নিউইয়র্কের ঈদ স্মৃতি, শিক্ষণীয় নানাদিক



ফয়সল আহমদ জালালী, অতিথি লেখক, ইসলাম
নিউইয়র্কে খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, পুরোনো ছবি

নিউইয়র্কে খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, পুরোনো ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

নিউইয়র্ককে বলা হয় বিশ্বের রাজধানী। দুনিয়ার সব জাতি ও গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস এখানে। ভাষার বৈচিত্র্যময় শহর ও এটি। নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এই শহরে জীবনযাপন করেন। যার যার ধর্ম পালন করেন অবাধে। ধর্মীয় আচার-আচরণ পালনে নেই কোনো বিধি-নিষেধ। দিন হোক আর রাত হোক চলাচলে নেই কোনো ভয়-আশংকা। লিঙ্গ বৈষম্যমহীনের দেশ আমেরিকা। নারীরা ও চলছে নিজ নিজ গন্তব্যে একা একা। কেউ কাউকে বিরক্ত করছে না।

আমার প্রথম সফর
২০১৮ সালের কথা। আমার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল রমজান মাসের শেষ দশকে। নিশ্চিত করে বললে ঈদুল ফিতরের ২দিন আগে। নিউইয়র্ক ঈদগাহের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরের দুয়ার খুলে। এই ঈদগাহের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম কাজী কাইয়ুম। এই নামেই তিনি খ্যাত। আমেরিকাজুড়ে মুসলিম কমিউনিটিতে তার বেশ প্রভাব ও খ্যাতি রয়েছে। তীক্ষ্ম প্রতিভার অধিকারী বন্ধুবর মাওলানা আবদুল কাইয়ূম খান। শুধু ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেননি তিনি মুহাম্মাদী সেন্টার নামে জ্যাকসন হাইটসে গড়ে তুলেছেন শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক একটি প্রতিষ্ঠান। নিউইয়র্কে ইন্টারফেইথ, এন্টি টেরোরিজম এওয়ারনেসেও তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।

নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমান বন্দরে দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে ফুলেল অভ্যর্থনা জানান। পরে নিজে গাড়ি চালিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান। সে স্মৃতি কোনোদিন ভুলবার মতো নয়। এ বিষয়ে স্বতন্ত্র একটি প্রবন্ধ লেখব- ইনশাআল্লাহ।

অতিথি ইমাম হিসেবে লেখককে সম্মাননা জানাচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলম্যান, ছবি: সংগৃহীত

‘চাঁদ রাত’ সংস্কৃতি
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসকে বলা হয় মিনি বাংলাদেশ। এখানে প্রচুর বাংলাদেশি বসবাস করেন। ঈদের চাঁদ ওঠার রাতকে ওখানকার মুসলিম সমাজ ‘চাঁদ রাত’ হিসেবে পালন করেন। আমি এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। এশার নামাজের পর বের হয়ে দেখি রাস্তায় প্রচুর নারী ও শিশু। ভিড়ের কারলে ফুটপাতে হাঁটা যাচ্ছে না। এক বাংলাদেশিকে জিজ্ঞেস করলাম, রাস্তায় এত ভিড়ের কারণ কী। তার পাল্টা প্রশ্ন, আপনি এ এলাকায় নতুন এসেছেন? আমি বললাম, শুধু এলাকায় নতুন নয়, আমেরিকাতেই আমি নতুন। মাত্র দু'দিন পূর্বে এসেছি। বলল, আজ চাঁদ রাত। মহিলা ও শিশুরা ঈদের আগের রাতে এখানে রাস্তায় বেরিয়ে এসে আনন্দ করে। হাতে মেহেদী লাগায়। পরিচিতদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে। অনেক রাত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। এটিকে ঈদ উপলক্ষ্যে মেহেদী উৎসবও বলা চলে।

একই সুতোয় বেঁধে ফেলা ঈদ
নিউইয়র্কে রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসলিম সমাজ। এশিয়ান, আমেরিকান, ইউরোপিয়ান ও আফ্রিকান মহাদেশীয় সংস্কৃতির মাঝে তো ভিন্নতা আছেই। এছাড়া বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, মিসর, মরক্কো, গায়ানা, সুদান, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের আচার-আচরণেও রয়েছে ভিন্নতা। রয়েছে ভাষা ও বর্ণের বহু সমীকরণ। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো পালনে গড়ে ওঠা বিভিন্ন চিন্তা-চেতনা ও দর্শনের মানুষ রয়েছে এখানে। যাকে আমরা মাজহাব বলি। আর পশ্চিমা লেখকরা যাকে school of thought বলে আখ্যায়িত করেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাইরের কেউ মনে করতে পারেন- মাজহাব নিয়ে বিভক্তি ইসলামের মাঝে উপদলীয় কোন্দল। যা অন্যান্য ধর্মে তীব্রভাবে লক্ষ্য করা হয়। তা মোটেই সত্য নয়। মাজহাব হলো, ইসলামের বিধান পালনে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা। একই ইমামের পেছনে সব মাজহাবের মানুষের নামাজ আদায়ই এর বড় প্রমাণ। ঈদের মাঠে ঈদের নামাজে সবাই এক ও অভিন্ন। নামাজ শেষে সবাই একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করছে। করছে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। নেই তাদের মাঝে কোনো বর্ণ বৈষম্য। দেশ-মহাদেশের নেই কোনো ভেদাভেদ। নিউইয়র্কের ঈদ মনে হয় গোটা বিশ্বকে একই সুতোয় বেঁধে ফেলে। নিউইয়র্ক যেন এক আদমের সন্তানের মিলন ভূমি।

মুসলিম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো কোরবানির অর্ডার গ্রহণ করে, ছবি: সংগৃহীত

মাঠে-ময়দানে ঈদের জামাত
নিউইয়র্কে ঈদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- মাঠে-ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বাদল দিন হলে ভিন্ন কথা। তখন বাধ্য হয়েই মসজিদে ঈদের আয়োজন করা হয়। স্কুল-কলেজের মাঠ ঈদের জামাতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পার্কগুলোও ব্যবহার করা যায়। এমনকি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়ও ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। আমেরিকা নিয়ম-কানুন মেনে চলা দেশ। আইন-কানুনকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছে-তাই করা যাবে না সেখানে। ওখানকার মানুষ আইনের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম-কর্ম পালনে কোনো বাধা-বিপত্তি নেই। আমার দেখামতে ধর্মাচারীকে আমেরিকার সমাজে শ্রদ্ধা করা হয়। সে যেকোনো ধর্মের মানুষ হোক।

কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সব ধরনের উপাসনালয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক মৌখিক নির্দেশে সব খুলে দেওয়া হয়েছে। ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল না হলে এই অজুহাত আরও দীর্ঘ হতো। বন্ধ থাকত মসজিদ, মন্দির, চার্চ ও প্যাগোডা ইত্যাদি।

জনপ্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা
নামাজ শেষে ঈদগাহে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য উপস্থিত হন নিউইয়র্কের জনপ্রতিনিধিরা। এমনকি অন্য ধর্মের গুরুরাও আসেন শুভেচ্ছা জানাতে। অবশ্য সেটি নির্ভর করে আয়োজকদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। নিউইয়র্ক ঈদগাহের প্রতিষ্ঠাতা কাজী কাইয়ুম আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তার প্রতিষ্ঠিত ঈদগাহে যেকোনো জনপ্রতিনিধিকে স্বাগত জানানো হয়। এমনকি ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রদর্শনের জন্য আন্তধর্মীয় নেতাদেরকেও গ্রহণ করা হয়। ২০১৮ সালে আমি প্রথম আমেরিকা যাই। নিউইয়র্ক ঈদগাহ আমাকে ইমাম হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। ঈদের জামাত শেষে জ্যাকসন হাইটস এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান নিজে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা জানান। এমনকি অতিথি ইমাম হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির মনোগ্রাম সম্বলিত প্যাডে তার স্বাক্ষরিত একটি সাইটেশন প্রদান করেন। আমাকে নিয়ে ছবি তুলেন। সেখানকার গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় তা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

অন্যরাও ঈদের দৃশ্য উপভোগ করে
যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এ জন্য দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে এর কোনো তথ্য জানা যায় না। তবে মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছেন প্রচুর। ওপরে বর্ণিত ঈদের জামাতের সমাগম থেকে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। তবে মাঠে-ঘাটে ও পার্কে ঈদের জামাত আয়োজনের দৃশ্য অন্য ধর্মাবলম্বীরা উপভোগ করেন। সুশৃঙ্খল দৃশ্য দেখে অনেকেই পুলকিত হন। অনেকে এগিয়ে এসে অভিনন্দন জানান। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুৎবা শুনেন। জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় নিউইয়র্ক ঈদগাহের কার্যক্রম পালিত হয়। আমার খুৎবা প্রদান শেষে অনেক অমুসলিম এগিয়ে এসে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

