পাহাড়ের বুকে বিরল উদ্ভিদের সংগ্রহশালা

  • আব্দুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কুমিল্লার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান।, ছবি: বার্তা২৪.কম

কুমিল্লার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান।, ছবি: বার্তা২৪.কম

উঁচু-নিচু পাহাড়। পাহাড়ের মাথায় ইট বিছানো পথ। এর দুই পাশে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সংগ্রহশালা। ইটের রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই একটু পরপরই দেখা মিলে, উদ্ভিদ পরিচিতি বোর্ডের। সেখানে রয়েছে উদ্ভিদের বিস্তারিত বর্ণনা। আছে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ঝাড়ও। এমন নান্দনিক দৃশ্যই এখন চোখে পড়ে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে গেলে।

কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগ সূত্র জানায়, নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ি ময়নামতি জাদুঘরের কাছে সালমানপুর নামক স্থানে প্রায় ১৭ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে উদ্যানটি। এখানে রয়েছে কয়েকশ প্রজাতির উদ্ভিদ। যার অন্তত ৯০ শতাংশ বিপন্ন ও দুষ্প্রাপ্য।

বিজ্ঞাপন

ভবিষ্যতে এ উদ্যানটির বিস্তৃতি আরো বাড়ানো হবে। বর্তমান উদ্যানের নিকটবর্তী বনবিভাগের ৩০ একরের মতো প্রাকৃতিক শাল বাগান রয়েছে। মাঝে আরো প্রায় ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হলে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি অনেক সমৃদ্ধ হবে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এমন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পর লালমাই দেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। ২০১৫ সালে এটির কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের শুরুতে শেষ হয়। এ উদ্যানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বন্য প্রাণীর নির্ভয় আবাসস্থল তৈরি, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা।

বিজ্ঞাপন
পাহাড়ের মাথায় ইটের রাস্তা। দুই পাশে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ

বর্তমানে উদ্যানটিতে বিলুপ্তপ্রায় বিরল উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- রাধাচূড়া, নাগেশ্বর, আগার, নাগলিঙ্গম, কাঞ্চন, অশ্বথ, চন্দন, রক্তচন্দন, চালমুগরা, লোহা কাঠ, চাপালিশ, ধূপ, বাবলা, হরিতকি, বহেরা, হিজল, কনক, তমাল, অশোক, সিভিট, উড়ি আম, বন পেয়ারা, অর্জুন, মহুয়া, তেলশুর, পুঁটিজাম, বাঁশপাতা, কুম্ভি, পিতরাজ, পারুল, জারুল, চম্পা, টগর, বেলি, চিকরাশি, হরিয়ান, লটকন, ফেন্স, বোটলব্রাশ, বাসক, রঙ্গন, করমচা, সোনালু, বট ও কৃষ্ণচূড়ার সমাহার। আরো আছে ক্যাকটাস হাউস, অর্কিড হাউস, বিভিন্ন ফুলের বাগান, বিরল উদ্ভিদ বাগান, বন্যপ্রাণীর জন্য জলাশয়, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস। এছাড়া দর্শনার্থীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু বেঞ্চ, ব্যাঙের ছাতা সাদৃশ্য বিশ্রামাগার। নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক শৌচাগারও।

গত ৭ নভেম্বর বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসেন চৌধুরী দর্শনার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করেন। এ সময়ে তিনি বলেন, এটিকে জাতীয় মানের উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলতে মন্ত্রণালয় একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। উদ্যান সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে পুরো দেশবাসী বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করতে পারবেন। এই উদ্যানের ৯০ ভাগ উদ্ভিদই বিরল এবং বিলুপ্ত প্রজাতির। এসব উদ্ভিদ আগামী প্রজন্মের জন্য কাজে আসবে।

কুমিল্লার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানের অর্কিড হাউস

কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাজী মো. নুরুল করিম বলেন, পরিপাটি করে গড়ে তোলা হয়েছে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি। এ উদ্যান নতুন প্রজন্মকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দেবে। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে এটির আয়তন বাড়ানোর জন্য অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

উদ্যানটির প্রবেশ টিকেট অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ৫, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ এবং বিদেশিদের জন্য ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ উদ্যান।