অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ মাসে গ্রেফতার হলেন যারা

  • মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ মাসে গ্রেফতার হলেন যারা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ মাসে গ্রেফতার হলেন যারা

ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। চারবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।

এরপর জনরোষের ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতা-পাতিনেতারা। জীবন বাঁচাতে কেউ কেউ আশ্রয় নেন সেনানিবাসে। সারাদেশে তাদের বিরুদ্ধে একে একে হতে থাকে হত্যা মামলা। এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি মামলা করা হয়েছে শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেই। এর মধ্যে হত্যা, গণহত্যা এবং অপহরণের মতো মামলাও রয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অগণিত।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর সারাদেশে সাড়ে ৪শ’র বেশি থানায় হামলা হয়। আওয়ামী সরকারের হয়ে কাজ করা পুলিশ সদস্যও অনেকে আত্মগোপন করেন।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতা-পাতিনেতাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এক সপ্তাহ সরাসরি কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

১৮ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারক, সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬শ ২৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৫শ ১৫ জনই পুলিশের সদস্য, যাদের মধ্যে ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট দেশত্যাগের চেষ্টা করেন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ৬ আগস্ট দুপুরে তাকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। একইদিনে তার কিছুক্ষণ পরই বিমানবন্দর দিয়ে পালাতে গিয়ে আটক হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়। পরবর্তীতে পলককে আদালতে নেওয়া হলেও হাছান মাহমুদের বিষয়ে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

১৩ আগস্ট: নৌপথে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

১৪ আগস্ট: খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেফতার দেখানো হয় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে।

১৬ আগস্ট: ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসির) সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার দেখায় গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এর আগে, ৭ আগস্ট ভোররাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে বোর্ডিং ব্রিজে ফিরিয়ে আনার পর তাকে আটক করা হয়।

১৭ আগস্ট: ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাচনি বোর্ডের অন্যতম সদস্য সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনকে আটক করা হয়। সদর উপজেলার রুহিয়ার কশালগাঁওয়ের নিজ গ্রাম থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।

১৯ আগস্ট: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিকে রাজধানীর বারিধারা এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

২০ আগস্ট: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেনকে রাজধানীর রামপুরা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকে রাজধানীর বনশ্রী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েলকে বনানি থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিনে গ্রেফতার হন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২১ আগস্ট: একাত্তর টেলিভিশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রুপাকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়ে। শাকিল ও ফারজানা স্বামী-স্ত্রী। টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে করে ইস্তাম্বুল হয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দর থেকে তারা আটক হন।

২২ আগস্ট: রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২৩ আগস্ট: আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজকে রাজধানীর বনানি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি পটুয়াখালীর বাউফল আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

২৪ আগস্ট: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ‘ভারতে যাওয়ার প্রাক্কালে’ সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক হন তিনি।

২৫ আগস্ট: আওয়ামী লীগ সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঢাকার শান্তিনগরের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে নারায়ণগঞ্জের একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়।

২৬ আগস্ট: রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রধান হাসানুল হক ইনুকে গ্রেফতার করা হয়।

২৮ আগস্ট: সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে ২৮ আগস্ট মধ্যরাতে রাজধানীর গুলশানের এক বাসা থেকে আটক করে র‍্যাব।

২ সেপ্টেম্বর: রাজধানীর বংশালের এক বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয় ঢাকা লালবাগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে। ৩ সেপ্টেম্বর তাকে আদালতে হাজির করে এক হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। কিন্তু তিনি গুরুতর অসুস্থ ও বাকরুদ্ধ হওয়ায় ২ দিন রিমান্ড শেষে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।

৩ সেপ্টেম্বর: ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

৪ সেপ্টেম্বর: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও এ কে এম শহীদুল হককে গ্রেফতার করা হয়। সেনা হেফাজতে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করায় তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

এছাড়া সাবেক আইজিপি শহীদুল হককে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফিকেও এদিন গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়াও সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। গ্রেফতারদের অধিকাংশই বিভিন্ন হত্যা মামলায় রিমান্ডে আছেন। আবার কাউকে কাউকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশের বেশিরভাগ জেলাতেই আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।