কলকাতা: রক্তস্মৃতি পেরিয়ে নিরাপদতম শহর



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
কলকাতার প্রাণকেন্দ্র

কলকাতার প্রাণকেন্দ্র

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৪৬ সালের আগস্টে ‘গ্রেট কলকাতা কিলিং’ হয়েছিল যে শহরে, সে শহর ভারতের ‘নিরাপদতম’ শহর এখন। ঔপনিবেশিক ইংরেজরা শহরটিকে ‘দ্বিতীয় লন্ডন’ বানাতে চাইলেও সে শহর হয়ে উঠেছিল রক্ত ও বিভাজনের আঁতুড়ঘর। বাংলা ভাগের সঙ্গে মিশে আছে এই শহরের দাঙ্গা, হাঙ্গামা, সাম্প্রদায়িক বিভেদের ইতিহাস। সেইসব রক্তস্মৃতি এবং পরবর্তীতে দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালোরের রোমহর্ষক ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার বাতাবরণ তৈরি করেছে কলকাতা। একবার নয়, পরপর দুইবছর ভারতের নিরাপদতম শহরের শীর্ষে স্থান পেলো কলকাতা।

অপরাধের নিরিখে ভারতের ১৯টি মেট্রো শহরের মধ্যে ‘নিরাপদতম’ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতা। ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) প্রণীত রিপোর্টে বলা হয়েছে, অপরাধ-সহ মহিলাদের বিরুদ্ধে নানান অপমানজনক ঘটনায় সবচেয়ে নিরাপদ কলকাতা।

এনসিআরবি গত এক বছরের অপরাধের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া, ২০২০’ শীর্ষক সেই ভলিউমে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে প্রত্যেক লাখ জনসংখ্যায় কলকাতায় মোট অপরাধের হার ১২৯.৫। যেখানে চেন্নাইয়ে অপরাধের হার সবচেয়ে বেশি ১৯৩৭.১। দিল্লিতে ১৬০৮.৬, আহমেদাবাদে ১৩০০, বেঙ্গালোরে ৪০১.৯ এবং মুম্বইয়ে ৩১৮.৬।

গত দু’বছরের তুলনায় সামগ্রিক ভাবে নথিভুক্ত অপরাধের সংখ্যাও কমেছে কলকাতায়। ২০১৮ সালে কলকাতায় অপরাধের সংখ্যা ছিল ১৯,৬৮২। ২০১৯-এ সেই সংখ্যা কমে হয়েছিল ১৭,৩২৪। তার পর ২০২০ সালে শহরে মোট অপরাধের সংখ্যা আরও কমে হয়েছে ১৫,৫১৭।

পরিসংখ্যান আরও বলছে, মেয়েদের বিরুদ্ধে হওয়া নারীঘটিত অপরাধের সংখ্যাতেও দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালোর থেকে অন্যতম নিরাপদ কলকাতা শহর। গত এক বছরে কলকাতায় মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা ২,০০১। দেশের রাজধানী দিল্লিতে ৯,৭৮২। প্রসঙ্গত, দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে। ধর্ষণ এবং পণ না দেওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাতেও দিল্লি, বেঙ্গালোর এবং মুম্বইয়ের থেকে পিছিয়ে রয়েছে কলকাতা। ফলে সর্বভারতীয় স্তরে কলকাতার গৌরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজকে আরও উজ্জ্বল করবে এবং জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর ক্রমউত্থানকেও মসৃণ করবে।

তবে, অবিভক্ত বাংলার মানুষের প্রাচীন স্মৃতির শহর কলকাতা একালের প্রজন্মের কাছেও পছন্দের। কলকাতার ব্যবসা, পর্যটন, স্বাস্থ্যখাত বহুলাংশে নির্ভরশীল বাংলাদেশিদের ওপর। মধ্য কলকাতার নিউমার্কেট, তালতলা, ধর্মতলায় গেলেই বাংলাদেশি পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি চাক্ষুষ দেখা যায়। আরও দেখা যায় পুরনো শহরের নস্টালজিক আভা।

