বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য স্থাপনে বাঁধা দেয়ায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নিন্দা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের নামে স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ঔদ্ধত্বপূর্ণ হুমকির তীব্র নিন্দা করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
রোববার (১৫ নবেম্বর) সংগঠনের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত বিবৃতির মাধ্যমে এই নিন্দা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাঁধা প্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। গত ১৩ নভেম্বর করোনাকালীন যাবতীয় বিধিনিষেধ লংঘন করে তারা যেভাবে গেন্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে সমাবেশ করেছে এবং যে ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিষোদগার করেছে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতাতূল্য অপরাধ হলেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে সরকারি কোনও প্রতিবাদ আমাদের নজরে পড়েনি।
বিবৃতিতে আরো হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির মদদপুষ্ট তথাকথিত ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদে’র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তির তীব্র নিন্দার পাশাপাশি আমরা মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির এহেন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় অবস্থানের জন্য সরকারেরও নিন্দা করছি।
‘মওদুদিবাদী, ওহাবিবাদী মোল্লাদের কেবলা পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ সকল মুসলিমপ্রধান দেশেই ভাস্কর্য আছে, যা নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ইতিহাসের মহানায়কদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের স্মারক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্রাণকেন্দ্রে হিন্দু পৌরাণিক চরিত্রের ভাস্কর্য রয়েছে, যেগুলোকে পৌত্তলিকতা বা মূর্তি আখ্যায়িত করে অপসারণের ধৃষ্টতা কখনও সে দেশের কট্টরপন্থীরা প্রদর্শন করেনি। বাংলাদেশে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং কখনও প্রশ্রয়ের কারণে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরেধী এবং সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তাতে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’র ঘোষণা অচিরেই প্রহসনে পরিণত হবে। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দিচ্ছে এবং ইতিমধ্যে স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলেন আমরা দেশ ও জাতির জন্য সমূহ বিপর্যয় আশঙ্কা করছি, যা আমাদের জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
‘করোনা মহামারীকালে যে কোনো অজুহাতে আমরা সব রকম প্রকাশ্য জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে না তাদের শাস্তির উদ্যোগও প্রশাসনকে নিতে হবে।
‘আমরা আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর ’৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহযোগীরা সাংবিধানিকভাবে ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন’ বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।