হাদিস সংকলনের ইতিহাস



তানভীর মাহতাব আবীর, অতিথি লেখক, ইসলাম
হাদিস সংকলনের ইতিহাস, ছবি: সংগৃহীত

হাদিস সংকলনের ইতিহাস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআন শরীফে থাকা ইসলামি বিধি-বিধানের বিশ্লেষণ এবং তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাদিসে।

হাদিসের পরিচয়
আল্লাহতায়ালা হজরত জিবরাইল আলাহিস সালামের মাধ্যমে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যে অহি নাজিল করেন সেগুলোই হাদিসের মূল উৎস।

অহি প্রধানত দুই প্রকার। একটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ অহি। এই অহি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর সরাসরি নাজিল হতো। অন্যটি হচ্ছে পরোক্ষ অহি। এই অহি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর প্রচ্ছন্নভাবে নাজিল হতো। নবী করিম (সা.) নিজের ভাষা, কথা, কাজ এবং সম্মতির মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন। এগুলোই হাদিস নামে পরিচিত।

তবে মুহাদ্দিসগণ (হাদিস চর্চা করেন এবং বহুসংখ্যক হাদিসের সনদ ও মূল আরবি বক্তব্য (মতন) সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তি) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলি সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদিসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নবী করিম (সা.)-এর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং তার প্রতিটি কাজ ও আচরণ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করতেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদেরকে ইসলামের আদর্শ ও এর যাবতীয় নির্দেশ যেমন মেনে চলার হুকুম দিতেন, তেমনি তা স্মরণ রাখতে এবং অনাগত মানব জাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি সাহাবিদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘আমার পরে লোকেরা তোমাদের নিকট হাদিস শুনতে চাইবে। তারা এই উদ্দেশ্যে তোমাদের নিকট এলে তাদের প্রতি সদয় হয়ো এবং তাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করো।’ -মুসনাদ আহমদ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সাহাবিরা হাদিস সংরক্ষণে উদ্যোগী হন। প্রধানত তিনটি শক্তিশালী উপায়ে নবী করিম (সা.)- এর হাদিস সংরক্ষিত হয়। ১. উম্মতের নিয়মিত আমল, ২. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর লিখিত ফরমান, সাহাবিদের কাছে লিখিত আকারে সংরক্ষিত হাদিস ও পুস্তিকা এবং ৩. হাদিস মুখস্থ করে স্মৃতির ভাণ্ডারে সঞ্চিত রাখা, তারঃপর বর্ণনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে লোক পরম্পরায় তার প্রচার।

সেকালে আরবদের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। কোনো কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য একবার শ্রবণই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। স্মরণশক্তির সাহায্যে আরববাসীরা হাজার বছর ধরে তাদের জাতীয় ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে আসছিল। হাদিস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপায় হিসেবে এই মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নবী করিম (সা.) যখনই কোনো কথা বলতেন, উপস্থিত সাহাবিরা পূর্ণ আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে তা শুনতেন, অতঃপর মুখস্থ করে নিতেন। প্রায় এক লাখ সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী ও কাজের বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন এবং স্মৃতিপটে ধরে রেখেছেন।

এ ছাড়া উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল, পারম্পারিক পর্যালোচনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমেও হাদিস সংরক্ষিত হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যে নির্দেশই দিতেন, সাহাবিরা সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যে পরিণত করতেন। তারা মসজিদ অথবা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হতেন এবং হাদিস আলোচনা করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘আমার নবী করিম (সা.)-এর নিকট হাদিস শুনতাম। তিনি যখন মজলিস থেকে উঠে চলে যেতেন, আমরা শ্রুত হাদিসগুলো পরস্পরে পুণরাবৃত্তি ও পর্যালোচনা করতাম। আমাদের এক একজন করে সবাই হাদিসগুলো মুখস্থ শুনিয়ে দিতেন। এ ধরনের প্রায় বৈঠকেই অন্তত ষাট-সত্তরজন লোক উপস্থিত থাকতেন। বৈঠক থেকে আমরা যখন উঠে যেতাম তখন আমাদের প্রত্যেকেরই সবকিছু মুখস্থ হয়ে যেত।’ –আল মাজমাউয যাওয়াইদ: ১/১৬১