কোরবানি নির্দিষ্ট স্থানে আদায়
কোরবানি যত্রতত্র আদায় করার সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি আদায় করতে হয়। সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিজ হাতে সেখানে কোরবানি করার ব্যবস্থা রয়েছে। চামড়া পৃথক করা ও গোশত কাটাকুটি প্রশিক্ষিত মানুষ দিয়ে করতে হয়। মুসলিম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোও কোরবানির অর্ডার গ্রহণ করে। কোরবানির ঈদ আসন্ন হলে বড় বড় সাইনবোর্ড টাঙানো হয় দোকানের সম্মুখে। ভাগে যারা কোরবানি করেন তারা বেশিরভাগ তাদের হাতেই কোরবানির দায়িত্ব অর্পণ করেন। এ জন্য বিশ্বস্ত দোকান মালিক বেছে নিতে হয়। খাসি, ভেড়া বা দুম্বা কোরবানি যারা করেন তারা নির্দিষ্ট স্লটারিং স্থলে হাজির হন।

নিয়মানুবর্তিতা
সবক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলতে আমেরিকানরা অত্যন্ত সচেতন। আগে আসলে আগে পাবেন, উঁচু-নীচু সবাই এই নিয়ম মেনে চলেন। মুদির দোকানেও সুশৃংখলভাবে এই নিয়ম মানা হয়। মূল্য পরিশোধের সময় লাইন বেঁধে ক্রেতারা দাঁড়িয়ে থাকেন। কোরবানির ক্ষেত্রেও এই নিয়ম ভঙ্গ করার প্রশ্নই আসে না। যারা কসাইখানায় পরে যাবেন তাদের পরেই ফিরতে হয়। অনেকের সিরিয়াল পরের দিনও আসতে দেখা যায়, কিচ্ছু করার নেই। ওখানকার মানুষগুলোর স্বভাব হয়ে গেছে নিয়ম মেনে চলার। সিরিয়াল ভঙ্গ করার মানসিকতা কারো হয় না। একান্ত কেউ এর ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা করলে তার কাজ করে দেওয়া হয় না। আমেরিকা শ্রেণি বৈষম্যহীনতার এক মনোরম ভূখণ্ড।

ফয়সল আহমদ জালালী: ভিজিটিং ইমাম, নিউইয়র্ক ঈদগাহ, যুক্তরাষ্ট্র

   

মক্কা প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ, ১৩৮ ভাষার অনুবাদ ডিভাইস



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের স্থানীয় হিসাবে বৃহস্পতিবার জিলকদ মাসের ১৫ তারিখ। আজ থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ শুরু হয়েছে। পবিত্র হজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির জননিরাপত্তাবিষয়ক অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে, ১৫ জিলকদ) থেকে শুরু হওয়া এ বিধি-নিষেধ হজের পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে। এ সময়ে স্থানীয়দের মক্কায় প্রবেশে প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন হজের প্রস্তুতি এবং হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বিনা অনুমতিতে মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে হজের স্থানগুলোতে কাজ করার অনুমোদন, মক্কায় বসবাসকারীর আইডি ও হজের অনুমোদন ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, অনুমোদন ছাড়া যারা মক্কায় প্রবেশ করতে চাইবে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফিরিয়ে দেবে।

সব ধরনের ভিজিট ভিসায় মক্কায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র হজ ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারবেন। ভিজিট ভিসার ধরন যাই হোক না কেন, এটি হজ পারমিট নয় এবং এই ধরনের ভিসাধারী ব্যক্তিদের হজ করার অনুমতি নেই'। মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করে আরও বলেছে, কোনো ভিজিট ভিসাধারী যদি মক্কায় থাকে, তাদের অবিলম্বে চলে যেতে হবে। হজ ভিসা ব্যতীত অন্য যেকোনো ধরণের ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করলে বা মক্কার ভেতরে পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৩৮ ভাষায় তাত্ক্ষণিক অনুবাদ ডিভাইস
সৌদি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগের মুখপাত্র মেজর নাসির আল ওতাইবি জানিয়েছেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের সেবা করার জন্য, কর্মকর্তাদের ১৩৮ ভাষায় দ্রুত অনুবাদের ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হজযাত্রীদের সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

