কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের অভ্যন্তরে স্থাপিত কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে একদিনেই আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে সাতজন পুরুষ এবং তিনজন নারী।
এই কোভিড-১৯ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৩৬১ জন।
সোমবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মুজিবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তিরা হলেন-কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় সামছুল আলম (৬০), চান্দিনা উপজেলায় নুরুল ইসলাম (৭৫), বরুড়া উপজেলায় ফাতেমা (৬০), লাকসাম উপজেলায় নুরুল আমিন (৬০), কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স এলাকার ফয়সাল চৌধুরীর স্ত্রী রিয়া (৩০), দেবিদ্বার উপজেলায় মোতাহেরের স্ত্রী নাসরিন (৪০), চান্দিনা উপজেলায় আবদুল মালেক (৬৫), মনোহরগঞ্জের উত্তর হাওলা গ্রামের মাহমুদুর রহমান (৬০), চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সাহিদুল (৫০) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় সহিদাবাদ সামছুজ্জামান (৫৫)।
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান আটক মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বুধবার (১ মে) রাতেই মিরপুর মডেল থানায় মামলা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মিরপুর মডেল থানায় তিনটি অভিযোগে মামলা হবে মিল্টনের বিরুদ্ধে। মামলাগুলো এজাহারভুক্ত হওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর আগে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল আটক করে মিল্টন সমাদ্দারকে।
পরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ। তার বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। তিনি তার বাবাকে পেটানোর কারণে এলাকাবাসী তাকে এলাকাছাড়া করে। এরপর ঢাকায় চলে আসেন।
তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং একাধিক মামলা হবে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা জঘন্য অপরাধ। প্রমাণ মিললে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ডিবিপ্রধান বলেন, মিল্টনের বিরুদ্ধে মানবপাচার, শিশুদের ওপর হামলা, আত্মীয়-স্বজন গেলে তাদের মারপিট এবং তার টর্চার সেল, সব কিছুই মামলার মধ্যে আসবে।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মিল্টন ঢাকায় এসে শাহবাগের ফার্মেসিতে কাজ শুরু করেন। সেখানে ওষুধ চুরি করে ব্রিক্রির কারণে মিল্টনকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর একজন নার্সকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ স্থাপনের জন্য স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন।
এর আগে মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরাও। যদিও কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন মিল্টন সমাদ্দার।
নওগাঁর পত্নীতলায় ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি)'র বিশেষ অভিযানে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ২৫০ টি গাঁজার গাছ ধ্বংস করা হয়েছে।
বুধবার (১ মে) সকালে পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এর অধীনস্থ চকচন্ডি বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার কর্তৃক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং জনসাধারণের উপস্থিতিতে গাঁজার গাছগুলো ধ্বংস করা হয়।
জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এর একটি স্পেশাল অপারেশনস্ টিম সুবেদার মো. সুলতান খাঁন এর নেতৃত্বে বস্তাবর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলাধীন সীমান্তবর্তী মাহিসন্তোস গ্রামের বাদামপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২০০-২৫০টি গাঁজার গাছ চিহ্নিত করে।
পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি) এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হামিদ উদ্দিন, বিজিবিএম, পিএসপি এর দিকনির্দেশনায় গাঁজা গাছগুলো ধ্বংস শেষে চকচন্ডি বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং জনসাধারণের উপস্থিতিতে মাদকদ্রব্য চোরাচালানে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিজিবি অধিনায়ক বলেন সীমান্তে চোরাচালান মাদক পাচার এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমসহ অন্যান্য সীমান্ত অপরাধ দমনে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। সকলের নিকট নিরাপদ সীমান্ত বিনির্মাণে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
জাতীয়
মাথায় মাছের ভারি বোঝা। রোদে পুড়ে চেহেরায় কালছে রঙ ধরেছে। ঘামও ঝরছে ঝর ঝরিয়ে। কিন্তু সেদিকে তাকানোর সময় কোথায় মোহাম্মদ ফরহাদের। যতটা মাছের বস্তা বহন করবে ততই যে বাড়বে মজুরির অংক। আর মজুরি পেলেই তো খাবার জোটবে মা আর দুই ভাইয়ের মুখে!
