লেখার কাজ শুরু হয়। সাহাবিরা যেভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে হাদিসের জ্ঞান লাভ করেন, তেমনিভাবে হাজার হাজার তাবিঈ সাহাবিদের কাছে হাদিসের শিক্ষা লাভ করেন।

হিজরি দ্বিতীয় শতকের শুরু থকে কনিষ্ঠ তাবিঈ ও তাবিঈ-তাবিঈনের এক বিরাট দল সাহাবা ও প্রবীণ তাবিঈনের বর্ণিত ও লিখিত হাদিসগুলো ব্যাপকভাবে একত্র করতে থাকেন। এ সময় খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রাহ.) দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকদের নিকট হাদিস সংগ্রহ করার জন্য রাজকীয় ফরমান প্রেরণ করেন। ফলে সরকারি উদ্যোগ সংগৃহীত হাদিসের বিভিন্ন সংকলন সিরিয়ার রাজধানী দামেশক পৌঁছতে থাকে। খলিফা সেগুলোর একাধিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বত্র পাঠিয়ে দেন।

হিজরি দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত হাদিসের চর্চা আরও ব্যাপকতর হয়। এ সময়কালে বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজার মতো সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ছয়খানি হাদিস গ্রন্থ (সিহাহ সিত্তাহ) সংকলিত হয়। এ যুগেই ইমাম শাফিঈ (রহ.) তার কিতাবুল উম্ম ও ইমাম আহমদ (রহ.) তার আল মুসনাদ গ্রন্থ সংকলন করেন।

হিজরির চতুর্থ শতকে মুসতাদরাক হাকিম, সুনানে দারে কুতনি, সহিহ ইবনে হিব্বান, সহিহ ইবন খুযায়মা, তাবারানির আল-মুজাম, মুসান্নাফুত তাহাবি এবং আরও কতিপয় হাদিস গ্রন্থ সংকলিত হয়।

ইমাম বায়হাকির সুনানে কুবরা ৫ম হিজরি শতকে সংকলিত হয়। চতুর্থ শতকের পর থেকে এ পর্যন্ত সংকলিত হাদিসের মৌলিক গ্রন্থগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সংকলন ও হাদিসের ভাষ্য গ্রন্থ এবং এই শাস্ত্রের শাখা-প্রশাখার ওপর ব্যাপক গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। বর্তমানকাল পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে।

   

কানাডা বিনির্মাণে মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কানাডা বিনির্মাণে মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে

কানাডা বিনির্মাণে মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে

  • Font increase
  • Font Decrease

আজকের পরিচিত কানাডা বিনির্মাণে মুসলিম সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ১৮৭১ সালের প্রথম সরকারি আদমশুমারিতে এখানে ১০ জনের মতো মুসলিম ছিল। বর্তমানে কানাডার জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ মুসলিম। এখানে প্রতি মহাদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। কানাডার মুসলিমরা প্রতিদিন কলা ও একাডেমির নানা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৈচিত্র্য কানাডাকে আরো প্রাণবন্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে অবদান রাখছে।

কানাডায় অক্টোবর মাসজুড়ে ইসলামিক হিস্ট্রি মান্থ (আইএইচএম) উদযাপন উপলক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে কানাডার বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্ত বিষয়ক মন্ত্রী কামাল খেরা এসব কথা বলেছেন।

১৭ বছর ধরে মুসলিমদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি স্থানীয়দের মধ্যে তুলে ধরতে ইসলামিক হিস্ট্রি মান্থ উদযাপিত হয়। তবে এবারই প্রথম ইসলামোফোবিয়া প্রতিরোধ বিষয়ক দেশটির বিশেষ প্রতিনিধি আমিরা আল-গাওয়াবি ঐতিহ্যের মাসটি উদযাপন করছেন। এবার শিল্পকলা ও বিজ্ঞানে মুসলিম নারীদের অবদান উদযাপন করা হবে।

এক বিবৃতিতে আইএইচএম জানিয়েছে, ‘ইসলামিক হিস্ট্রি মান্থে কানাডা বিশ্বাস করে, শিক্ষা ও ইতিবাচক গল্প প্রচারের মাধ্যমে কানাডার সবাই সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। ২০০৭ সালে অটোয়া-ভ্যানিয়ারের এমপি মৌরিল বেলেঙ্গার মাসটি উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পর থেকে কানাডার সব প্রদেশ, পৌরসভা, জনগোষ্ঠী ও সংস্থাগুলো প্রতিবছর অসংখ্য ইভেন্ট আয়োজন করে থাকে। তারা একে অপরের কাছ থেকে শেখা ও ভালো বিষয়গুলো গ্রহণের জন্য সমবেত হয়।’

