বালিয়াকান্দিতে গ্রামবাসীর বাঁধার মুখে ইটভাটা স্থাপন বন্ধ



সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
ছবিঃ বার্তা২৪.কম

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের চরদক্ষিণবাড়ী গ্রামবাসীর সমন্বয়ে গঠিত সমাজ পরিবেশ রক্ষা নাগরিক কমিটির প্রতিবাদের মুখে অবশেষে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন বন্ধ ঘোষণা করেছে ভাটার মালিক রুহুল আমিন।

দীর্ঘ ৩৪ দিন প্রতিবাদের পর ইটভাটা স্থাপন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় সংগঠনটির শতাধিক নেতাকর্মী আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে।

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নবাবপুর ইউনিয়নের চরদক্ষিণবাড়ী গ্রামের বন্ধ ঘোষণাকৃত ইটভাটা থেকে আনন্দ মিছিলটি বের হয়ে তা কোরবানের দোকানে এসে শেষ হয়। এখানেই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করেন।

সমাজ পরিবেশ রক্ষা নাগরিক কমিটির আহবায়ক বলেন, সরকার ঘোষিত আইনকে অমান্য করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের চেষ্টা চালানো হয়। পরে আমরা গ্রামবাসীরা এক হয়ে ইটভাটা না করার জন্য অনুরোধ করলে মালিকপক্ষ তা উড়িয়ে দেন। তারা ভাটা করার চেষ্টা চালান।

পরে আমাদের সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করি। আজ শনিবার আমাদের পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। কিন্তু ইটভাটার মালিক শুক্রবার রাতে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের কাছে ভাটা না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তাই আমরা আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করে আজ আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছি।

আনন্দ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির যুগ্ম আহবায়ক মতিয়ার রহমান, সোনাপুর বাজার কমিটির সভাপতি ও সংগঠনের সদস্য মো. আজিজ ইকবাল, বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ভুট্টো প্রমুখ।

   

মে মাস জুড়ে গরম, তাপপ্রবাহ, নিম্নচাপ, বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা



স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা২৪. কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের বেশির ভাগ এলাকাতেই প্রচণ্ড দাবদাহে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে টানা এপ্রিল মাস জুড়ে। টানা কয়েক দফা ‘হিট অ্যালার্ট’-এর পর মে মাসের দ্বিতীয় দিনেই রাজধানী ঢাকায় দেখা মিলেছে বৃষ্টির।

মে মাস জুড়ে দেশের আবহাওয়া কেমন থাকতে পারে, সে বিষয়ে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, পুরো মে মাস জুড়ে গরম, তাপ প্রবাহ, নিম্নচাপ, বৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এপ্রিলের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকবে বলে স্বস্তির খবরও জানানো হয়েছে।

অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, মে মাস জুড়ে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে এবং দেশের কোনো কোনো স্থানের উপর দিয়ে দুটি তীব্র ও কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এছাড়া দিনের বেলায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে।

বিগত এপ্রিল মাস জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার ফলে জারি ছিল হিট অ্যালার্টও। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে দেশের অনেক মানুষের প্রাণহানিও ঘটেছে। এমন অবস্থা গত ৭৬ বছরেও হয়নি বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বার্তা২৪.কমকে জানান, মে মাসের ৫-৬ তারিখ ঢাকা ও তার আশেপাশের জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেইসঙ্গে ৬-১০ তারিখে সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে। এরপর মে মাসের ১২ তারিখের পর থেকে তাপমাত্রা আরো কিছুটা বাড়বে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, কালবৈশাখীর সম্ভাবনা রয়েছে মে মাসে তিন থেকে পাঁচদিন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ শিলাবৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস থেকে আরো জানানো হয়, মে মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে।

এছাড়া চলতি মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেটসহ হাওর অঞ্চলে নদনদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। কিছু জায়গায় তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়।

;

বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে ১৬৫তম বাংলাদেশ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ২৭ দশমিক ৬৪ স্কোর নিয়ে ২ ধাপ পিছিয়ে ১৬৫তম অবস্থানে বাংলাদেশ। এ বছর ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) শুক্রবার (৩ মে) এই সূচক প্রকাশ করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে এবার শীর্ষস্থান দখল করেছে নেপাল; ৬০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ৭৪তম অবস্থান দখল করেছে। এর পরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ। ৫২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১০৬তম অবস্থানে। এবারের তালিকায় প্রথম অবস্থান থেকে ছিটকে তৃতীয় স্থান পেয়েছে ভুটান। ৩৭ দশমিক ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের পেছনে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। 

দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। এই তিন দেশের বৈশ্বিক অবস্থান যথাক্রমে ১৫০, ১৫২ ও ১৫৯তম।

গত বছরের ১৬১ থেকে দুই ধাপ এগিয়ে এবার ১৫৯তম অবস্থান পেয়েছে ভারত। আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বশেষ স্থান পেয়েছে। ২৬ ধাপ পিছিয়ে দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ১৭৮তম, পয়েন্ট মাত্র ১৯ দশমিক ০৯।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এই প্রতিবেদনে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কর্মস্থল হিসেবে মিয়ানমার, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষস্থান অটুট রেখেছে নরওয়ে। তাদের পয়েন্ট ৯১ দশমিক ৮৯। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তা যাচাই করা হয়। এই সূচকে পাঁচটি বিষয় আমলে নেয়া হয়। এগুলো হলো-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের মুক্ত গণমাধ্যম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে, যাতে রাজনৈতিক সূচকের উল্লেখযোগ্য হ্রাস থেকে নিশ্চিত হয়েছে। এ বছর এই সূচকের বৈশ্বিক গড় সাত দশমিক ছয় শতাংশ কমেছে।

;

প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থীসহ সব আসামি খালাস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০১৭ সালের ২০ অক্টোবরে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় ৮৭ শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জন খালাস পেয়েছেন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত সম্প্রতি এ রায় দেন।

খালাস পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ২১ জন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী, ৮ জন চাকরিজীবী-ব্যবসায়ী এবং বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিও আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় দুটি আইনে (আইসিটি ও পাবলিক পরীক্ষা) অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ জুন ১২৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। আইসিটি আইনের মামলায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযোগ গঠন করা হয়।

আদালতের রায়ে বলা হয়, অভিযোগ গঠনের পর আদালতে সাক্ষীদের হাজির করতে সমন, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষ মাত্র একজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। একমাত্র যে সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনিও অভিযোগ সমর্থন করে কোনো সাক্ষ্য দেননি। আইসিটি আইনের যেসব ধারায় (৫৭ ও ৬৩) অপরাধের অভিযোগ মামলায় আনা হয়, তা বিচারে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

রায়ে আদালত বলেছেন, একই অপরাধের অভিযোগে মামলায় পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি ও দণ্ডিত করা যায় না।

আইসিটি আইনের মামলাটিতে সব আসামির খালাস পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর প্রসিকিউশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন রানা ও অমর একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার হল থেকে ইশরাক হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। একই দিন সিআইডি মামলা করে।

আদালতের রায়ে আরও বলা হয়, মামলার আসামিদের মধ্যে ৪৬ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। রায়ের তথ্য বলছে, মামলার অভিযোগ, ইলেকট্রনিক বিন্যাসে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। এ অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ও ৬৩ ধারায় ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনের দীর্ঘদিন পর ২০২৩ সালের ১১ মে এক সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। বাকি সাক্ষী হাজির না করার তথ্য উল্লেখ করে আসামিপক্ষ আদালতে আবেদন করে বলে, একই ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা চলমান। এ কারণে আইসিটি আইনের মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হোক।

রায়ে আরও বলেছেন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করলে এবং প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত আধেয় (কন্টেন্ট) কেউ পড়লে বা দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রসিকিউশন মামলাকে শতভাগ সত্য বলে ধরে নিলেও এখানে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপরাধের উপাদান নেই। এ ধারায় অপরাধের ক্ষেত্রে তর্কিত আধেয় সর্বসাধারণের জন্য কোনো ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার বা প্রকাশ করতে হবে। ফাঁস করা প্রশ্নপত্র সর্বসাধারণের জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার করার কোনো অভিযোগ মামলায় আনা হয়নি।

আদালত আরও বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ইমেইল, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে বা অন্য কোনো আবদ্ধ গ্রুপে কোনো ধরনের চ্যাটিং বা যোগাযোগ আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপরাধের উপাদানের মধ্যে পড়ে না। যেখানে ৫৭ ধারার অপরাধ প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেখানে ৬৬ ধারার অপরাধও প্রতিষ্ঠিত হয় না।

আইসিটি আইনের ৬৬ ধারায় কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কম্পিউটার, ই–মেইল, নেটওয়ার্ক, রিসোর্স বা সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করার কথা উল্লেখ আছে।

রায়ে বিচারক বলেন, আইসিটি আইনের ৬৩ ধারার মূল বক্তব্য হলো, কোনো ব্যক্তি যদি এই আইন বা আইনের বিধি বা প্রবিধানের কোনো ইলেকট্রনিক রেকর্ড, বই, রেজিস্ট্রার, তথ্য, দলিল বা অন্য কোনো বিষয়ে প্রবেশাধিকারপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া কোনো বিষয়বস্তু অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট প্রচার বা প্রকাশ করেন, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে মহিউদ্দিন, মামুনসহ অন্য আসামিদের এ ধরনের কোনো অপরাধ করার সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখা যায় না।

রায়ে আদালত বলেন, আসামি মহিউদ্দিনের মুঠোফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাওয়া যায়। ফলে আসামির ডিজিটাল ডিভাইস থেকে প্রশ্নপত্র সর্বসাধারণের জন্য ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার বা প্রকাশ করার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। আসামি মামুন টাকার বিনিময়ে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের গ্রাহক সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার তথ্য জবানবন্দিতে স্বীকার করেন। পরীক্ষার হলের বাইরে থেকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলার তথ্যও স্বীকার করেন তিনি। মামুনের কাছ থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রের ছবি পাওয়া যায়। তবে তিনি তা সর্বসাধারণের জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে প্রচার করেননি।

একইভাবে আদালত রায়ে আসামি ইব্রাহীম, অলিপ কুমার বিশ্বাস, নাভিদ আনজুম, রফিকুল হাসান, বনি ইসরাইল, হাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, আনোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির তথ্য আদালত রায়ে তুলে ধরেছেন। স্বীকারোক্তির তথ্য পর্যালোচনা করেছেন।

রায়ে আদালত বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে পৃথক একটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে; যা ‘ডাবল জিওপ্রাডি’র (একই অপরাধের অভিযোগে কাউকে দুবার বিচারের মুখোমুখি করা) মূলনীতিকে লঙ্ঘন করে। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এক অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারি মামলায় সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাবে না।

রায়ে উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষে পিপি উল্লেখ করেন, মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপরাধের উপাদানকে সমর্থন করে না। মামলার কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও কোনো ধরনের ইতিবাচক ফলাফল আসার সম্ভাবনা নেই। যেহেতু আসামিদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধের কোনো উপাদান নেই, তাই মামলাটি ‘কেস অব নো এভিডেন্স’ (অভিযোগ প্রমাণের সপক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকা)।

;

