ফুটানো পানি পুনরায় ফুটাবেন না যে কারণে
পান করার জন্য পানি থেকে জীবাণু ও ক্ষতিকর উপাদান দূর করার সবচেয়ে ভালো ও প্রচলিত উপায় হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে ফুটানো। পান করার জন্য তো বটেই, রান্না ও পানীয় তৈরির জন্যেও ফুটানো পানিতেই ভরসা খুঁজতে হয়। কিন্তু অনেকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় নিয়ে পানি ফুটান এবং ফুটানো পানি পুনরায় ফুটিয়ে থাকেন। কখনো কী ভেবেছেন, এই কাজটি সঠিক নাকি বিপদজনক!
বিশেষজ্ঞদের মতে পানি অতিরিক্ত ফুটানো ও পুনরায় ফুটানো- উভয়ই ক্ষতিকর। পানি যত বেশি ফুটানো হয়, তা ঘন হতে থাকে। এতে করে পানিতে দ্রবণীয় প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ ভেঙে যায়, ক্ষতিকর উপাদান বৃদ্ধি পায় এবং বেড়ে যায় এতে দ্রবণীয় লবণের হার।
ভারতের সিএইচডি সিটি হসপিটাল জানাচ্ছে কেন পানি অতিরিক্ত সময় ফুটানো ও পুনরায় ফুটানো ক্ষতির কারণ হতে পারে।
নিউট্রেটস
পানিতে দ্রবণীয় নাইট্রেট খুব একটা ক্ষতিকর নয়। তবে পানি পুনরায় বা বেশি ফুটানো হলে, এতে থাকা একই পরিমাণ নাইট্রেট টক্সিন পদার্থ নাইট্রোস্যামিনে (Nitrosamine) পরিণত হয়। এই পদার্থটি ক্যানসার ও লিউকোমিয়া তৈরির জন্য দায়ী এবং শরীরে নিয়মিত নাইট্রোস্যামিন প্রবেশে দেখা দিতে পারে অন্যান্য রোগের প্রকোপও।
ফ্লোরাইড
পানি অতিরিক্ত সময় ধরে ফুটানো হলে বা পুনরায় ফোটানো হলে এতে উপস্থির ফ্লোরাইডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে বিপদসীমার বাইরে। পানিতে দ্রবণীয় ফ্লোরাইড হাড়ের ডিসঅর্ডার তৈরি করে, যার ফলে সহজেই হাড়ে ফ্র্যাকচার হওয়া, ঘনঘন হাড়ে ব্যথাভাব দেখা দেওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়। সেই সাথে আট বছরের কম শিশুদের শরীরে পানির সাথে ফ্লোরাইড প্রবেশে হাড়ের সাথে দাঁতেরও ক্ষতি হতে পারে।
আর্সেনিক
পানি পুনরায় ফুটানো হলে এতে দ্রবণীয় আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। পানিতে থাকা স্বল্প পরিমাণ আর্সেনিকের উপস্থিতি ক্ষতিকর না হলেও, উচ্চমাত্রার আর্সেনিক ক্যানসার, বন্ধ্যাত্ব, চর্মরোগ, হৃদরোগসহ মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। নিজ নিজ এলাকার পানির আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষা করে রাখা জরুরি।
ক্যালসিয়াম
দাঁত ও হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজনীয় হলেও, পানি পুনরায় ফুটানো হলে এতে দ্রবণীয় ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় অনেক বেশি। যা গ্রহণে কিডনি ও গলব্লাডারের পাথরের সমস্যা তৈরি করে।
বদলে যায় পানির রসায়ন
একবার ফুটানোর পর পুনরায় ফুটানো হলে পানিতে দ্রবণীয় গ্যাস ও উদ্বায়ী যৌগের মাত্রা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা এর মাত্রা বেড়ে-কমে যেতে পারে। এতে শুধু পানির স্বাদই বদলে যায় না, বদলে যায় পানির সাধারণ ঘনত্ব, রসায়ন ও দেখা দেয় পানির সমস্যা।