আইএইচএম আরো জানায়, ‘এ বছর যুগ যুগ ধরে শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের উন্নয়নে মুসলিম নারীদের ঐতিহাসিক অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হবে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কানাডার প্রথম মসজিদ আর-রশিদের প্রতিষ্ঠাতা হিলবি হামদুন, ইসলামিক হিস্ট্রি মান্থের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদা ভ্যালিয়ানতি, শিক্ষাবিদ ও আইনজীবী খাদিজা হাফাজি ও কানাডিয়ান কাউন্সিল অব মুসলিম উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা লিলা ফালমান।’

কানাডার বিভিন্ন রাজ্যে ইসলামের ইতিহাসের মাস উদযাপিত হচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামিক সোসাইটি অব কিংস্টন ও গ্লোবাল পারসপেকটিভসের আয়োজনে মুসলিম নারী শিল্পীদের গল্প আলোচনা করা হয়েছে।

ইসলামিক সেন্টার অব কিংস্টনে এ মাসের ৮ তারিখ সিরাত সম্মেলন হবে এবং ২২ তারিখ স্থানীয় মুসলিম নারী শিল্পী ও বিজ্ঞানীদের অবদান উদযাপিত হবে।

১৭ তারিখ কুইনস ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ‘আলোকিত ইসলাম ও সংস্কার : মুসলিম বিশ্বে সংস্কারের উদ্ভব এবং আধুনিক অনুসন্ধান’শীর্ষক আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হবে।

;

চোখের গোনাহ থেকে সাবধান



এম কাউছার হামিদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
বৈধ জিনিসের প্রতি নজর করা কাম্য

বৈধ জিনিসের প্রতি নজর করা কাম্য

  • Font increase
  • Font Decrease

দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে অন্তরের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। দৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ প্রথমে কোনো কিছু আত্মস্থ করে। বুঝে নেয় অথবা অনুমান করে। কোনো বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ হওয়ার পর তাকে নিয়ে ভাবা হয়। ভালো কিছুর প্রতি নজর করলে অন্তরে একটি ভালো রেখা অঙ্কিত হয়, মন ভালো থাকে।

আর খারাপ কিছুর প্রতি দৃষ্টি পড়লে মন খারাপ হয়। তাই বৈধ জিনিসের প্রতি নজর করা কাম্য। কারণ দৃষ্টিশক্তি আল্লাহর দান। তার দেওয়া বস্তু তার নির্দেশিত পন্থায় ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় ইহকালীন ও পরকালীন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

ইসলামের সীমারেখা
দৃষ্টিপাত করার ক্ষেত্রে কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি, নিদর্শন ও নেয়ামতের প্রতি দৃষ্টিপাত এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার দ্বারা স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এই চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে অশেষ সওয়াব রয়েছে। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মাঝে এবং রাত-দিনের বিবর্তনের মাঝে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন। যারা দাঁড়িয়ে ও বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান জমিনের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ফিকির করে, আর বলে; হে আমাদের প্রভু! আপনি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৯১

পক্ষান্তরে নাচগান, সিনেমা কিংবা অশ্লীল দৃশ্য দেখা ইসলামে নিষিদ্ধ। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষু অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক বিশুদ্ধতা। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সে বিষয়ে অবগত যা তারা করে।’ -সুরা নুর : ৩০

পরবর্তী আয়াতে মুমিন নারীদের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষু অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ -সুরা নুর : ৩১

অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টির ক্ষতি
চোখ আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নেয়ামত। নিষিদ্ধ জিনিস দেখার দ্বারা এ নেয়ামতের অবহেলা করা হয়, চোখের জ্যোতি কমে যায়। তাই ইসলামে এসব জিনিস দেখা হারাম করা হয়েছে। হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি হচ্ছে- শয়তানের বিষাক্ত তীরসমূহ থেকে একটি তীর।’ -মুসনাদে আশ শিহাব : ১/১৯৫