প্রায়ই কলকাতা গেলে এসপ্ল্যানেড রো ইস্ট থেকে আনমনে হাঁটা শুরু করি আমি। এখন রাস্তাটি সিধু কানহু ডহর নামে পরিচিত। তারপর চলে যাই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। পুরোনো কলকাতার অভিজাত এলাকা। একের পর এক প্রখ্যাত বাঙালি পরিবার এখানে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছিলেন একদা। বেশিরভাগ প্রাসাদ আজও দেখতে পাওয়া যায়। এসপ্ল্যানেড রো জুড়ে ব্রিটিশরা তৈরি করেন রাজকীয় সব অফিস ভবন। যার মধ্যে কয়েকটি ভারত সরকার অধিগ্রহণ করে নিয়েছে।

অফিসগুলোর পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে ডেকার্স লেন, যা কলকাতার স্ট্রিট ফুডের স্বর্গরাজ্য। ১৭৭৩ সালের দিকে কলকাতার কালেক্টর এবং ১৭৭৭ থেকে ৮৪ পর্যন্ত বোর্ড অফ ট্রেডের সভাপতি ছিলেন ফিলিপ ডেকার্স। তাঁর নামেই রাস্তা। রাস্তাটির নাম পালটে এখন জন অগাস্টাস হিকির নামে রাখা হয়েছে। ১৭৮০ সালে যিনি ‘হিকি’স গেজেট’ প্রকাশ শুরু করেন। সম্ভবত ভারতের প্রথম মুদ্রিত খবরের কাগজ সেটি।

এসপ্ল্যানেডে জংশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক পুরোনো ও আইকনিক স্থাপত্য 'টিপু সুলতান মসজিদ', যা গড়ে তোলেন মহীশূরের শাসক টিপু সুলতানের ছোট ছেলে প্রিন্স গোলাম মুহম্মদ শাহ। দক্ষিণ ভারত থেকে তাঁদের পরিবার কলকাতায় চলে আসে ১৮০৬ সালের পর। মসজিদ নির্মাণ সম্পূর্ণ হয় ১৮৪২ সালে। মাঝারি আকারের ধর্মীয় স্থান। চারদিকে ঘিরে আছে খাবারের স্টল এবং স্টেশনারি দোকান। ভালো করে দেখলে চোখে পড়বে মসজিদের উঠোনে একটি মার্বেল ফলক। লেখা আছে, ১৮৭৫ সালে প্রিন্স অফ ওয়েলসের কলকাতা আগমন উপলক্ষে এই মঞ্চ তৈরি করেন ঢাকার নবাব আসানুল্লাহ খান।

মসজিদের ঠিক উল্টোদিকে লেনিন সরণিতে রয়েছে চার্চ অফ দ্য সেক্রেড হার্ট। ঠিক কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, জানা যায় না। তবে প্রবেশদ্বারের কাছে থাকা দুটি স্মৃতিফলক দেখে অনুমান করা হয়, ১৮৫০-এর দশকে গড়ে উঠেছিল। ভিতরের দৃশ্য খুবই সুন্দর। মুগ্ধ করবে রঙিন কাচের জানলা এবং থামের কারুকার্য।

এসপ্ল্যানেড ক্রসিং থেকে ডানদিকে ঘুরলেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। প্রথমেই চোখে পড়বে স্টেটসম্যান হাউজ – কলকাতার সবচেয়ে পুরোনো সংবাদপত্রের অফিস। যদিও এখন সেই গরিমা আর নেই। তা সত্ত্বেও বলা যেতে পারে, তিলোত্তমার সঙ্গেই বেড়ে উঠেছে স্টেটসম্যানের ইতিহাস। বাড়িটির মেরামত হয়নি অনেকদিন। বিশাল ব্যালকনি, বড়ো বড়ো থাম এবং মোহময় খিলান দেখে পুরোনো দিনের মর্যাদা অনুমান করা যায়। কলকাতার ভূতুড়ে বাড়িগুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম।

