করোনাকালে বেড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুক

  • ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বেড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুক

করোনাকালে বেড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুক

করোনার কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা হোঁচট খেয়েছে। ভারী হয়েছে লোকসানের বোঝা। কেউ কেউ প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে হয়েছে নিঃস্ব। অসংখ্য মানুষ হারিয়েছে রুটি রোজগারের পথ। চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরেছেন শত শত মানুষ।

বৈশ্বিক এ মহামারির সময়েই রংপুর অঞ্চলে পর পর ৪ বার বন্যা হয়েছে। নদীপাড়ের অসংখ্য মানুষ সর্বশান্ত হয়েছে। কেউ বন্যা, করোনার পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। আর কেউবা উপায় না পেয়ে পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন একটু সাহায্যের আশায়। এটা কারো জন্য ভিক্ষাবৃত্তি, আর কারো কারো বাঁচার লড়াই। সেই লড়াইয়ে এখন অসংখ্য ভিক্ষুকের ভিড় বেড়েছে বিভাগীয় নগরী রংপুরে। অলিগলি সবখানেই দেখা মিলছে নতুন নতুন মুখ। যাদের বেশির ভাগই মৌসুমি ভিক্ষুক।

বিজ্ঞাপন
ভিক্ষুকের ভিড় বেড়েছে বিভাগীয় নগরী রংপুরে

সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরের বিভিন্ন অলিগলির মোড়ে, কাঁচাবাজর, ওষুধের দোকান, চায়ের দোকান, বিপণীবিতান, বেশি যানজটের সড়ক, রমেক হাসপাতালে, কেরামতিয়া মসজিদ চত্বরে, কাচারি বাজার, আদালত চত্বর, বাস ও ট্রাক টার্মিনালে, রেল স্টেশনেসহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে দেখতে পাওয়া যায় অসংখ্য মৌসুমি ভিক্ষুক। এদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। আবার কাউকে দেখা গেছে দলবদ্ধ হয়ে ভিক্ষা করতে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরের প্রধান সড়কে চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন হাতে দাঁড়িয়ে রাবেয়া বেগম। মুখে শাড়ির আঁচল। সামন দিয়ে কেউ যেতে না যেতেই আগ বাড়িয়ে চাইছেন সাহায্য। কথা হলে তিনি বলেন, তার স্বামী ভ্যানচালক। আর সে নিজে অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। কিন্তু স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হওয়াতে সংসার চলছে না। চিকিৎসার টাকাও জোগাড় করতে পারছেন না। তাই মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চাইছেন।

বিজ্ঞাপন

রাবেয়ার মতো আরেক নারীর দেখা মিলল কেরামতিয়া জামে মসজিদ মাঠে। সেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক ভিক্ষুককেই দেখা যায়। ছবি বেগম নামে ওই নারী ভিক্ষুক জানালেন তার অসহায়ত্বের কথা। আগে তিনি বদরগঞ্জের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ভিক্ষা করতেন। এখন মানুষ তেমন ভিক্ষা দেয় না। তাই শহরে এসেছেন। সারাদিনে ভিক্ষা করে যা জোটে তাই নিয়ে সন্ধ্যায় বাসে নতুবা ট্রেনে করে ফিরে যান।

মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চাইছেন

নগরীর পায়রা চত্বর, সেন্ট্রাল রোডে, রেলওয়ে স্টেশন ও কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি স্পটে বিভিন্ন বয়সী এমন ত্রিশ জন নারী ও পুরুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এদের কেউ গৃহশ্রমিক, কেউ গ্রামে কৃষি কাজ করতেন। কেউবা নদী ভাঙনের শিকার। কেউ হোটেলে রাঁধুনীর কাজ করেছেন। কেউ কেউ একসময় ঢাকার ফুটপাতে চা বিক্রি করতেন। আর কেউবা কাজ হারিয়ে অসহায়ত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে পথে নেমেছেন।

অন্যের কাছে দান বা ভিক্ষার জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়া এসব মানুষের দাবি পেটের জ্বালায় ভিক্ষাবৃত্তি করছেন তারা। তবে এদের বেশির ভাগই অসহায়, হতদরিদ্র ও ভূমিহীন। কারো কারো ভিক্ষাবৃত্তি আর স্বামীর আয় মিলিয়ে সংসার চলছে। অনেকেই আবার বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ায় বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্টেশন এলাকায় চল্লিশোর্ধ্ব এক ভিক্ষুক শোনান তার দুঃখের কথা। কিছুটা হতাশা আচ্ছন্ন মুখে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি আগে সিলেটে দোকানে কাজ করতেন। করোনার সময়ে একটা সমস্যায় পড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। এরপর থেকে চাকরি হারিয়ে অনেক জায়গায় কাজের সন্ধান করেছেন। কিন্তু কাজ না পাওয়ায় প্রতিদিন রংপুরে এসে লোক বুঝে হাত বাড়িয়ে দেন বিভিন্ন অযুহাত নিয়ে। অন্যের অনুভুতিতে নাড়া দিয়ে চেয়ে বসেন সাহায্য। এভাবেই মাস খানিক ধরে চলছেন তিনি। তবে একই এলাকায় একদিনের বেশি যান না বলেও জানান ওই ব্যক্তি।