প্রাথমিক পর্যায়ে কোরআনে কারিম ব্যাতিত সাধারণতঃ অন্য কিছু লিখে রাখা হতো না। পরবর্তীকালে হাদিসের বিরাট সম্পদ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। ‘হাদিস নবী করিম (সা.)-এর জীবদ্দশায় লিপিবিদ্ধ হয়নি, বরং তার ইন্তেকালের শতাব্দীকাল পর লিপিবদ্ধ হয়েছে’ বলে যে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে তার আদৌ কোনো ভিত্তি নেই। অবশ্য একথা ঠিক যে, কোরআনের সঙ্গে হাদিস মিশ্রিত হয়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে- কেবল এই আশঙ্কায় ইসলামি দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘আমরা কোনো কথাই লিখো না। কোরআন ব্যাতিত আমার নিকট থেকে কেউ অন্যকিছু লিখে থাকলে তা যেন মুছে ফেলে।’ –সহিহ মুসলিম

কিন্তু যেখানে এরূপ বিভ্রান্তির আশঙ্কা ছিলো না নবী করিম (সা.) সেসব ক্ষেত্রে হাদিস লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি হাদিস বর্ণনা করতে চাই। তাই যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তিনি বললেন, আমার হাদিস কণ্ঠস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে লিখেও রাখতে পারো।’ –দারামি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) আরও বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম। কতিপয় সাহাবি আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন মানুষ, কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন। এ কথা বলার পর আমি হাদিস লেখা থেকে বিরত থাকলাম, অতঃপর তা হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তুমি লিখে রাখো। যেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এই মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না।’ –আবু দাউদ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক আনসারি সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মনে রাখতে পারি না। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও।’ তারপর তিনি হাতের ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।’ -তিরমিজি, হাদিসটি যইফ

হজরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) হাদিস লিখে রাখতেন। চামড়ার থলের মধ্যে রক্ষিত সংকলনটি তার সঙ্গেই থাকত। তিনি বলতেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে এ সহিফা ও কোরআন মজিদ ব্যাতিত আর কিছু লিখিনি। সংকলনটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) লিখিয়েছিলেন। এতে জাকাত, রক্তপাত (দিয়াত), বন্দী মুক্তি, মদিনার হেরেম এবং আরও অনেক বিষয় সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ ছিল। -বোখারি, ফাতহুল বারি

এ সব ঘটনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, নবী করিম (সা.)-এর সময় থেকেই হাদিস লেখার কাজ শুরু হয়। সাহাবিরা যেভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে হাদিসের জ্ঞান লাভ করেন, তেমনিভাবে হাজার হাজার তাবিঈ সাহাবিদের কাছে হাদিসের শিক্ষা লাভ করেন।

হিজরি দ্বিতীয় শতকের শুরু থকে কনিষ্ঠ তাবিঈ ও তাবিঈ-তাবিঈনের এক বিরাট দল সাহাবা ও প্রবীণ তাবিঈনের বর্ণিত ও লিখিত হাদিসগুলো ব্যাপকভাবে একত্র করতে থাকেন। এ সময় খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রাহ.) দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকদের নিকট হাদিস সংগ্রহ করার জন্য রাজকীয় ফরমান প্রেরণ করেন। ফলে সরকারি উদ্যোগ সংগৃহীত হাদিসের বিভিন্ন সংকলন সিরিয়ার রাজধানী দামেশক পৌঁছতে থাকে। খলিফা সেগুলোর একাধিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বত্র পাঠিয়ে দেন।

হিজরি দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত হাদিসের চর্চা আরও ব্যাপকতর হয়। এ সময়কালে বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজার মতো সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ছয়খানি হাদিস গ্রন্থ (সিহাহ সিত্তাহ) সংকলিত হয়। এ যুগেই ইমাম শাফিঈ (রহ.) তার কিতাবুল উম্ম ও ইমাম আহমদ (রহ.) তার আল মুসনাদ গ্রন্থ সংকলন করেন।

হিজরির চতুর্থ শতকে মুসতাদরাক হাকিম, সুনানে দারে কুতনি, সহিহ ইবনে হিব্বান, সহিহ ইবন খুযায়মা, তাবারানির আল-মুজাম, মুসান্নাফুত তাহাবি এবং আরও কতিপয় হাদিস গ্রন্থ সংকলিত হয়।

ইমাম বায়হাকির সুনানে কুবরা ৫ম হিজরি শতকে সংকলিত হয়। চতুর্থ শতকের পর থেকে এ পর্যন্ত সংকলিত হাদিসের মৌলিক গ্রন্থগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সংকলন ও হাদিসের ভাষ্য গ্রন্থ এবং এই শাস্ত্রের শাখা-প্রশাখার ওপর ব্যাপক গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। বর্তমানকাল পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে।

দুই দশক ধরে কাবা প্রাঙ্গণে শ্রীলঙ্কান এক দম্পতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুই দশক ধরে মক্কার মসজিদে হারামে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এক দম্পতি। পবিত্র এ মসজিদে আগত হজ ও উমরাযাত্রী এবং মুসল্লিদের সেবায় তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সৌদি গেজেট তাদের নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবান এক দম্পতি হলেন শ্রীলঙ্কার আশরাফ ও ফাতেমা। ইসলামের এ পণ্যভূমিতে দীর্ঘকাল সেবা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

মক্কার মসজিদে হারামে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন তিনি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাওয়া তারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন।

সম্মানিত এ স্থানে আসার গল্প শুরু হয় প্রায় বিশ বছর আগে। তখন ফাতেমা মসজিদে হারামে কাজের সুযোগ পায়। তিনি নারীদের নামাজের স্থানে কাজ করতেন। সেখানে ছড়িয়ে থাকা জায়নামাজগুলো গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল তার।

কয়েক বছর পর তিনি নিজের স্বামীকেও মসজিদে হারামের দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার আবেদনকে অনুমোদন দেয়।

ফাতেমা জানান, মসজিদে হারামে তিনি চার বছর একাকী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন জানান, যেন তার স্বামী আশরাফকে হারামাইনের কর্মী হিসেবে আনা হয়। এদিকে এতদিন যাবত শ্রীলঙ্কায় কাজ করতেন আশরাফ।

প্রথম পর্যায়ে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে মক্কায় চলে আসেন আশরাফ। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এখন মুসল্লিদের সেবা দিয়ে আনন্দবোধ করছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, ‘পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। ফাতেমা ও আমি একসঙ্গে কাজ করি এবং একেঅপরকে সহযোগিতা করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা উমরা পালন করি।’

মক্কার মতো সম্মানিত স্থানে দায়িত্ব পালন তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মসজিদে হারামে কাজ করতে পেরে নিজেদেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার এ দম্পতি।

;

যেভাবে দরুদ-সালাম পৌঁছে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আহযাব : ৫৬

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও আখেরাতে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়।

দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। -সহিহ মুসলিম : ৪০৮

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৯১৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব করো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪২

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন
নবী কারিম (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ -সুরা জুমার : ৩০

তবে মৃত্যুর পর তারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো- কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

তারা কবরে নামাজ আদায় করেন। -মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৩৪২৫

হজরত মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৩৪৭

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। -ইবনে মাজাহ : ১৬৩৭

তাদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ -ফাতহুল বারি : ৬/৬০৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন
কেউ নবী কারিম (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী কারিম (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী কারিম (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪১

বস্তুত মহান আল্লাহ নবী কারিম (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।

;

মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চাইল শ্রীলঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস মহামারির সময় মৃতদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এ ছাড়া ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা।

করোনা মহামারির সময় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

বুধবার (২৪ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপ দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। যদিও করোনায় মৃতদের লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করাকে নিরাপদ বলে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়া মৃতদের লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফন নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছে দেশের মন্ত্রিসভা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামারির সময় লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে সরকারের এই নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সম্প্রদায়ের কাছে ‘সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন।

করোনা মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সরকারই সেসময় এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আইন করা হবে হবে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম বা অন্যকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতি লঙ্ঘন না করা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

ঐতিহ্যগতভাবে, মুসলমানরা মুসলিমদের লাশকে কেবলার দিকে মুখ করে দাফন করে থাকে। আর শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মরদেহ হিন্দুদের মতো সাধারণত দাহ করা হয়।

শ্রীলঙ্কার মুসলিম প্রতিনিধিরা সরকারের এই ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, তাদের সমগ্র সম্প্রদায় এই ঘটনার আঘাত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশের ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী।

;

ব্রিটিশ রাজনীতিতে মুসলমানদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই প্রথমবারের মতো দেশটির মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন একজন মুসলিম নারী। শাবানা মাহমুদ নামের ওই মন্ত্রী পবিত্র কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন।

এ ছাড়া আরও দুই মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। তিনি গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হয়েছেন। এর আগে যুক্তরাজ্যের ‘সিটি মিনিস্টার’ হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ।

মুসলিম নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে ২০১৯ সালে ১৯ জন এমপি ছিলেন। এবারের নির্বাচনে ২৫ জন মুসলিম নির্বাচিত হয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিম এমপি এবারই নির্বাচিত হলেন।

নির্বাচিতদের মধ্যে ১৮ জন লেবার পার্টির, চারজন স্বতন্ত্র, দুজন কনজারভেটিভ পার্টির এবং একজন লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের।

মুসলিম নেটওয়ার্কের দাবি, গাজার প্রতি মুসলিম ভোটারদের সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। ফলে চারজন মুসলিমসহ পাঁচটি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।

তারা মোট ৬৫০ এমপির প্রায় ৪ শতাংশ। তবে মুসলিমরা যেহেতু ব্রিটেনের জনসংখ্যার ৬.৫ শতাংশ, তাই হাউস অফ কমন্সে মুসলিমদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আরও ১৭ জন এমপি দরকার।

নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে ব্রিটেনের ইসলামি মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মাসুদ শাজারেহ বলেছেন, ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলমানরা প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ব্রিটেনে বেশি সংখ্যায় মুসলমানদের যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয় প্রায় এক শতাব্দী আগে। বর্তমানে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

মাসুদ শাজারেহ সম্প্রতি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রভাবের কথা তুলে ধরে বলেন, ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা কার্যকর শক্তিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানরা। এটাকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহারের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে মুসলমানদের অসন্তোষের কারণে ব্রিটিশ লেবার পার্টি কয়েকটি আসন হারিয়েছে। এই প্রভাব ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলের মতো আরও সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের সংগঠনের উপস্থিতি মুসলমানদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তা মানুষের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করে।

গত ৪ জুলাই সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে লেবার পার্টি পাঁচ বছরের জন্য সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। তবে গাজায় নির্বিচার গণহত্যার ব্যাপারে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিল মুসলমানেরা। তারা নির্বাচনে নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

ব্রিটিশ জনগণ দেশটির খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দখলদার ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি সরকারের সমর্থনের প্রতিবাদে ভোট দিয়েছে। এর অর্থ হলো, লেবার পার্টি বিজয় পেলেও সেটা তার নিজের নীতির কারণে পায়নি বরং বিরোধী দলের অপছন্দনীয় কিছু কাজ ও নীতির কারণে মানুষ বিদ্যমান বিকল্প ধারাটিকে বেছে নিয়েছে।

;