উল্টোদিকে রয়েছে ভিক্টোরিয়া হাউজ। বর্তমানে সিইএসসি হাউজ, ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই করপোরেশনের দফতর। সিইএসসি-র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ইংল্যান্ডে ১৮৯৬ সালে, যা কলকাতা ছাড়াও আশেপাশের অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এখন। দানবীয় বাড়িটার ছাদের ওপরে থাকা গ্লোবে রাত্রিবেলা আলো জ্বলে। দূর থেকে দেখা যায়।

কলকাতার এসব এলাকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে নানা দিকে পথ চলে গেছে। উত্তরে বড়বাজার, চিৎপুর, কলেজ স্ট্রিট, শোভাবাজার, জোড়াসাঁকো, হাতিবাগান, বাগবাজার, শ্যামবাজার হয়ে বিটি রোড ধরে আরও উত্তরে সিঁথি, ডানলপ, কামারহাটি, বেলঘড়িয়া, খড়দহ, ব্যারাকপুর।

দক্ষিণে ময়দান পেরিয়ে ভবানীপুর, কালিঘাট, টালিগঞ্জ, আলীপুর, বেহালা, গড়িয়া হয়ে আরও দক্ষিণে বারুইপুর।

পূর্বের পথ রাজাবাজার, কাঁকরগাছি, ফুলবাগান, শিয়ালদহ, পার্ক সার্কাস, তিলজলা, বেলেঘাটা, তপসিয়া হয়ে বাগুইআটি, নিউটাউন, সল্টলেক। পশ্চিমের পথ হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে নদীর ওপারে বহুদূর।

কলকাতার সড়ক, পাড়া, মহল্লা, কেন্দ্রস্থল ও প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের বহু আখ্যান। শতাব্দী প্রাচীন এমনই বহু সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উত্থান-পতন পেরিয়ে নিরাপদতম শহরে উত্তীর্ণ হয়ে শুধু ভারত নয়, সমগ্র উপমহাদেশের মধ্যেই একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কলকাতা।

   

নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক/বার্তা২৪.কম

নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক/বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease
 
ছায়ানট (কলকাতা) নজরুল চর্চায় নিবেদিত অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। সভাপতি শিল্পী সোমঋতা মল্লিকের নেতৃত্বে শুধু ভারত বা বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে ছায়ানট।
 
নজরুল জীবন ও সাহিত্যকর্মের নিরিখে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি ছায়ানট প্রকাশ করেছে নতুনের গান, জীবনীভিত্তিক ক্যালেন্ডার ও বর্ণময় প্রকাশনা। গবেষণা করছে নজরুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ।
 
কলকাতায় নজরুল স্মৃতিধন্য জনপদ ও স্থাপনাসমূহকে ধ্বংস, দখল ও অবলুপ্তির কবল থেকে রক্ষা করার কৃতিত্ব ছায়ানটের। সেসব স্থানে তথ্য ফলক দিয়ে সংরক্ষণের আওতায় এনেছে সংগঠনটি।
 
নজরুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে আলীপুর জেল কিংবা রাঁচি মানসিক হাসপাতাল ছিল তাৎপর্যবাহী। ছায়ানট সেসব স্থানে নজরুল কর্নাল ও তথ্যফলক দিয়ে নজরুলের সংগ্রামমুখর জীবনের ঐতিহাসিক পরম্পরাকে সজিব রেখেছে।
 
নজরুলচর্চায় নিবেদিত ছায়ানট (কলকাতা) - এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক স্বীকৃতি পেয়েছেন কলকাতার 'অন্বেষণ পরিবার' নামক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য সংগঠন কর্তৃক। তাকে এ উপলক্ষে সম্মান প্রদান করেন সংগঠনের শ্রী অমিতাভ। 
 