কষ্টিপাথর কিনে প্রতারিত হয়ে প্রতারকের ভায়রাকে অপহরণ, গ্রেফতার ৭



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝালকাঠির বাসিন্দা মোস্তফা হাওলাদার। পেশায় অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করে বিক্রি করা। অপর দিকে ঢাকার বাসিন্দা খোকন হাজী। তিনিও ঠিকাদার পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা কিনে পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে পাচার করে আসছিলেন। সম্প্রতি মোস্তফার কাছ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ টাকায় মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা কিনে প্রতারিত হন খোকন।

অপর দিকে নকল মূর্তি ও মুদ্রা বিক্রি করে আত্মগোপনে চলে যান মোস্তফা। ফলে খোকন প্রতারতি হয়ে মোস্তফাকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তার কোনো হদিস না পেয়ে এক সহযোগীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাকা আদায় করতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে আনোয়ারের হোসেন খান (৪৪)কে অপহরণ করে খোকন হাজী ও তার চক্রের সদস্যরা। টাকা নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়া মোস্তফার ভায়রা ভাই অপহৃত আনোয়ার।

অভিযোগ পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা খোকন হাজীসহ সাত জনকে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)। এ সময় অপহৃত আনোয়ারকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃতরা হলো- মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা হাজী ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন (৬৫), মো. আরিফ হোসেন (৫৫), সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), মো. রুহুল আমিন (৬০), মো. জাকির হোসেন (৩০), ও মো. স্বাধীন (৫২)।

এসময় তাদের কাছ থেকে রিভলবার, ৮ রাউন্ড গুলি ও শটগান উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এসব তথ্য জানান।


লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর বলেন, গত ১ মে রাত ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে খোকন হাজীর নেতৃত্বে ৮ থেকে ৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র দোকান কর্মচারী আনোয়ারের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজীর মালিকানাধীন ‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ অফিসের আটকে রাখে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা আনোয়ারের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছে ৯৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আনোয়ারের জীবন বাঁচাতে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে অপহরণকারী চক্রের দেওয়া একটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে পাঠায়। সাড়ে ১৭ লাখ টাকা পাওয়ার পরেও আরও টাকার দাবিতে নির্যাতন চালাতে থাকে। এমনকি অপহরণকারীরা টাকা না দিলে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অপহরণকারী চক্র ও অপহৃতের অবস্থান শনাক্ত করে। খোকনের অফিসে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের ৭ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, আসামি খোকন হাজী ২০১৫ সাল থেকে দেশের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিল। তার এ অপকর্মের সহযোগী ছিল ভারতীয় এক নাগরিক যার নাম মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানীর এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রার মূল ক্রেতা ছিল মিলন চক্রবর্তী। খোকন হাজী ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার ৭টি চালান ভারতে পাচার করেন। খোকন হাজীর কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতবমুদ্রা সংগ্রহের কাজে নাঈম (৩৫), মোস্তফা হাওলাদার(৫০) ও রবি নামের কয়েকজন সহযোগী বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করতো। বিনিময়ে তাদের মাসে ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দিত খোকন।

তিনি আরও জানান, গত ১ মে মোস্তফা হাওলাদার ও নাঈমের একজন সহযোগী মোবাইল ফোনে খোকন হাজীকে বলেন, মোস্তফা হাওলাদারের ভায়রা-ভাই ভিকটিম আনোয়ার ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। তাকে ধরতে পারলে মোস্তফা হাওলাদারের সন্ধান পাওয়া যাবে। এই তথ্য পেয়ে খোকন হাজী তার সহযোগীদের নিয়ে আনোয়ারকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খোকন হাজীর নেতৃত্বে একটি সাদা মাইক্রো বাসে করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আনোয়ারকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবি করে।

র‍্যাব-৩ এর সিও আরও জানান, খোকন হাজী একজন ঠিকাদার। মতিঝিল এলাকায় তার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খোকন হাজী ১৯৭৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। ঠিকাদারী ব্যবসার আড়ালে খোকন হাজী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব মুদ্রার কারবার করে আসছিল। এই অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার সহযোগীরাও অবৈধ কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রার কারবারের জড়িত। ভিকটিমকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর।

;