বয়স কত তোমার- বলতেই একটু থামল ফরহাদ। মুখে একরাশ দুঃখ। মানুষ পেয়ে সেই দুঃখের জানালা যেন খুলে দিল ১৬ বছরের কিশোর। বলতে শুরু করে, ‘ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়লেও অভাবের কারণে আর পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে পারলাম না। কারণ আমার বাবা নেই। ঘরে দুই ভাই আর মা। আমি কাজ না করলে তাদের খাওয়াবে কে? ভোলা থেকে চট্টগ্রাম এসে মুদির দোকানের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেখানে বেতন কম। বাধ্য হয়ে তাই কষ্ট হলেও দুই মাস ধরে তীব্র গরমে ভারি মাছের বস্তা বোঝাই করার কাজ করতে হচ্ছে।’
নিজের চেহেরার দিকে তাকাতে বলে একটু হাসল ফরহাদ। বলল, ‘এখানে কাজ করতে আসার আগে আরও ফর্সা ছিলাম। এখন রোদে পুড়ে কালো হয়ে গেছি।’
শুধু এই কিশোর নয়, চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী নদীর বাংলাবাজার ঘাটে গেলে এমন অনেক ফরহাদদের দেখা মিলবে। কারও বয়স ১৫, কারও বা ২০-২৫। বড়দের সঙ্গে প্রতিদিন প্রতিযোগিতা করে মাছ বোঝাই করার কাজ করে এই কিশোর-তরুণেরা। তাদের সঙ্গে আছেন নারীরাও। বুধবার বিকেলে দেখা এই চিত্র প্রতিদিনের।
নদীর তীরে মাছ ভর্তি সাম্পান ভিড়তেই দৌঁড় শুরু হয়ে যায় এই শ্রমিকদের। এই দৌঁড় আহার জোগানোর প্রতিযোগিতার। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের সঙ্গে এই প্রতিযোগিতায় রয়েছেন নারী-কিশোরেরা। যাদের মাথায় চড়ে সাগর থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ যাচ্ছে হিমাগারে। শীতল বরফে জড়ানো ভারি মাছ বোঝাই করেই তাদের জীবন চলে বারোমাস।
কর্ণফুলীর এই ঘাট দিয়ে সাগর থেকে আসা ইলিশ, কোরাল, সুরমা ও পোয়াসহ হরেক প্রকারের মাছ যায় পাশের হিমাগারে। সেই হিমাগার থেকে এসব মাছ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে, এমনকি দেশের বাইরেও। আর এসব মাছ নামাতে কাজ করেন শত শত শ্রমিক। এ শ্রমিকদের দেখভাল করেন মাঝি। আর প্রত্যেক মাঝির নেতৃত্বে ১০, ২০ বা ৫০ জন করে শ্রমিক কাজ করেন। এক সাম্পানের মাছ হিমাগারে পৌঁছে দিতে কাজ করেন দশজন শ্রমিক। এর বিনিময়ে প্রতিজন ১০০ টাকা করে মজুরি পান। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয়ে এই কাজ, শেষ হয় সন্ধ্যায়। সপ্তাহ বা মাসে কোনো ছুটি নেই তাদের, যে শ্রম দেবে তারই মিলে মজুরি। মাঝি থেকে সেই মজুরি নিতেও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় তাদের!