এই তীরে বিদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচতে হলে নজর হেফাজত করতে হবে। অন্যথায় অগণিত নেকআমল করা সত্ত্বেও আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘নজর এমন একটি তীর, যা মানুষের অন্তরে বিষের উদ্রেক করে।’ -ইবনে কাসির : ৩/১৭৬

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা দৃষ্টিকে নত করো, নিয়ন্ত্রণ করো এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করো।’ -তাবারানি : ৮০১৮

কেবল পরকালের জন্যে নয়। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও পবিত্রতা রক্ষা না করা হলে দুনিয়ায়ও খারাপ পরিণতি দেখা দিতে পারে। এর অন্যতম হলো- স্বামীর অন্তর অন্য নারীর দিকে আকৃষ্ট হওয়া এবং স্ত্রীর মন সমর্পিত হওয়া অন্য পুরুষের দিকে। এর পরিণতি হচ্ছে- পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে আশু বিপর্যয় ও ভাঙ্গন।

দৃষ্টিশক্তির বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তিনি দৃষ্টিসমূহের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে এবং (তারই কারণে) অন্তরে যে কামনা-বাসনা গোপনে জাগ্রত হয় তা ভালোভাবেই জানেন।’ -সুরা মুমিন : ১৯

আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বায়যাবি (রহ.) লিখেছেন, ‘বিশ্বাসঘাতক দৃষ্টি হলো- গায়য়ে মাহরাম নারীদের প্রতি বারবার দৃষ্টি নিক্ষেপ, তার প্রতি চুরি করে তাকানো বা চোরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা অথবা দৃষ্টির অন্যকোনো বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণ।’ -তাফসিরে বায়যাবি : ২/২৬৫

অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টিপাতের ব্যাপারে অবহেলা
বর্তমানে চোখের হেফাজত না করা একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখের গোনাহকে গোনাহ মনে হয় না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই চোখের জিনা (ব্যভিচার) হচ্ছে- (অন্যায়) দৃষ্টিপাত করা।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৬৪৭

ফেসবুক, ইউটিউব ও অনলাইন-অফলাইনে সর্বত্রই নারীর ব্যাপক উপস্থিতি। অবাধে বিজ্ঞাপনে নারীদের ব্যবহার করা হয়। ইসলামে স্পষ্ট হারাম জিনিসকে কতটা হালকা করে দেখা হচ্ছে। পর্নোগ্রাফিকে খারাপ ও হারাম মনে করলেও আমরা গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত হারাম মনে করি না। এ জন্যই আমরা নামাজে ও অন্য ইবাদতের স্বাদ পাই না। ইবাদত করাটা বোঝা মনে হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর এসবের বিষয়ে হাশরের মাঠে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ৩৬

ইসলামি স্কলাররা বলেন, মহান রবের সান্নিধ্য লাভ করতে হলে এবং ইবাদতের স্বাদ পেতে হলে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চোখের হেফাজত করতে হবে।

;

মিসরে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মিসরে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী

মিসরে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী

  • Font increase
  • Font Decrease

মিসরে পবিত্র কোরআনের পুরনো একটি পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে হিজরি প্রথম শতাব্দীতে (সপ্তম খ্রিস্টাব্দ) লেখা বিশ্বের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

মিসরের ফুসতাত নগরীতে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যান্ড আর্কাইভস বিভাগ কোরআন মাজিদের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই আয়োজন করে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশটির সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ড. নেভিন আল-কিলানির সভাপতিত্বে অধ্যাপক ড. উসামা তালাতের তত্ত্বাবধানে ‘ঐতিহ্য সংরক্ষণে নতুন প্রজন্ম’ শীর্ষক এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।

পবিত্র কোরআনের প্রাচীন এই পাণ্ডুলিপিতে ৩২টি পৃষ্ঠা রয়েছে, যা চামড়ার ওপর লিখিত। প্রথমে তা মিসরের প্রাচীন মসজিদ জামে আমর ইবনুল আস (রা.)-এ সংরক্ষিত ছিল। এরপর ১৯১১ সালে পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করে ফুসতাতে জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করা হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রচলিত হিজাজি লিপিতে এই পাণ্ডুলিপিটি লেখা।

বিভিন্ন শিলালিপি, সমাধি ও প্যাপিরাসে এ ধরনের লিপিশৈলীর দেখা মেলে, যা থেকে এর তারিখ অনুমান করা হয়।

