দেশজুড়ে চলমান দাবদাহে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যখন কঠিন, তখন ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। গেল দু-একদিন বৃষ্টি হলেও রোদের তীব্রতা কমার নাম নেই। ফেনীতে গড়ে প্রতিদিন ৩৩ থেকে ৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা অব্যাহত আছে। গরমে সাধারণ মানুষের যখন হাঁসফাঁস অবস্থা ট্রাফিক পুলিশদের দায়িত্বের কাছে তাপমাত্রা যেন তুচ্ছ।
রোববার (৫ মে) দুপুরে ফেনীর মহিপাল, ট্রাংক রোড়, মিজান রোড়, ডাক্তার পাড়া মোড়সহ শহরের বি়ভিন্ন ব্যস্ত সড়কে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দেখা যায় তাদের। কড়া রোদ, তীব্র গরম, যানজট, উচ্চ শব্দের হর্ন চারদিকে। এরমধ্যে রয়েছে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি। সব মিলিয়ে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হলেও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা পরিস্থিতির সম্মুখে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জেলা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফেনী সদর, সোনাগাজী, দাগনভূঞাসহ ৬ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টি.আই), শহরে ৬ জন সার্জেন্ট/ টাউন সাব-ইন্সপেক্টর (টিএসআই), ১০ জন অ্যাসিসটেন্ট টাউন সাব-ইন্সপেক্টরসহ (এটিএসআই) ৪০ জন কনস্টেবল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কাজে নিয়োজিত আছে।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বার্তা২৪.কমকে জানায়, তীব্র গরমকে উপক্ষো করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও হিট স্ট্রোকসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি থাকলেও সাধারণ মানুষকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
কথা হয় ট্রাংক রোড মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের সদস্য কনস্টেবল জামালের সাথে। তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থে এই তীব্র গরমে আমাদের রাস্তায় কাজ করতে হয়। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে বিধায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খাবার স্যালাইন, পানি, ছাতা সরবরাহ করছে। এছাড়াও নিয়মিত শরীর চেকআপ করা হচ্ছে।
মহিপালে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছেন কনস্টেবল মো. রিপন। তিনি বলেন, জনগণের সেবা করা আমাদের দায়িত্ব। কষ্ট হলেও জনগণকে সেবা দিতে এই তীব্র দাবদাহে রাস্তায় আমরা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ারুল আজীম মজুমদার বলেন, তাপমাত্রা যদি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও হয় আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ আমরা যদি কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাই তাহলে তীব্র যানজট লেগে শহর অচল হয়ে যাবে। যতই রোদ, বৃষ্টি, ঝড় লেগে থাকুক আমাদের সার্বক্ষণিক রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে হয়।
পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) এস.এম শওকত হোসেন বলেন, ট্রাফিক পুলিশদের সবসময় রাস্তায় থেকে কাজ করতে হয়। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ, যানবাহনের উচ্চ শব্দের হর্ন আর ধুলোয় থেকে শরীরে নানা অসুস্থতা বাসা বাঁধলেও জনগণের স্বার্থে দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়।
চিকিৎসকের মতে, তীব্র দাবদাহে হিটস্ট্রোকের সবচেয়ে ঝুঁকিতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে হলে মাসল ব্রেকডাউন হতে পারে। এছাড়াও ডিহাইড্রেশন হয়, শরীরে পটাশিয়াম বেড়ে যায়। এর ফলে হার্টবিট অ্যাবনর্মাল হয়ে যেতে পারে, যে কারণে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। পটাশিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে গেলে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
হিট স্ট্রোক রোধে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করার (হালকা রঙের সুতির কাপড় হলে ভালো), যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার, রোদে বাইরে যাওয়ার সময় টুপি, ক্যাপ অথবা ছাতা ব্যবহার করার, প্রচুর পরিমাণে পানি বা খাবার স্যালাইন অথবা ফলের রস পান করার, রোদে দীর্ঘ সময় ঘোরাঘুরি না করা, তীব্র শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলার।
এ প্রসঙ্গে জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ারুল আজীম মজুমদার বলেন, ট্রাফিক পুলিশদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে সর্বোচ্চমাত্রায়। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পানি, স্যালাইন, ছাতা সরবরাহ করা হচ্ছে এবং প্রত্যেকটি কনস্টেবলের শরীরে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে নিয়মিত চেকআপ করা হচ্ছে। যাদের সমস্যা ধরা পড়ছে তাদের স্থলে অন্য কনস্টেবলকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেককে নির্দেশনা দেওয়া আছে যাতে তীব্র রোদে একটানা কাজ না করে ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে কাজ করে। ওই ৩০ মিনিটে অন্য কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবে। এভাবে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে বলে জানান তিনি।