ধনবাড়ীতে বিলুপ্ত প্রায় ধুয়াগানের আসর
গানের যে পদমূল গায়কের সাথে দোহারগণ বার বার গায় তাই ধুয়া গান হিসেবে বাংলা লোক সংগীতে জায়গা করে নিয়েছে। লোক সংস্কৃতির এটি একটি জনপ্রিয় বিশেষ শাখা। এই গানে একটি স্থায়ী ধুয়া (ধ্রুবধুয়া) অংশ থাকার কারণে এর নামকরণটি এমন। মূলত বয়স্করা বর্ণাঢ্য পোশাকে এ গান গায়। গ্রামীণ জনপ্রিয় এ গান অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। এখন তেমন একটা দেখা যায় না। দলবেঁধে গাওয়া এ গানের আয়োজন সত্যি দেখার মতো। অনেকটা হারিয়ে জাওয়া এই ধুয়া গানের প্রতিযোগিতার আসর বসেছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী বাজারে।
বুধবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রতিযোগিতাটির উদ্বোধন হয়। ধোপাখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি এমন বিলুপ্ত প্রায় ধুয়া গানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
উদ্বোধনী দিনে ধনবাড়ীর পীরপুর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার নেতৃত্বাধীন ও কুমারগাতির ওয়াসিমের দল ছাড়াও জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পাটাবিঘার তোফাজ্জল বয়াতির দল অংশ নেয়। অসংখ্য গ্রামীণ দর্শক প্রতিযোগিতাটি উপভোগ করে।
কৃষক সংগঠনের নেতা স্নাতকোত্তর জুপিটার জানান, শুনেছিলাম ধুয়া গান একক বা দলীয় দু’ভাবেই গাওয়া হয়। কবিগানের ফর্মেও ধুয়া গান গাওয়া হয়। দুজন বয়াতি পরস্পরের সাথে সওয়াল-জবাব করে এবং দুজনের দোহাররা সওয়াল-জবাবের ফাঁকে ধুয়া গানে অসঙ্গতি তুলে ধরে। বাস্তবে দেখে তার প্রমাণ পেলাম। সত্যি উপভোগ্য!
আয়োজক কমিটির প্রধান ধোপাখালী বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী পল্লী চিকিৎসক মীর আবদুর রহিম জানান, আকাশ সংস্কৃতি আর অপসংস্কৃতিতে আমরা আমাদের গ্রামীণ শুদ্ধ সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি। আগামী প্রজন্ম বিপদগামী হচ্ছে । এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে গ্রামীণ সংস্কৃতির দিকে ফিরে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য করোনা মহামারীর এ সময়ে শুদ্ধ বিনোদন চর্চার উদ্দেশ্য এমন আয়োজন করা হয়েছে।
ধুয়াগান প্রতিযোগিতা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আইয়ুব আলী খান জানান, জারি সারি, বাউল গানের মতো ধুয়া গানও হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য এমন আয়োজন।
তিনি জানান, একই রঙের পোশাক পরিধানে একতারা, দোতারা, খোল, করতাল বাজিয়ে নৃত্যের তালে গায়করা উদাত্ত কণ্ঠে ধুয়া গান পরিবেশন করেন। সামাজিক নানা অসংগতি, হাসি তামাশা রংঢঙয়ের মাধ্যমে ধুয়াগানে তুলে আনা তারা । এমন বিনোদন আর কিছুতে এখন মিলে না। আমরা ধুয়া গানের এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন নিজেদের অর্থায়নে করেছি। প্রথম পুরষ্কার হিসেবে একটি ফ্রিজ, দ্বিতীয় দলকে এলইডি টিভি ও তৃতীয় দলকে মোবাইল দেয়া হবে। মাঝে দুই দিন বিরতি রেখে আগামী শনিবার থেকে ১২টি দলের ধুয়া গানের প্রতিযোগিতা আবার চলবে।