বার্তা২৪.কম'কে শিল্পী সোমঋতা মল্লিক বলেন, 'যেকোনো সম্মাননা কাজের প্রণোদনা আরো বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বময় নজরুল চর্চা এগিয়ে চলুক, এই প্রত্যাশায় আমি ও ছায়ানট কাজ করে যাবে।'
 
;

কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'

কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ৪ এবং ৫ এপ্রিল রবীন্দ্র সদন চত্বরে অবনীন্দ্র সভাগৃহে ছায়ানট (কলকাতা) - এর উদ্যোগে 'নজরুল কবিতা উৎসব ২০২৪' অনুষ্ঠিত হয়। দু দিনে শতাধিক শিল্পী একক/দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিকেল ৫টা-রাত্রি ৯টা অনুষ্ঠিত হয় এই কবিতা উৎসব।

পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক। নজরুল কবিতা উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি এবং পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি
মাননীয় সুবোধ সরকার। ৪ এপ্রিল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ কামাল উদ্দীন, অধ্যক্ষ- হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয় ও সভাপতি- নজরুল চর্চা কেন্দ্র। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল 'বাংলা সাহিত্যে অভিনবত্বের দিশারী নজরুল'। ৫ এপ্রিল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম (ডি. লিট.), বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ, কলকাতা'। কাজী নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণার অনেকখানি অবকাশ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম।

একক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ঊর্মিলা সেন, অতসী নন্দ গোস্বামী, বর্ণালী সরকার, পীতম ভট্টাচার্য, শম্পা দাস,
তাপস চৌধুরী, সুদীপ্ত রায়, শম্পা বটব্যাল, শুভদীপ চক্রবর্তী, নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবযানী বিশ্বাস, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, শাশ্বতী ঘোষ, দেবলীনা চৌধুরী, সৌমিতা নস্কর, মিতালী ভট্টাচার্য্য, সুকন্যা রায়, তৃষিতা সাহা, এরিসা কামিলা, ইনশ্রী নাথ, শতাক্ষী নাথ, সোনালী চট্টোপাধ্যায়, মোনামি সামন্ত, দোয়েল চ্যাটার্জী, চিত্রা সোম বাসু, গোপা ভট্টাচার্য্য রায়, ইন্দ্রাণী নাগ, ডক্টর সৌমিত্র নারায়ণ শূর, মিতালী মুখার্জী, দীপ্তি বর্মন, অন্বেষা মুখার্জী, রাকা দাস, দেবলীনা দাশগুপ্ত, শর্মিলা মাজী, মোনালিসা শীল, অপর্না চক্রবর্তী, দীপিকা গোস্বামী, পাপিয়া ভট্টাচার্য, সৃজিতা ঘোষ, শাশ্বতী বাগচী, প্রাযুক্তা চক্রবর্তী, জয়িতা দত্ত এবং রুনা মুখার্জি।

দলীয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ছায়ানট (কলকাতা), আন্তরিক, বরানগর প্রতিশ্রুতি, নৈহাটি বঙ্কিম স্মৃতি সংঘ, আরশি হরিণঘাটা, প্রেরণা আবৃত্তি অনুশীলন কেন্দ্র, আমরা অ আ ক খ স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ, অন্বেষণ, কাব্যপথিক, শ্রুতিবৃত্ত, আবৃত্তিওয়ালা, শৃণ্বন্তু, বৈখরী, পাঠশালা, অনন্ত উড়ান, অনুরণন, চেতনা, শ্রুতিকথন, যাদবপুর কথাছন্দ এবং প্রতিধ্বনি - এর শিল্পীবৃন্দ।

সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সোমা মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা মল্লিক, দেবলীনা চৌধুরী এবং রাকা দাস।

ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বলেন, "এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আমরা 'নজরুল কবিতা উৎসব' - এর আয়োজন করলাম। আমাদের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি নিয়ে ২ দিন ব্যাপী এই বিশেষ আয়োজনে বাচিকশিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা আপ্লুত।
অনেক বাচিক শিল্পীকে আমরা সুযোগ দিতে পারিনি, আমরা সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী, আগামী বছর আরও বেশীদিন ধরে এই আয়োজন করার চেষ্টা করব। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা জনপ্রিয় কবিতার পাশাপাশি বেশ কিছু স্বল্পশ্রুত কবিতা আমরা শুনতে পেলাম এই কবিতা উৎসবে - এখানেই আয়োজনের সার্থকতা।"

;

বয়সের ভারে শীর্ণ, তবু আজ ও ছুটেছে ১৫১ বছরের ট্রাম



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

  • Font increase
  • Font Decrease

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে সবকিছু। হয়েছে বিবর্তন। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নুতনকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। পুরনো যা কিছু এখন দেখা যায় জাদুঘরে কিংবা কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহে। একইভাবে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে বদলেছে এক সময়ের ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা । সময়ের পরিবর্তনে এখন যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান শহর।

অন্য আর পাঁচটা শহরের মত গতি পেয়েছে কল্লোলিনী কলকাতা। তবে ১৫১ বছর আগের কলকাতার একটা খন্ডচিত্রের অংশ ট্রাম এখনও দিব্যি চলছে কলকাতার বুকে । গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল কলকাতার ট্রামের জন্মদিন । ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে প্রথমবার শুরু রাস্তা দিয়ে চলে ঘোড়ায় টানা কাঠের ট্রাম।

শিয়ালদা থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রথমবার ছুটেছিল সেই ট্রাম। এই বছর কলকাতার সেই ট্রাম যাত্রা পা রাখতে চলেছে একশো একান্ন বছরে ৷ তবে প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রামেরও বিবর্তন হয়েছে। ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ ধর্মতলা খিদিরপুর-রুটে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলেছিল।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ভারতে কলকাতা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি শহরে একসময় চলত ট্রাম ৷ কলকাতার পর তৎকালীন মাদ্রাজ, দিল্লি, বোম্বে, কানপুর, ভাভনগর, নাসিক এবং পাটনাতেও শুরু হয়েছিল ট্রাম পরিষেবা। এমনকী ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় করাচি এবং কলম্বোতেও ছিল ট্রাম পরিষেবা। তবে সেগুলি সবই পরে বন্ধ হয়ে যায়। কল্লোলিনী কলকাতার জীর্ণকায়ে ট্রাম কোনওমতে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজের অস্তিত্ব।

একসময় রমরম করে স্বমহিমায় শহরের বুক চিঁড়ে ঘণ্টির শব্দ করে দৌঁড়ে যেত ট্রাম ৷ সেই দৃশ্য এখন বড়ই বিরল । ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকেছে ট্রামের ভবিষৎ । তাই বোধহয় ট্রামের ১৫১ বছর নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ একেবারেই নেই । তবে শহরের ট্রামপ্রেমী সংগঠন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ও ট্রাম যাত্রা বলে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই উপলক্ষ্যে এক বিশেষ উদ্যোগ নেয়।

কলকাতায় ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের ট্রাম নেটওয়ার্ক তুলনায় অনেকটাই অন্যরকম। শতাব্দী প্রাচীন এই ট্রামগুলি এখনও পরিষেবা দিয়ে চলেছে । সাধারণ মানুষের মতে শুধুমাত্র ট্রামকে উন্নত করলেই চলবে না। ট্রাম এবং অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা যাতে একে অপরের সমস্যা সৃষ্টি না-করে পরিষেবা দিতে পারে সেইভাবে পরিকল্পনা করতে হবে ।

ট্রামের তার দেখিয়ে মহানগর কলকাতার পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু কলকাতার পরিচয় বহনকারী সেই ট্রাম এখন যেন ‘ফেয়ারওয়েল’ পাওয়ার অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার।

;

হুগলির কোন্নগরে অনাদরে ভাষাশহিদ শফিউরের জন্মভিটা!



