শেষ রাতে ভেসে আসে কোরআনের সুর

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শেষরাতে কোরআন তেলাওয়াতে মগ্ন হেফজ শিক্ষার্থীরা, ছবি: সংগৃহীত

শেষরাতে কোরআন তেলাওয়াতে মগ্ন হেফজ শিক্ষার্থীরা, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয় ভোর ৩টা ৫৬ মিনিটে। তবে ফজরের আজান দেওয়া শুরু হয় আরেকটু পর। প্রায় মসজিদেই সোয়া চারটার দিকে ফজরের আজান হয়। ফজরের জামাত অনুষ্ঠিত হয় পৌনে ৫টায়। সূর্যোদয় ভোর ৫টা ১৯ মিনিটে।

কিন্তু কোরআনে কারিম হেফজ তথা মুখস্থ করার সুবিধার্থে রীতি অনুযায়ী হেফজ বিভাগের ছাত্ররা ঘুম থেকে উঠে ভোর পৌনে ৪টায়। ফজরের জামাতের আগে অন্তত ৪০-৪৫ মিনিট হেফজ বিভাগের ছাত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এই সময়ে তারা পূর্বে মুখস্থ করা কোরআনের অংশ কিংবা নতুন অংশ মুখস্থ করেন। অনেকে এ সময় উস্তাদকে সবক শুনিয়ে থাকেন। এক কথায়, এই সময়টা গ্রাম-গঞ্জের হেফজ মাদরাসা থেকে শুরু করে শহর-বন্দরের সব মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্ররা ঘুম থেকে উঠেন। এটা তাদের নিয়মিত রুটিন।

বিজ্ঞাপন

সেই রুটিন অনুযায়ী প্রায় চার মাস সোমবার (১৩ জুলাই) একযোগে দেশের সব হিফজ মাদারাসার শিক্ষার্থীরা ফজরের ওয়াক্তের আগে ঘুম থেকে ওঠেন। মাদরাসার হাফেজ ছাত্রদের কোরআন তেলাওয়াতে মুখর হয়ে উঠে দেশের হিফজ মাদরাসাগুলো।

হাফেজ ছাত্রদের জন্য কোরআন হেফজ করার ক্ষেত্রে নতুন নতুন অংশ মুখস্থ করার পাশাপাশি নিয়মিত পেছনে মুখস্থ করে আসা অংশগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে তেলাওয়াত করতে হয়। সেই সঙ্গে কোরআন সহিহ-শুদ্ধ করার জন্য তাজভিদের ওপর ব্যুৎপত্তি লাভ করতে হয়। সেক্ষেত্রে শেষ রাতের এই সময়টুকু বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৭ মার্চ দেশের সব কওমি মাদরাসাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে ১৬ মার্চ দুপুরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখনও দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শুধু খুলে দেওয়া হয়েছে হিফজ মাদরাসাগুলো।

মাদরাসা
কোরআন তেলাওয়াতে করছেন হেফজ শিক্ষার্থীরা, ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামা ও কওমি মাদরাসা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে দেশে সকল হিফজ মাদরাসা খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। আবেদনে হিফজ শিক্ষা কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়ের আবশ্যকতার কথা উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ৮ জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ১২ জুলাই থেকে হাফিজিয়া মাদরাসা ও হিফজখানার শিক্ষা কার্যক্রম চালুর নির্দেশনা জারি করা হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে হিফজখানা খুলে দেওয়ার নির্দেশনা জারির পর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেন।

রোববার (১২ জুলাই) থেকে ছাত্ররা মাদরাসায় আসা শুরু করে এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাফিজিয়া মাদরাসা এবং হিফজখানাগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় মাদরাসায় আসরের নামাজের পর ‘খতমে খাজেগান’ শেষে করোনা মহামারি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় ৪ মাস পর মাদরাসায় আগত ছাত্রদের অনেকেই নিজ উস্তাদের কাছে বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মাদরাসা বন্ধ থাকায় মুখস্থ করা কোরআনে কারিমের পেছনের অংশগুলো ভুলে গেছে। শিক্ষকরা বলছেন, হেফজখানার শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতি হয়েছে।

উত্তরা দারুল কোরআন হেফজ মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ মতিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের মাদরাসায় আগত সব ছাত্রের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তাদের থাকা-খাওয়া, ও চলাফেরায় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার শিক্ষকরা এসব তদারিক করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফেজ মতিউর রহমান বলেন, তাদের হিফজখানার ছাত্রদের মাদরাসা থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। সার্বক্ষণিক সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের তদারকিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।