;

৬৫ বছর বয়সী ভ্যানচালকের উমরার স্বপ্নপূরণ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে ছিল সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালার ঘর তওয়াফ ও মদিনা শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবরক জিয়ারত করার, রাসুলের রওজায় সালাম পেশ করার। অবশেষে লালিত সেই স্বপ্ন ২০২৪ সালের ২ মে পূরণ করেছেন ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী। ৬৫ বছর বয়সী এই ভ্যানচালক বরিশালের মুলাদী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বড়চর মাধবপুরের মো. আ. রব বেপারীর ছেলে।

পবিত্র উমরার স্বপ্নপূরণ প্রসঙ্গে ফরিদ বেপারী বলেন, ‘ভালো কাজের নিয়ত করলে আল্লাহতায়ালা তার ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতেই আমার উমরা পালন করা সম্ভব হয়েছে।’

জানা গেছে, ভ্যান চালিয়ে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করেন। সংসারের খরচ চালানোর পরে হাতে কিছুই থাকে না। তার পাঁচ ছেলে সন্তান রয়েছে। ছোট ছেলে তার সঙ্গে থাকে। বাকি ছেলেরা আলাদা সংসার করে। নিজের আয় দিয়েই উমরা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য তিনি দিন-রাত ভ্যান চালিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন।

গত ৩০ বছর ধরে তিনি ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রীর শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় উমরা পালনে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি বলে মনে অনেক দুঃখ তার। উমরা পালন করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। উমরা পালন করতে কোনো ঋণ করেননি তিনি। কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে টাকা উপার্জন করে উমরা পালন করেছেন তিনি।

ফরিদ বেপারী আবারও উমরা পালন করার আশা করছেন। এ জন্য সবার দোয়াও কামনা করেন তিনি।

;

ইন্দোনেশিয়ান নারীর ২২ বার হজ-উমরার অবিস্মরণীয় স্মৃতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৬৪ সালে ছয় বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো হজপালন করতে সৌদি আরব যান। তারপর থেকে তিনি উমরা এবং হজপালনের জন্য আরও ২২ বার মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করেছেন।

সুরাবায়া বিমানবন্দরের মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ হলে মরিয়ম মুনির তার ২২ বার সৌদি আরব ভ্রমণের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে আলাপ করছিলেন সৌদি প্রেস এজেন্সির এক প্রতিনিধির সঙ্গে।

আলাপকালে তিনি বলেন, আজ থেকে ৬০ বছর আগে, তার পরিবার হজ করার জন্য প্রথম ভ্রমণ করেন, ভ্রমণটি ছিল বেশ ব্যয়বহুল। একটি পুরোনো জাহাজে করে সৌদি আরব আসতে পাঁচ থেকে আট মাস সময় লেগেছিল।

জাহাজগুলো প্রথমে জাকার্তা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে ভারত, আরব সাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে জেদ্দা বন্দরে পৌঁছায়। তিনি বলেন, যাত্রাটি বিপদ, চ্যালেঞ্জ এবং ভয়ে পরিপূর্ণ ছিল। তবে, ফরজ ইবাদতপালনের বাধ্যবাধকতার জন্য তার পরিবারের ইচ্ছা ও সাধনা পথের কষ্ট সেভাবে দাগ কাটেনি। বরং এ সময়টা আমাদের আরও শক্তি জুগিয়েছে। কাবা দেখার ইচ্ছাকে প্রবল করেছে। মসজিদে নববিতে যাওয়ার এবং রাসুলের রওজা জিয়ারতের ভালোবাসা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মক্কা নগরিতে পৌঁছার পর আমাদের শরীর পুরোপুরি সতেজ হয়ে উঠে। আর মসজিদে নববিতে যেয়ে মনে হতো, আত্মা যেন সতেজ হয়ে উঠছে।

মুনির অতীতে হজকে ঘিরে ইন্দোনেশিয়ানদের বিভিন্ন ঐতিহ্য সম্পর্কেও কথা বলেন।

ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজপালনে সৌদি আরব যান

মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বলেন, হজযাত্রীরা সবাই জাকার্তায় জড়ো হবেন এবং যাত্রার আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানাবেন- এটাই আমাদের রীতি। হজ শেষ করে দেশে ফেরার পর হজযাত্রীদের পরিবার তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন এবং তাদের ধর্মীয় যাত্রার পরিপূর্ণতা উদযাপন করে বিভিন্ন উপহার দিয়ে উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়।

