ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় শুরু হয়নি সার্ভিস লেনের কাজ

  • অভিজিৎ ঘোষ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চারলেনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু স্লো মুভিং ভেহিক্যাল ট্রাফিক (এসএমভিটি) বা সার্ভিস লেনের এক পাশের কাজ শুরু করতে পারলেও আরেক পাশের কাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে করে বেড়েছে কাজের সময়সীমা। তাতে হতাশা প্রকাশ করেছে ছোট ছোট পরিবহনের চালকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালে শুরু হয়েছে। মহাসড়কের চারলেনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। শুধু বাকি রয়েছে কয়েকটি ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের কাজ। এর পাশাপাশি মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত পূর্বপাশের এসএমভিটি বা সার্ভিস সড়কের কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু পশ্চিম পাশের কাজ এখনো শুরুই করতে পারেনি। হয়নি ওই সড়কের ছোট ছোট কালভার্ট ও ব্রিজের কাজ। একই অবস্থা রাবনা পূর্বপাশের এসএমভিটি সড়কের। তবে রাবনা বাইপাস থেকে পশ্চিমের এসএমভিটি সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। সেখান দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু অপরপাশের অর্থাৎ পূর্বপাশের ঢাকামুখী সার্ভিস লেনের কাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সার্ভিস সড়ক ও আন্ডারপাসের কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক

জানা গেছে, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় একাধিকবার ওই জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও পরিমাপ করলেও এখনও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে পারেনি। এতে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহণ না করায় সার্ভিস লেনের (এসএমভিটি) কাজ বন্ধ করে দেয় জমির মালিকরা। পরবর্তীতে পুনরায় মহাসড়কের তারুটিয়া ও নাটিয়াপাড়া এলাকায় কাজ শুরু হলেও বাকি অংশের সার্ভিস সড়কের কাজ শুরু হয়নি।

বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেডের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানি দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিসিএল, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের সঙ্গে মালয়েশিয়ান কোম্পানি এইচসিএম ইঞ্জিনিয়ারিং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি কোম্পানি সামহোয়ানের সঙ্গে মীর আখতার লিমিডেট মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ করছে কয়েকটি প্যাকেজে। তবে সরেজমিনে বিদেশি কোম্পানির কোনো লোকজন দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন
ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছে

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এতে মহাসড়কের ৭০ কিলোমিটারের প্রতি কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। এরআগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেনের উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর এর কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালে। মহাসড়কের এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের দরুন পর্যন্ত সড়ক, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড। একইভাবে টাঙ্গাইলের দরুন থেকে মির্জাপুরের জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার এবং মির্জাপুর থেকে গোড়াই-চন্দ্রা পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। মহাসড়কের ১১টি আন্ডারপাস ও ৫টি ফ্লাইওভার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরের জুন থেকে শুরু করে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এগুলোর কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

অনেক জায়গায় সার্ভিস লেনের কাজ শুরু হয়েছে।

এলেঙ্গার সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক আব্দুর রহিম বলেন, ছোট পরিবহন চলাচল করার জন্য বিকল্প সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় মহাসড়কের পাশ দিয়ে ছোট গাড়ি চালাতে পারছি না। মহাসড়কে উঠলেই পুলিশ ধরে। এতে আয় রোজগার কমে গেছে।

বিজ্ঞাপন

ছোট ছোট পরিবহন চালকরা জানান, মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে টাঙ্গাইল রাবনা বাইপাস পর্যন্ত একপাশের সার্ভিস লেনের কাজ হয়েছে। আবার রাবনা বাইপাস হতেও মহাসড়কের পশ্চিমের সার্ভিস লেনের কাজ হয়েছে। কিন্তু পূর্ব বা ঢাকামুখী সার্ভিস লেনের কাজ শুরুই হয়নি। এতে সিএনজি, ছোট ছোট পরিবহনগুলো বাধ্য হয়েই মহাসড়কে উঠে পড়ছে। এতে করে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে

মহাসড়কের করটিয়া ইউনিয়নের মাধবধনী এলাকায় সার্ভিস লেনের জন্য ব্রিজের কাজ করছে মীর আখতার লিমিটেড। সেখানকার আবু সাইদ নামের এক শ্রমিক জানান, চারলেনের সড়কের সঙ্গে সার্ভিস লেনের সংযোগের জন্য ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে মানুষজন জায়গা ছেড়ে না দেওয়ায় সার্ভিস লেনের মূল সড়কের কাজ করা যাচ্ছে না।

মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. ইসতিয়াক বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সার্ভিস লেন বা এসএমভিটি সড়কের কাজ অনেক জায়গায় আটকে গেছে। নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই সার্ভিস লেনের কাজ শুরু করা হবে। করোনা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজ বিলম্বিত হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি!