ঘাঘট নদের পানিতে ডুবে গেছে কৃষকের স্বপ্ন
কৃষক ইয়াকুব আলী (৪০) একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল পান বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন। কিন্তু ঘাঘট নদের পানিতে তার সেই স্বপ্ন ডুবে গেছে। এখন তার পানের বরজে এক বুক পানি।
কৃষক ইয়াকুব আলীর বাড়ি ঘাঘট নদ সংলগ্ন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার আটষট্টিপাড়া গ্রামে। শুধু ইয়াকুব আলী নয়, ওই গ্রামের ছাইফুল ও হযরত আলীর পানের বরজ, আশরাফ আলীর মুলা ক্ষেত, ফজলুর রহমান, নুর মোহাম্মদের সবজি ক্ষেত ও আলম মিয়াসহ অনেকের করলা ক্ষেত এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে।
ইয়াকুব আলী বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে এনজিও থাকি ঋণ তুলি পানের বরজ দিছনু। কিন্তু পানি উঠি সউগ ভাসি গেল। এমনিতে করোনার কারণে পানের দাম আছিল না। এখন ডুবি গেল।’
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পানি ঘাঘট নদ দিয়ে নেমে যেতে না পেরে উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এতে অনেকের পানের বরজসহ রোপা আমন ও রবিশস্য পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আশপাশের এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ঘাঘটের এমন রূপ স্থানীয়রা আগে দেখেনি। ঘাঘটের চারদিকে গ্রামগুলোতে এখন পানি আর পানি।
স্থানীয় উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ইতোমধ্যে দুই হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। শতাধিক হেক্টর রবিশস্য পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার মাঝ দিয়ে ঘাঘট নদ প্রবাহিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৩৬ কিলোমিটার। এর পানি প্রবাহমাত্রা অবস্থাভেদে ৫০ থেকে আড়াই হাজার কিউসেক। দখল হয়ে যাওয়ায় ৫০ ফুট প্রশস্ত ঘাঘট নদ এখন ১০ ফুটে এসে ঠেকেছে।
ঘাঘট নদী নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার তিস্তা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নদীটি সর্পিল গতিতে রংপুর হয়ে পীরগাছা উপজেলার ওপর দিয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবাহিত হয়ে ফুলছড়িঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। শুকনা মৌসুমে পানি প্রবাহ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামে। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে আশপাশের গ্রামগুলোতে বন্যা দেখা দেয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘাঘট নদের এমন রূপ তারা আগে দেখেননি। এই এলাকায় ঘাঘট অনেক শান্ত। ফলে অনেক পরিবার ঘাঘটের গাঁ ঘেঁষে বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ভারী বৃষ্টিপাতের পর ঘাঘট রুদ্ররূপ ধারণ করে। অপ্রস্থ ঘাঘট দিয়ে পানি নামতে না পারায় আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ভেসে গেছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত তিন দিনে আটষট্টিপাড়াসহ আশপাশের গ্রামে ঘাঘট সংলগ্ন সাতটি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় অর্ধশত বাড়ি।
আটষট্টিপাড়া গ্রামের মমিন মিয়া বলেন, ‘আমার চোখের সামনে একটি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ওই পাশের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।’
পীরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি জমেছে। এতে অনেক ফসলের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই হাজার হেক্টর রোপা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি কমে গেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে।