কুয়াকাটায় বাড়ছে পর্যটকদের দুর্ভোগ
কুয়াকাটা থেকে ফিরে: কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। এখান থেকেই খুব ভালো করে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। আর তাই বিভিন্ন ঋতুতে ভ্রমণার্থী ও পর্যটকদের ভিড় থাকে এই সমুদ্র সৈকতে।
করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে তিন মাসের বেশি কুয়াকাটার পর্যটন কেন্দ্র এলাকায় সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর বর্তমানে তা স্বাভাবিক হয়েছে। পর্যটক ও ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা বাড়লেও বাড়েনি এখানকার কাঙ্ক্ষিত সেবার মান। স্থানীয়দের রুক্ষ আচার-আচরণ, লোক ঠকানো ব্যবসা-বাণিজ্য, অনিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রশাসনের উদাসীনতা ও নানান অব্যবস্থাপনায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে ভ্রমণার্থী ও পর্যটকদের দুর্ভোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সি-বিচ এলাকায় ভাঙন রোধে অপরিকল্পিত ভাবে ছড়ানো-ছিটানো ভাবে ফেলানো রয়েছে ব্লক, কংক্রিট, ইট-সুরকি ও গাছের গুড়িঁ। সমুদ্রে জোয়ারের পানিতে গোসল করতে নেমে ডুবে থাকা ব্লক, কংক্রিট, ইট-সুরকির উপর হোঁচট-খোঁচা খেয়ে প্রায়ই আহত হচ্ছেন পর্যটকরা।
আরো দেখা গেছে, সৈকতে ফেলা হচ্ছে খাবার হোটেল, চটপটি-ফুচকা, মুড়ি-চানাচুর আর মাছ-মুরগী ভাজার বর্জ্য। এছাড়াও রাখাইন মার্কেট এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থায় না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
খাবারের দোকানগুলোতে দেখা যায়, ভালো মাছ-মুরগী দেখিয়ে পচা-বাঁশি মাছের ফ্রাই ও মুরগীর বার-বি-কিউ পরিবেশন করা হচ্ছে। হোটেল রেস্তোরাঁয় এসব মানহীন খাবার মনগড়া দামে বিক্রি করছে। এসব খাবার খেয়ে অনেক সময় পেট ব্যথাসহ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে পর্যটকরা।
কুয়াকাটা সৈকতের প্রবেশ মুখের রাস্তার উপরে যত্রতত্রভাবে যাত্রীদের ওঠানামা করতে দেখা গেছে। রুট ও পিকনিক বাসে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।
কথা বলতে গেলে ভ্রমণকারীরা জানান, জোয়ার পানিতে গোসল করতে নামলে সি-বীচে ফেলা ব্লকে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে অনেকে ব্যথা পেয়েছে। এছাড়াও ফটোগ্রাফারদের উৎপাতে আনন্দ করে গোসল পর্যন্ত করা যায় না। খাবারের ক্ষেত্রে ভালো টোনা ফিস দেখিয়ে পচা টোনা ফিস ফ্রাই করে দেয় দোকানি।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে যাতায়াতের পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গি তৎপরতায় কঠোর নজরদারী এবং সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। পর্যটন এলাকার ১৩৫টি হোটেল-মোটেল ভাগ করে প্রতি ১০টি হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নজরদারীর জন্য থানার একজন করে এসআই-এএসআই নিয়মিত তদারকি করছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার আব্দুল বারেক মোল্লা বার্তা২৪.কমকে জানান, কুয়াকাটায় বাস স্টেশন স্থাপন করার জন্য হাসপাতালের সামনে ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় ভ্রমণার্থী ও পর্যটকদের দুর্ভোগ নিরসনে এবং স্থানীয়দের প্রতারণা বন্ধে প্রশাসনিক ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পচা ও মানহীন খাবার বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি পর্যটকদের সমস্যা নিরসনে সি বীচে পড়ে থাকা বিচ্ছিন্ন কংক্রিট ও ব্লক অপসারণ বিষয়ে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।