স্বামীর অনুপ্রেরণায় মাল্টা চাষে সফল ভেড়ামারার ময়না

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাল্টা চাষ। ছবি: বার্তা২৪.কম

মাল্টা চাষ। ছবি: বার্তা২৪.কম

স্বামীর অনুপ্রেরণায় মাল্টা বাগান করে সফল হয়েছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাসিন্দা ময়না খাতুন। মাল্টা বাগান গড়ে তোলার পর তিনি সফলতা লাভ করেছেন এবং উপজেলার রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন তিনি।

এ নারী উদ্যোক্তা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর এলাকার প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী। তিনি ২৫ বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকলেও মাল্টা বাগান করার উৎসাহ প্রদান করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন গিয়ে ময়না খাতুনের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় মাল্টা। বাতাসে মাল্টার টক-মিষ্টির গন্ধ। দুইজন শ্রমিক বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত।আর কোন গাছের পাতা ছিড়তে হবে গাছের গোড়া পরিষ্কার করতে হবে এসব নির্দেশনা দিচ্ছেন ময়না খাতুন।

পুরো বাগানটি একটি সবুজের ছায়াঘেরা। গেলো বছর দেড় লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন তিনি। এ বছরও চার লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন
মাল্টা বাগানে ময়না খাতুন। ছবি: বার্তা২৪.কম
মাল্টা বাগানে ময়না খাতুন। ছবি: বার্তা২৪.কম

ময়না খাতুন বলেন, স্বামীর অনুপ্রেরণায় ২০১৭ সালে ৬ বিঘা নিজের জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে তুলি। প্রায় তিন বছরে মাল্টার বাগান এখন দেখার মতো হয়েছে। আশান্বিত ফলও পেতে শুরু করেছি।

তিনি বলেন, সিলেট থেকে ৫৭০টি বারি মালটা-১ এর চারা এনে বাগানটি গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘ পরির্চযায় গতবছরে বাগানের প্রায় গাছেই ফল এসেছিলো। কিন্তু বাগানটি টেকসই করতে বেশ কিছু গাছের মাল্টার কড়ি আসার সময় তা ভেঙে (ছিঁড়ে) ফেলা হয়। যার ফলে এবার বাগানে অনেক ফল এসেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন বলেও জানান তিনি।

বাগান পরিদর্শনে অনেক দর্শনার্থী আসেন। বার্তা২৪.কম
বাগান পরিদর্শনে অনেক দর্শনার্থী আসেন। বার্তা২৪.কম 

বাগান থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যায় বলে কোন ঝামেলাই হয়না বিক্রি করতে। এছাড়াও তার বাগানে সিডলেস ও চায়না লেবু এবং কিছু লিচু গাছও রয়েছে। প্রতিকেজি মাল্টা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও অনেক দর্শনার্থীরা এই বাগান পরিদর্শনে আসেন।এতে তিনি আনন্দও পান।

তবে নারী হিসেবে তাকে সফল হতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে নানান জনের নানান কথা। তবুও দমে যাননি তিনি।নিজ প্রচেষ্টায় এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। কৃষি বিভাগ থেকে কোন সহায়তা পায়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এতোকিছুর পরেও একজন নারী হিসেবে ফলের বাগান গড়ে তোলা সেটি ছিলো অনেকটা দু:সাহসের ব্যাপারও বটে। ভবিষ্যতে নারীদের উজ্জীবিত হওয়ার জন্য কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল গোলাম রাজন বলেন, ‘মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। মাল্টা বারি-১ একটি উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু ফল। ময়না খাতুনের মাল্টার বাগানে আমি সবসময়ই নানান পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাইখুল ইসলাম বলেন, ভেড়ামারায় তার মতো এতোবড় মাল্টার বাগান আর নেই। তার বাগান পরিদর্শন করেছি আমি। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে আমরা তাকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কেবল পরামর্শ প্রদান করেছি।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ বলেন, একজন নারী হয়েও ময়না খাতুন এতো সুন্দর মাল্টা বাগান করে উপজেলাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আমি বাগান পরিদর্শনে গিয়ে শুনেছি তার বাগানে কোন প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এমন সুন্দর বাগান এ অঞ্চলে মাল্টা উৎপাদনে অনেককেই উৎসাহিত করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।