নিউইয়র্কের ঈদ স্মৃতি, শিক্ষণীয় নানাদিক



ফয়সল আহমদ জালালী, অতিথি লেখক, ইসলাম
নিউইয়র্কে খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, পুরোনো ছবি

নিউইয়র্কে খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, পুরোনো ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

নিউইয়র্ককে বলা হয় বিশ্বের রাজধানী। দুনিয়ার সব জাতি ও গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস এখানে। ভাষার বৈচিত্র্যময় শহর ও এটি। নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এই শহরে জীবনযাপন করেন। যার যার ধর্ম পালন করেন অবাধে। ধর্মীয় আচার-আচরণ পালনে নেই কোনো বিধি-নিষেধ। দিন হোক আর রাত হোক চলাচলে নেই কোনো ভয়-আশংকা। লিঙ্গ বৈষম্যমহীনের দেশ আমেরিকা। নারীরা ও চলছে নিজ নিজ গন্তব্যে একা একা। কেউ কাউকে বিরক্ত করছে না।

আমার প্রথম সফর
২০১৮ সালের কথা। আমার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল রমজান মাসের শেষ দশকে। নিশ্চিত করে বললে ঈদুল ফিতরের ২দিন আগে। নিউইয়র্ক ঈদগাহের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরের দুয়ার খুলে। এই ঈদগাহের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম কাজী কাইয়ুম। এই নামেই তিনি খ্যাত। আমেরিকাজুড়ে মুসলিম কমিউনিটিতে তার বেশ প্রভাব ও খ্যাতি রয়েছে। তীক্ষ্ম প্রতিভার অধিকারী বন্ধুবর মাওলানা আবদুল কাইয়ূম খান। শুধু ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেননি তিনি মুহাম্মাদী সেন্টার নামে জ্যাকসন হাইটসে গড়ে তুলেছেন শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক একটি প্রতিষ্ঠান। নিউইয়র্কে ইন্টারফেইথ, এন্টি টেরোরিজম এওয়ারনেসেও তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।

নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমান বন্দরে দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে ফুলেল অভ্যর্থনা জানান। পরে নিজে গাড়ি চালিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান। সে স্মৃতি কোনোদিন ভুলবার মতো নয়। এ বিষয়ে স্বতন্ত্র একটি প্রবন্ধ লেখব- ইনশাআল্লাহ।

অতিথি ইমাম হিসেবে লেখককে সম্মাননা জানাচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলম্যান, ছবি: সংগৃহীত

‘চাঁদ রাত’ সংস্কৃতি
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসকে বলা হয় মিনি বাংলাদেশ। এখানে প্রচুর বাংলাদেশি বসবাস করেন। ঈদের চাঁদ ওঠার রাতকে ওখানকার মুসলিম সমাজ ‘চাঁদ রাত’ হিসেবে পালন করেন। আমি এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। এশার নামাজের পর বের হয়ে দেখি রাস্তায় প্রচুর নারী ও শিশু। ভিড়ের কারলে ফুটপাতে হাঁটা যাচ্ছে না। এক বাংলাদেশিকে জিজ্ঞেস করলাম, রাস্তায় এত ভিড়ের কারণ কী। তার পাল্টা প্রশ্ন, আপনি এ এলাকায় নতুন এসেছেন? আমি বললাম, শুধু এলাকায় নতুন নয়, আমেরিকাতেই আমি নতুন। মাত্র দু'দিন পূর্বে এসেছি। বলল, আজ চাঁদ রাত। মহিলা ও শিশুরা ঈদের আগের রাতে এখানে রাস্তায় বেরিয়ে এসে আনন্দ করে। হাতে মেহেদী লাগায়। পরিচিতদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে। অনেক রাত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। এটিকে ঈদ উপলক্ষ্যে মেহেদী উৎসবও বলা চলে।

একই সুতোয় বেঁধে ফেলা ঈদ
নিউইয়র্কে রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসলিম সমাজ। এশিয়ান, আমেরিকান, ইউরোপিয়ান ও আফ্রিকান মহাদেশীয় সংস্কৃতির মাঝে তো ভিন্নতা আছেই। এছাড়া বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, মিসর, মরক্কো, গায়ানা, সুদান, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের আচার-আচরণেও রয়েছে ভিন্নতা। রয়েছে ভাষা ও বর্ণের বহু সমীকরণ। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো পালনে গড়ে ওঠা বিভিন্ন চিন্তা-চেতনা ও দর্শনের মানুষ রয়েছে এখানে। যাকে আমরা মাজহাব বলি। আর পশ্চিমা লেখকরা যাকে school of thought বলে আখ্যায়িত করেন।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাইরের কেউ মনে করতে পারেন- মাজহাব নিয়ে বিভক্তি ইসলামের মাঝে উপদলীয় কোন্দল। যা অন্যান্য ধর্মে তীব্রভাবে লক্ষ্য করা হয়। তা মোটেই সত্য নয়। মাজহাব হলো, ইসলামের বিধান পালনে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা। একই ইমামের পেছনে সব মাজহাবের মানুষের নামাজ আদায়ই এর বড় প্রমাণ। ঈদের মাঠে ঈদের নামাজে সবাই এক ও অভিন্ন। নামাজ শেষে সবাই একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করছে। করছে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। নেই তাদের মাঝে কোনো বর্ণ বৈষম্য। দেশ-মহাদেশের নেই কোনো ভেদাভেদ। নিউইয়র্কের ঈদ মনে হয় গোটা বিশ্বকে একই সুতোয় বেঁধে ফেলে। নিউইয়র্ক যেন এক আদমের সন্তানের মিলন ভূমি।

মুসলিম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো কোরবানির অর্ডার গ্রহণ করে, ছবি: সংগৃহীত

মাঠে-ময়দানে ঈদের জামাত
নিউইয়র্কে ঈদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- মাঠে-ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বাদল দিন হলে ভিন্ন কথা। তখন বাধ্য হয়েই মসজিদে ঈদের আয়োজন করা হয়। স্কুল-কলেজের মাঠ ঈদের জামাতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পার্কগুলোও ব্যবহার করা যায়। এমনকি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়ও ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। আমেরিকা নিয়ম-কানুন মেনে চলা দেশ। আইন-কানুনকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছে-তাই করা যাবে না সেখানে। ওখানকার মানুষ আইনের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম-কর্ম পালনে কোনো বাধা-বিপত্তি নেই। আমার দেখামতে ধর্মাচারীকে আমেরিকার সমাজে শ্রদ্ধা করা হয়। সে যেকোনো ধর্মের মানুষ হোক।

কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সব ধরনের উপাসনালয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক মৌখিক নির্দেশে সব খুলে দেওয়া হয়েছে। ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল না হলে এই অজুহাত আরও দীর্ঘ হতো। বন্ধ থাকত মসজিদ, মন্দির, চার্চ ও প্যাগোডা ইত্যাদি।

জনপ্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা
নামাজ শেষে ঈদগাহে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য উপস্থিত হন নিউইয়র্কের জনপ্রতিনিধিরা। এমনকি অন্য ধর্মের গুরুরাও আসেন শুভেচ্ছা জানাতে। অবশ্য সেটি নির্ভর করে আয়োজকদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। নিউইয়র্ক ঈদগাহের প্রতিষ্ঠাতা কাজী কাইয়ুম আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তার প্রতিষ্ঠিত ঈদগাহে যেকোনো জনপ্রতিনিধিকে স্বাগত জানানো হয়। এমনকি ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রদর্শনের জন্য আন্তধর্মীয় নেতাদেরকেও গ্রহণ করা হয়। ২০১৮ সালে আমি প্রথম আমেরিকা যাই। নিউইয়র্ক ঈদগাহ আমাকে ইমাম হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। ঈদের জামাত শেষে জ্যাকসন হাইটস এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান নিজে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা জানান। এমনকি অতিথি ইমাম হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির মনোগ্রাম সম্বলিত প্যাডে তার স্বাক্ষরিত একটি সাইটেশন প্রদান করেন। আমাকে নিয়ে ছবি তুলেন। সেখানকার গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় তা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

অন্যরাও ঈদের দৃশ্য উপভোগ করে
যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এ জন্য দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে এর কোনো তথ্য জানা যায় না। তবে মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছেন প্রচুর। ওপরে বর্ণিত ঈদের জামাতের সমাগম থেকে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। তবে মাঠে-ঘাটে ও পার্কে ঈদের জামাত আয়োজনের দৃশ্য অন্য ধর্মাবলম্বীরা উপভোগ করেন। সুশৃঙ্খল দৃশ্য দেখে অনেকেই পুলকিত হন। অনেকে এগিয়ে এসে অভিনন্দন জানান। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুৎবা শুনেন। জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় নিউইয়র্ক ঈদগাহের কার্যক্রম পালিত হয়। আমার খুৎবা প্রদান শেষে অনেক অমুসলিম এগিয়ে এসে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

কোরবানি নির্দিষ্ট স্থানে আদায়
কোরবানি যত্রতত্র আদায় করার সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি আদায় করতে হয়। সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিজ হাতে সেখানে কোরবানি করার ব্যবস্থা রয়েছে। চামড়া পৃথক করা ও গোশত কাটাকুটি প্রশিক্ষিত মানুষ দিয়ে করতে হয়। মুসলিম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোও কোরবানির অর্ডার গ্রহণ করে। কোরবানির ঈদ আসন্ন হলে বড় বড় সাইনবোর্ড টাঙানো হয় দোকানের সম্মুখে। ভাগে যারা কোরবানি করেন তারা বেশিরভাগ তাদের হাতেই কোরবানির দায়িত্ব অর্পণ করেন। এ জন্য বিশ্বস্ত দোকান মালিক বেছে নিতে হয়। খাসি, ভেড়া বা দুম্বা কোরবানি যারা করেন তারা নির্দিষ্ট স্লটারিং স্থলে হাজির হন।

নিয়মানুবর্তিতা
সবক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলতে আমেরিকানরা অত্যন্ত সচেতন। আগে আসলে আগে পাবেন, উঁচু-নীচু সবাই এই নিয়ম মেনে চলেন। মুদির দোকানেও সুশৃংখলভাবে এই নিয়ম মানা হয়। মূল্য পরিশোধের সময় লাইন বেঁধে ক্রেতারা দাঁড়িয়ে থাকেন। কোরবানির ক্ষেত্রেও এই নিয়ম ভঙ্গ করার প্রশ্নই আসে না। যারা কসাইখানায় পরে যাবেন তাদের পরেই ফিরতে হয়। অনেকের সিরিয়াল পরের দিনও আসতে দেখা যায়, কিচ্ছু করার নেই। ওখানকার মানুষগুলোর স্বভাব হয়ে গেছে নিয়ম মেনে চলার। সিরিয়াল ভঙ্গ করার মানসিকতা কারো হয় না। একান্ত কেউ এর ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা করলে তার কাজ করে দেওয়া হয় না। আমেরিকা শ্রেণি বৈষম্যহীনতার এক মনোরম ভূখণ্ড।

ফয়সল আহমদ জালালী: ভিজিটিং ইমাম, নিউইয়র্ক ঈদগাহ, যুক্তরাষ্ট্র

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;