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি’ ১৯৫২ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরের একদল দামাল ছেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে বর্বর পাকিস্তানি পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। রক্তে ভেসে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সেইদিন স্মরণে ১৯৯৯ সালের ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ এই দিনটিকে 'ভাষা দিবস' হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

সেদিনের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের যে বীর শহিদেরা মাতৃভাষার সম্মানার্থে প্রাণ দিয়েছিলেরন, তাদের মধ্যে ছিলেন রফিক, জব্বার , শফিউর, সালাম, বরকতের মতোন যুবক। তাদের মধ্যে শফিউর রহমান ছিলেন ওপার বাংলার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের কাছে জিটি রোডের ওপর এখনো তাদের বাড়িটি শহিদের জন্মভূমি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অবহেলায় ও অনাদরে!

অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় একজন ভাষাশহিদের জন্মভিটা আজ ধ্বংসের মুখে। ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এই মহান ভাষাশহিদের জন্ম হয় কোন্নগরে। শফিউর রহমানের বাবা ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। কোন্নগর হাইস্কুলে পড়া শেষ করে কলকাতা গভর্মেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আইএসসি পাস করার পর ১৯৪৮ সালের শফিউররা সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা হাইকোর্টে কেরানির পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন শফিউরও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রফিক, জব্বার,সালাম, বরকত, শফিউরসহ হাজারও ভাষাপ্রেমী মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেদিনের সেই বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা শহরের মানুষ শামিল হয়েছিলেন। ক্ষিপ্ত পাকিস্তানি পুলিশ সেই বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দামাল ছেলেদের দেহ মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেদিন প্রভাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা রক্তের নদীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তাতেও দমেনি বিক্ষোভ সংগ্রাম। তাদের সেই মরণপণ সংগ্রাম আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছিল। অবশেষে, ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকেই এপার ওপার দুই বাংলা মিলিয়ে এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। কিন্তু সব থেকে বড় আক্ষেপের বিষয়, সেদিনের সেই মরণপণ সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা শফিউর রহমান যার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে, তাঁর সেই জন্মভিটাটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অনাদর ও অবহেলায়।

সম্প্রতি, যখন পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় দেশপ্রেমী মনীষীদের স্মরণে রাখতে তাঁদের জন্মভূমি এবং কর্মক্ষেত্রগুলি সরকার স্বীকৃতি দিয়ে তীর্থস্থানে পরিণত করেছে, কিন্তু সেই ১৯৫২ সালে ঢাকার মাটিতে শহিদ হওয়া সফিউর রহমানের কথা আজ আর কেউ আর মনে রাখেননি। যে বিদ্যালয়ে শফিউর পড়াশোনা করেছেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে সেই কোন্নগর হাইস্কুলের একপাশে জিটি রোডের ধারে ছোট্ট একটি শহিদ বেদি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই প্রতিবছর গুটিকয়েক মানুষ যারা শফিউর রহমানকে চেনেন, ভাষা আন্দোলনের বীরগাথার কথা জানেন, তারা ’২১-এর সকালে কয়েক মুঠো ফুল দিয়ে শহিদবেদিতে তর্পণ করেন।

কোন্নগরবাসীর অত্যন্ত আক্ষেপ, এই শহরে এত বড় একজন ভাষা শহিদ জন্ম নিয়েছিলেন, শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে এখানকার কোন্নগর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, তাঁর কথা আজ আর কেউই মনে রাখেননি। স্থানীয়দের দাবি, শফিউরের বাড়িটি অন্তত সংরক্ষণ করা হোক অথবা তাঁর স্মরণে এই শহরে যদি একটি মিনার তৈরি করা হয়, তাহলে ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে আপামর বাঙালি সেই গৌরবের অংশীদার হতে পারবেন। সেইসঙ্গে অমরত্ব পাবে ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসও!

;