আল্লামা বাবুনগরী ভাই বলে আনাসকে বুকে টেনে নিলেন
বহুল আলোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে। তবে হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা এ ইস্যুতে ‘ভার্চুয়াল যুদ্ধ’ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। একে অপরকে ঘায়েল করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছেন নানা স্ট্যাটাস। যদিও অনুসারীদের ‘ভার্চুয়াল যুদ্ধ’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন দুই শীর্ষ নেতাই।
হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী অসুস্থ হওয়ায় মাদরাসার সহকারী পরিচালক নিয়োগসহ হেফাজতের নানা ইস্যু নিয়ে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ। অভিযোগ উঠে আল্লামা শফীর ছেলের হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক তার কর্তৃত্ব বহাল রাখতে জুনায়েদ বাবুনগরীকে বাদ দিতে নানা পথ অবলম্বন করছেন।
ইতোমধ্যে মাদরাসার শূরা কমিটির মাধ্যমে সহকারী পরিচালকের পদ থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দিয়ে মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা শেখ আহমদকে ওই পদে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। গুঞ্জন উঠে মাওলানা বাবুনগরীকে হেফাজতের মহাসচিব থেকেও সরিয়ে দেওয়ার। এরই মাঝে মাওলানা আনাসের একটি টেলিফোন ভাইরাল হলে হেফাজতের এ দুই শীর্ষ নেতার স্নায়ুযুদ্ধ এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে রূপ নেয়। দেশের শীর্ষ ৬৬ জন আলেম বাবুনগরীর পক্ষে বিবৃতি দিলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। পরে আল্লামা শফীর পক্ষ থেকে পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হয়। পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে হেফাজত ট্র্যাজেডির জন্য একে অপরকে বিরুপ মন্তব্য করে দোষারূপ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করলে দেশের তরুণ আলেমরা দুই শীর্ষ নেতাসহ তাদের অনুসারীদের কাছে বিরোধ মেটানোর আবেদন উত্থাপন করেন। অবশেষে ধীরে ধীরে বরফ গলতে শুরু করে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) হাটহাজারী মাদরাসার অফিসিয়াল ফেসবুকে প্রায় ২০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ওই ভিডিওতে সেখানে দেখা যায়, হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দুই পাশে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং হেফাজত আমিরের ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী বসা।
এ সময় হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদরাসা, দেশ ও জাতির মধ্যে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে যেন বিশৃঙ্খলা বা ভুল বুঝাবুঝি না হয় এ জন্য ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি হেফাজতে ইসলামীর আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও তার ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য না করার অনুরোধ জানান।
এ ছাড়া উভয়ের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে দাবি করে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আনাস মাদানীকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে তার ও হেফাজত আমিরের লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে বলেন।
আনাস মাদানীর পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে হেফাজত মহাসচিব বলেন, ‘হুজুর পুত্র আনাস মাদানী আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে মাত্র। ঘরের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হলে যেমন সবাই বসে সেটা সমাধান করে, আমরাও বসে ভুল বোঝাবুঝি সমাধান করে নেব। আমাদের মুরুব্বিরা সমাধান করে দেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হেফাজত আমির সর্বজন শ্রদ্ধেয়। আমাদের জন্য অনেক বড় নেয়ামত (নেয়ামতে উজমা)। আমাদের মাথার ছায়া, মুকুটহীন সম্রাট। আমরা যারা হুজুরের মনে কষ্ট দেব তা আল্লাহর ওলির সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করার শামিল।’
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও তার পুত্র আনাস মাদানীকে নিয়ে দৈনিক পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ফেসবুকে বিরুপ মন্তব্য ও লেখালেখি করা হচ্ছে। এতে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি ও দুরত্ব আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই আপনার যারা ইসলাম, আলেম-উলামা ও দ্বীনকে ভালবাসেন তারা এ ধরণের বিরুপ মন্তব্য বন্ধ করবেন, দূরে থাকবেন। এটাই আমার অনুরোধ।
হাটহাজারী মাদরাসা সকলের মাদরাসা এমনটা জানিয়ে বাবুনগরী বলেন, দ্বীনকে রক্ষার জন্য আমাদের মুরব্বিরা খেয়ে না খেয়ে এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই আসুন, আমরা সবাই হাটহাজারী মাদরাসার হজরতের জন্য ভালোবাসা-মহব্বতের অন্তর খুলে দেই। সেইসঙ্গে আমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করি। আল্লাহ আমাদের মাফ করে দিন।
পরে হেফাজত আমিরের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যও পাঠ করেন মাওলানা আনাস। লিখিত বক্তব্যে আল্লামা শফী বলেন, হেফাজতে ইসলামে কোনো গ্রুপিং নেই। মহাসচিবসহ সব নেতা স্ব-স্ব পদে বহাল আছেন। আপনারা কোনো গুজবে কান দেবেন না। হেফাজত আমির এ সময় মাদরাসা ও নিজের জন্য দোয়া কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্য পড়া শেষে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে মাওলানা আনাস মাদানী কোলাকুলি করে বলেন, আমাকে মাফ করে দেবেন, দোয়া করবেন।