কয়লায় পোড়ানো শিক কাবাব
কয়লার আগুনে পুড়ে তৈরি করা শিক কাবাব মন কেড়েছে ভোজন বিলাসীদের। শিক কাবাব খেতে প্রতিদিনই বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় ভিড় বাড়ছে। সন্ধ্যা নামতেই শহরে প্রবেশ করলেই নাকে আসবে ভাজা মাংসের সুগন্ধ। সাতমাথায় জিলা স্কুলের প্রাচীর সংলগ্ন রাস্তার পাশ দিয়ে বসে কাবাবের সারিসারি দোকান।
কাবাবের জন্য মাংস প্রস্তুত করে শিকে ভরানো হয়। এরপর তা চুলায় বসিয়ে বাতাস দেওয়া হয়। চুলা থেকে আগুনের লাল শিখা বের হতে থাকে। সৃষ্টি হয় হালকা ধোঁয়ার। এভাবে আগুনে পুড়তে থাকে মাংস। কিছু সময় পর শিকগুলো চুলা থেকে নামানো হয়। এরপর তাতে রকমারি মসলা ছিটিয়ে তা ক্রেতার হাতে তুলে দেন দোকানিরা।
এছাড়া আগুনে পুড়িয়ে তেলে ভাজা হচ্ছে চাপ ও কাবাব। সঙ্গে রয়েছে পুরি। এসব খাবারের সুবাস চারিদিকে ছড়াচ্ছে। খাওয়ার আগে দেখেই জিভে জল এনে দেয় এসব খাবার।
প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু হয় বেচা-বিক্রির প্রস্তুতি। রাস্তার পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দোকানগুলো বসানো হয়। সামনে দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয় বসার চেয়ার।চাপ ও কাবাব বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারিগররা। ক্রেতার অর্ডার পূরণে কর্মচারীরা এপাশ থেকে ওপাশে ছোটাছুটি করছেন। কর্মযজ্ঞ চলে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত।
কথা হয় চাপ ও কাবাব খেতে আসা জেসমিন, শিলা, হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেন, সন্ধ্যায় সাতমাথায় প্রবেশ করলেই কয়লায় পোড়া শিকের গন্ধে লোভ সামলানো কঠিন। এখানে শুধু শিক কাবাব নয়, পাওয়া যায় ফুচকা, চটপটি, লটপটি, রোল, প্যাটিস, সমুচাসহ নানান ধরনের বাহারি খাবার।যা স্ট্রিটফোড নামে পরিচিত।
এখানে স্ট্রিট ফুডের এমন আয়োজন গড়ে উঠতে অনেকটা সময় লেগেছে। অনেক আগে পোস্ট অফিসের সামনে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ভ্রাম্যমাণ চা দোকানি প্রফুল্ল চন্দ্র দাস, তারপর নিকুঞ্জ কুমার কিশোর বয়সে চায়ের দোকান বসিয়ে বিক্রিবাট্টা শুরু করেন। এ চায়ের দোকান এতটাই জনপ্রিয় যে, কৃষ্ণচূড়া চত্বরের সঙ্গে নিকুঞ্জের চা দোকান যুক্ত হয়েছে। কাউকে খুঁজে পেতে কেউ কাব্য করে বলেন, কৃষ্ণচূড়ার তলে আসবেন, দেখা হবে, কথা হবে, চা আড্ডা হবে। এভাবে দিন দিন শহরে এর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
চাপ ব্যবসায়ী আলম জানান, প্রায় দশ বছর ধরে চাপ তৈরির ব্যবসা করে আসছেন। শুরু থেকেই তিনি গরুর মাংসের চাপ, চিকেন ফ্রাই ও পুরি তৈরি করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আইটেমের সালাদ থাকে।
মতিন নামের এক ব্যবসায়ী জানান, এ শহরে প্রায় শতাধিক কাবাব ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রত্যেকেই গড়ে ১০-১২ কেজি গরুর মাংসের কাবাব বিক্রি করেন।
প্রতি শিক কাবাব ১৫ টাকা ও পুরি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়, সুস্বাদু এই শিক কাবাব খুব পছন্দ করেন ভোজনরসিকরা বলেও জানান এসব ব্যবসায়ীরা।