ন্যাশনাল লাইব্রেরির পরিচালক ড. উসামা তালাত বলেন, ‘আজ আমরা হিজাজি মাসহাফ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম উদযাপন করছি। এটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ মাসহাফগুলোর একটি। হিজরি প্রথম শতাব্দী তথা সপ্তম খ্রিস্টাব্দে তা লেখা হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক ও শৈল্পিক গবেষণার ভিত্তিতে এ কথা বলা যায়, এটি ওই শতাব্দীর প্রথম ধাপে লেখা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সব যুগে লিখিতভাবে কোরআন সংরক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।’

এরপর তিনি পাণ্ডুলিপিবিষয়ক নানা তথ্য ভিডিও চিত্রের সাহায্যে তুলে ধরেন।

মিসরের পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয়ের পুরাকীর্তি পরিদর্শক মালাক নাসহি বলেন, পবিত্র কোরআনের এই কপিটি ‘মাসহাফ আল-হিজাজি’ নামে পরিচিত। কারণ তা খত্তে হিজাজি বা হিজাজি লিপিতে লেখা হয়েছে।

এই লিপিটি কুফি লিপির চেয়ে অনেক পুরনো। হিজরি প্রথম শতাব্দীতে এই লিপির প্রচলন ছিল। তাই এটি ইসলামি সভ্যতার প্রাচীনতম লিপিশৈলীর অন্যতম। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যান্ড আর্কাইভসে প্রাচীন নথিপত্র, পাণ্ডুলিপিসহ পবিত্র কোরআনের প্রাচীন কপি সংরক্ষিত রয়েছে। এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ শিল্পীরা পাণ্ডুলিপি পুনরুদ্ধারে কাজ করেন।

মালাক নাসহি আরো বলেন, পবিত্র কোরআনের প্রাচীন এই পাণ্ডুলিপি নবী কারিম (সা.)-এর সাহাবিদের যুগে লেখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের দুর্লভ পাণ্ডুলিপিগুলোর অন্যতম। চামড়ার ওপর লেখা এই পাণ্ডুলিপিতে ৩২টি পৃষ্ঠা রয়েছে। এটি লোহার কালি দিয়ে পার্চমেন্টে লেখা হয়েছিল। অতঃপর তা খুবই সুন্দরভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

;

হজযাত্রীদের নতুন রুট, ৩৫ মিনিটে জেদ্দা-মক্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কা-জেদ্দা মহাসড়ক

মক্কা-জেদ্দা মহাসড়ক

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বহুবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর অন্যতম হলো- জেদ্দা-মক্কা সড়ককে মহাসড়কে রূপান্তর করা। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসড়কে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। এটি জেদ্দা বিমানবন্দরকে মসজিদে হারামের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

আট লেনের এই যুগান্তকারী অবকাঠামো বাস্তবায়িত হলে, হজযাত্রীদের ভ্রমণে সময় বাঁচবে এবং ভ্রমণ আরো নিরাপদ হবে।

শুধু এই সড়ক নির্মাণ নয়, সৌদি আরব হজযাত্রী, ওমরাহ পালনকারী এবং ভ্রমণকারীদের জন্য জন্য আরও নানাবিধ সুবিধা দিতে প্রস্তুত।

জেদ্দা-মক্কা সরাসরি সড়কটি জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগত ওমরাহ যাত্রীদের আরাম, নিরাপত্তা ও সময় কম ব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ভ্রমণের সময়কে কমিয়ে মাত্র ৩৫ মিনিটে নিয়ে আসবে।

সৌদি ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য ওমরাহ যাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা। এটি অর্জনের জন্য সৌদি আরব মক্কার মসজিদে হারামের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। ওমরাহ পরিষেবা প্রদানকারীদের লাইসেন্স সম্প্রসারিত করেছে, ওমরাহ ভিসার বরাদ্দ ও সময় বাড়িয়েছে এবং পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ওমরাহতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রবিধান প্রণয়ন করেছে। এছাড়া সৌদি নাগরিকরা এখন অন্যদেশে তাদের পরিচিতদের ওমরাহ পালনের আমন্ত্রণ জানাতে পারছে।

জেদ্দা-মক্কা সরাসরি সড়ক শুধুমাত্র হজযাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার জন্যই নয়। বরং এটি সামগ্রিক সড়ক ও পরিবহন পরিষেবার উন্নতির জন্য, যার ফলে গড় ভ্রমণের সময় হ্রাস পাবে। এই আধুনিক হাইওয়েতে প্রতি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলতে পারবে।

;