মেহেরপুরে আউশে সুদিন

  • মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আউশ ধান। ছবি: বার্তা২৪.কম

আউশ ধান। ছবি: বার্তা২৪.কম

মেহেরপুর: খাদ্য নিরাপত্তা ও কম উৎপাদন খরচে মেহেরপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে আউশ ধান আবাদ। বৃষ্টির পানি কাজে লাগিয়ে মাত্র ৯০ দিনে অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হচ্ছে সারা দেশে। আউশ কেটে আমন ধান আবাদ করতে পারছে কৃষকরা। ফলে আউশ ধান চাষ নিয়ে আনন্দিত তারা।

জানা গেছে, এপ্রিল-মে মাসের শেষের দিকে বোরো ধান কাটার পর কৃষকরা আউশ ধান আবাদ করেছে। যদিও কয়েক বছর আগে বোরো ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ ক্ষেত পড়ে থাকতে দেখা যেত। গেল কয়েক বছর ধরে মেহেরপুর জেলায় ব্যাপক ভাবেই আউশ ধান আবাদ হচ্ছে। বিশেষ করে ব্রি-ধান-৪৮ আউশ মৌসুমের জন্য উচ্চ ফলনশীল ধান। যা আমন ও বোরো মৌসুমের চেয়ে কম খরচেই চাষ সম্পন্ন হয়। তাছাড়া কৃষি পরিবারে বোরো ধান শেষ হয়ে যায় শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের দিকে। এ সময়ে কৃষকের গোলায় জমছে আউশ ধান। এতে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আউশ ধান আবাদ হয়েছে। প্রায় এক মাস আগে থেকেই কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আউশ ধান কেটে আমন ধান রোপণ কিংবা আগাম সবজি চাষ করেছে কৃষকরা। এখন যে ক্ষেত থেকে ধান কাটা হচ্ছে, সেখানে শীতকালীন সবজি চাষ করা হবে।

বানিয়াপুকুর গ্রামের কৃষক মিকাইল হোসেন জানান, এবারই প্রথম তিনি তিন বিঘা জমিতে ব্রি-ধান-৪৮ চাষ করেছেন। তিন বিঘায় গড় ফলন পেয়েছেন প্রায় ৪৫ মণের উপরে। বোরো ধান কাটার পর থেকে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে সেচের পানি তেমন একটা প্রয়োজন পড়েনি।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/02/1535889720710.jpg

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সূত্রে জানা গেছে, রোপা আউশ মৌসুমের জন্য ২০০৮ সালে `ব্রি উদ্ভাবিত‘ ব্রি-ধান ৪৮ জাতটি অনুমোদন দেয় জাতীয় বীজ বোর্ড। অধিক ফলনশীল, মাঝারি মোটা আকারের প্রোটিন সমৃদ্ধ জাতটি রোপণের ৯০ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টরে ৫ টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে। আরও উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে ব্রি-ধান-৮২, ব্রি-ধান-৮৩ ও ব্রি-ধান-৮৫ নামে গত বছর তিনটি জাতের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। এছাড়াও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বিনা ধান ১৯ চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন প্রদশর্নী ক্ষেতে আবাদ হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, তারা কাঁচা ধান ৬০০ টাকা এবং শুকনা সাড়ে ৭শ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আউশ ধানের উৎপাদন বাড়াতে সরকার যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছেন। চলতি মৌসুমে সারা দেশের প্রায় আড়াই লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ৪০ কোটি টাকার বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদান করা হয়েছে। প্রণোদনার ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় উফশী আউশ ও নেরিকা আউশ আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, `একেবারেই অল্প সময়ে কম খরচে ধান পাওয়ার জন্য আউশ আবাদ উত্তম। বোরো ও আমনের মধ্যবর্তী সময়ে আরেকটি ধান প্রাপ্তির জন্য আমরা কৃষকদেরকে আউশ ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করছি।‘