সরেজমিনে দেখা যায়, একজন শ্রমিককে মাথার ওপর মাছের বস্তা তুলে দিয়ে সহযোগিতা করছেন আরও দুজন। মাত্র কয়েক মিনিটেই সেই বস্তা মাথায় বয়ে দৌঁড়ে রেখে আসছেন হিমাগারে। এরমধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলে বা কাজে ধীরগতি হলে মাঝির বকা ও চিল্লানি তো রয়েছেই।
ঘাটের এই শ্রমিকদের মধ্যে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষ থাকাটা স্বাভাবিক। অভাবের পিড়াপিড়িতে একাজে যোগ দিয়েছেন অনেক নারীও। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে ভারি ওজনের এই মাছের বস্তা মাথায় বইছে ১০ থেকে ১৪ বছরের কিশোররাও।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর এগারো মাইল এলাকার বাসিন্দা মো. আবছার। বাবা ছিলেন বড় ব্যবসায়ী। তবে নিয়তি আবছারকে বানিয়ে দিয়েছে শ্রমিক। বয়সের ভারে কাজ করতে কষ্ট হয়, কিন্তু পেটতো আর সেটি বুঝবে না। সেজন্য এখনো তাকে কাজ করে যেতে হয় প্রতিদিন।
সেই দুঃখের কথা তুলে ধরে আবছার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুৎসহ জিনিসের যে দাম, বর্তমানে আমাদের বেঁচে থাকা অনেক কষ্টের। আমার হাঁটুতে ব্যথা, তবুও কাজ করতে হচ্ছে। কোনো উপায় নেই, বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে। এটি করে পোষায় না- কেন না যতক্ষণ কাজ করি ততক্ষণ টাকা পাই। কাজ না করলে তো পেটে ভাত জোটবে না। সরকার যেন আমাদের প্রতি দৃষ্টি দেয়।’
পুরুষের পাশাপাশি এই ঘাটে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করছেন রংপুরের মুন্নি বেগম (৩০)। জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের কোনো ছুটি নেই। প্রতিদিনই সকাল ৮টা হলেই ঘাটে চলে আসতে হয়। কবে নৌকা বা সাম্পান নিয়ে আসবে সেটার অপেক্ষায় থাকি। মাথায় বোঝা বহন করা অনেক কষ্ট। সারাদিন কাজ করে বাসায় গেলে শরীর ব্যথা করে। আমাদের আয়ের ঠিক নেই। কখনো ৩০০, আবার কখনো ৫০০ টাকার মতো আয় করি দিনে।’
১৮ বছর ধরে এই ঘাটে কাজ করছেন বরিশালের ইদ্রিস মাঝি। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা যে কষ্টটা করে তার ন্যায্য মজুরিটা পায় না। আমরা চাই শ্রমিকরা যথাসময়ে তাদের টাকা পাক।’
ঘাটের নিরাপত্তাকর্মী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমি গত ৫ মাস ধরে কাজ করছি। এখানে বড়দের সঙ্গে দেখি ছোট ছোট শিশুরাও ভারি বোঝা মাথায় নিয়ে কাজ করে। এটা আসলে এক ধরনের অমানবিক কাজ। তাদের জীবনটা এমন। কোন দিন তারা ২০০-৩০০ টাকা পায়। আবার কোনো দিন একদমই পায় না, ঘাটে আসা যাওয়াটায় লস। জাহাজ থাকলে কাজ হলে তারা ৫০০ টাকার মতো পায়।’
এক সময়ের শ্রমিক জাহেদ এখন হয়েছেন মাঝি। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের সাম্পান প্রতি ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। আমি ওদের পরিচালনা করে একজন শ্রমিকের সমান টাকা পাই। এসব কাজের কোনো সময় নেই। সাম্পান মাছ নিয়ে আসলেই কাজ। না আসলে বসে থাকতে হয়। দেখা যাচ্ছে কোনো সময় সকালে অনেক সাম্পান মাছ নিয়ে আসে। আবার কখনো বিকেলে আসে।’
মাছের বস্তা মাথায় নিয়ে প্রতিদিনের শুরু তাদের। এভাবে করে একসময় বিকেল হয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। সারাদিনের ক্লান্ত ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে ঘরে ফিরতেই পাল্টে যায় ক্যালেন্ডারে তারিখ। তবুও পাল্টায় না তাদের ভাগ্য! শ্রমে ঘামেই জীবন পার….
সব অভিযোগের বিষয়ে মিল্টনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে: ডিবি প্রধান
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জাতীয়
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ রয়েছে। সব অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
বুধবার (১ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে ডিবির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।