‘ভিক্ষা নয় মাস্কের বিনিময়ে সহায়তা চাই’

  • ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শারীরিক প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর হোসেন

শারীরিক প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর হোসেন

শারীরিক প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর হোসেন। বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট ফার্ম সংলগ্ন লাইফের বাজার এলাকায়। জাহাঙ্গীর তার বাবকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। দশ বছর আগে তার গায়ে লেগেছিল হলুদ ছোঁয়া। নতুন সাজে বিয়ের পিড়িতেও বসেছিলেন। বাড়িতে এনেছিলেন জীবন সঙ্গীকে। কিন্তু বেশি দিন সেই সংসার টেকেনি। প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে বাবার বাড়ি পাড়ি দেন তার স্ত্রী। আর ফিরে আসেননি। জীবনটাকে সাজাতে তখন থেকেই যুদ্ধ করে যাচ্ছে ঠিকমতো চলতে ফিরতে কথা বলতে না পারা জাহাঙ্গীর হোসেন।

প্রতিদিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় নতুবা অন্য কোনো বাহনে চড়ে জাহাঙ্গীর আসেন রংপুর শহরের প্রেসক্লাব চত্বরে। বিভিন্ন পত্রিকার এজেন্টদের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে হেঁটে বেড়ান শহরের অলিগলি। হাত-পা প্রায় অচল, তারপরও ছুটে চলা থেমে নেই। বরং কষ্ট করেই পাঠকের হাতে পৌঁছে দেন পত্রিকা। বিনিময়ে যা আসে তাই দিয়ে টেনে টুনে সংসার চলছে। শারীরিক অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধকতার কাছে কখনো হার মানেনি জাহাঙ্গীর। তাই একটু খেয়ে পড়ে বাঁচবার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ভিক্ষাবৃত্তিকে সে সব সময় অসম্মানের কাজ ভেবেছে। করোনাকালে কারো কাছে হাত পাততে যাননি। কারো দুয়ারে ধরনাও দেননি। বরং পেপারের সাথে অন্য কিছু বিক্রি করার মাসনিকতা নিয়ে গলায় ঝুঁলিয়েছেন সহায়তার অন্যরকম আবেদন। সেখানে লেখা রয়েছে ‘আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। ভিক্ষা চাই না। দয়া করে ২টি মাস্ক কিনে আমাকে সহায়তা করুন।’

বুধবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে কথা হয় জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে। চল্লিশ বছর বয়সী এই প্রতিবন্ধী জানান, করোনার কারণে এখন আগের মতো পেপার তেমন একটা বিক্রি হয় না। এতে করে তার পেটও চলে না। সংসারের লোকজন উপোষ কিংবা আধাপেট অবস্থায় থাকে। কিন্তু আত্মসম্মানবোধে বলিয়ান জাহাঙ্গীর তো হার মানার কথা না! তাই এবারে পেপারের সাথে মাস্ক বিক্রির করে একটু ভালো থাকতেই তার এই চেষ্টা।

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীরের এই নতুন যুদ্ধে এখন প্রতিদিন আয় হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আবার কোন কোন দিন ৫০০ টাকাও ছাড়িয়ে যান।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যা হয়, তাই দিয়ে চলে। কষ্ট হয়। খুব কষ্ট। মানুষকে তো হাতে মাস্ক দিতে পারি না। যারা আমাকে সহায়তা করতে চান, তারা নিজেরাই মাস্কের কার্টুন থেকে মাস্ক নিয়ে টাকা দেন। আমার হাত-পা অচল। খুব বেশি দূর হাটতে পারিনি। তারপরও চেষ্টা করি। কারো কাছে ভিক্ষা চাই না। সহায়তা চাই, তারও পেপার নতুবা মাস্ক দিয়ে’। 

সমাজের বিত্তবান, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারের কারো কাছ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানান জাহাঙ্গীর। প্রতিবন্ধী ভাতা বা সরকারি সুবিধা বঞ্চিত জাহাঙ্গীর নিজের ভাগ্য বদলাতে চান। তার ইচ্ছে, কারো কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা বা সরকারি সুবিধা পেলে একটা দোকান করে ব্যবসা করবেন। সেখানকার আয় দিয়ে সংসার চালাবেন।