মরিয়মের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মক্কায় ভ্রমণ এখন অনেক সহজ হয়েছে, যার ফলে পবিত্র নগরীতে উমার ও হজপালনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। অতীতের হজযাত্রাকে বর্তমান যাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ভিন্নতার জগৎ।

তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে তারা এখানে (ইন্দোনেশিয়া) বসে মক্কায় পৌঁছেছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা সৌদি সরকারের একটি অনুকরণীয় অর্জন। এ সময় মুনির সৌদি সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জনসংখ্যার নিরিখে ইন্দোনেশিয়া হলো, সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী প্রতিবছর হজপালনে সৌদি আরব যান। চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। ১২ মে থেকে দেশটির হজফ্লাইট শুরু হয়েছে।

;

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া তথা কালো গিলাফ নিচ থেকে ওপরে তিন মিটার তুলে তাতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো হয়েছে। কেউ বলেন, কাবাকে ইহরাম পড়ানো হয়েছে, এর মাধ্যমে হজের প্রস্তুতির স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার ২২ মে (১৫ জিলকদ) প্রতিবছরের মতো এবারের হজের প্রস্তুতি হিসেবে তা করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এভাবে কাবার গিলাফের নিচের অংশ ওপরের তোলার কারণ কী, তা অনেকের অজানা।

মূলত হজের সময় পবিত্র মসজিদে হারামে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। কাবা ঘরের কালো গিলাফের কিছু অংশ ওপরে উঠিয়ে রাখা এর অন্যতম। এর বদলে একটি সাদা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই কাপড়টি আড়াই মিটার চওড়া এবং চার দিকে ৫৪ মিটার দীর্ঘ।

কিসওয়াটি বেশ কয়েকটি পর্যায়ে উত্তোলন করা হয়। প্রথমে চারদিক থেকে কভারের নীচের অংশটি খুলে দেওয়া হয়, ফলে কোণগুলো আলাদা হয়ে যায়। তার পর নীচের দড়ি খুলে ফিক্সিং রিং থেকে সরিয়ে ওপরের দিকে টেনে তোলা হয়।

ইসলামের সূচনাকাল থেকে হজের সময় কাবার গিলাফ সুরক্ষায় এই রীতি চলে আসছে। অতীতে গিলাফের কিছু অংশ হাতের কাছে পেয়ে কিছু অংশ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটে।

অনেকে গিলাফকে নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক বস্তু বলে মনে করে। অনেকে সেই কাপড়ে নিজের নাম লিখে স্বস্তিবোধ করে। অথচ এসব কাজের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাই হাজিদের ভিড়ের মধ্যেও গিলাফ সুরক্ষিত রাখতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কাবার গিলাফ ওপরে তোলা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

আর খালি স্থানে সাদা কাপড় দিয়ে কাবাঘর মোড়ানো হয়। মূলত এর মাধ্যমে হজের সময় ঘনিয়ে আসার কথা স্মরণ করানো হয়। কাবার দেয়ালের সাদা কাপড় হজের পূর্বপ্রস্তুতির জানান দেয়। হজের শেষ সময় পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকে। এরপর আগের মতো পুনরায় কালো গিলাফ নামিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতিবছর ১৫ জিলকদ বা এর এক দিন আগে-পরে কাবার গিলাফের অংশ ওপরে তোলা হয়। এরপর থেকেই হাজিদের ভিড় ও তাওয়াফ শুরু হয়। প্রচণ্ড ভিড়েরর কারণে তখন আর গিলাফ ওপরে তোলা সম্ভব হয় না।

কাবার গিলাফ ওপরে তুলতে বুধবার রাতে নিরাপত্তা কর্মীরা পবিত্র কাবাকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। এ সময় বিশেষ প্রযুক্তিগত দল কিসওয়া ওপরে উঠানোর কাজ করে। ১০টি ক্রেনের সাহায্যে ৩৬ জন কর্মী কাজটি সম্পন্ন করেন।

রীতি অনুযায়ী ৯ জিলহজ পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকবে। এরপর হজের দিন নতুন গিলাফ লাগানো হয়।

;