অকেজো ৫ কোটি টাকার ফগ লাইট, পারাপারে দুর্ভোগ
ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ফগ লাইট ক্রয় করা হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। বেশ কিছু ফেরির ওপরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ৫ কোটি টাকার ফগ লাইট। যার ফলে নদী এলাকায় ঘন কুয়াশা হলেই বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। এতে করে নৌরুট পারাপারে বাড়ছে দুর্ভোগ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার সাথে রাজধানীতে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট। বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি মিলে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার যানবাহন পারাপার হয় নৌরুটের প্রতিটি ঘাট দিয়ে। কোনো কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হলে আধ ঘণ্টার নৌরুট পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা। কখনো আবার তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়ায় অপেক্ষার মাত্রা।
শীতকালে ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়া ফেরিঘাট এলাকার চিরচেনা রূপ। ঘন কুয়াশা থেকে মুক্তি পেতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে খান জাহান আলী, কেরামত আলী, শাহ আলী, ভাষা শহীদ বরকত, কপোতি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, শাহ আমানত শাহ এবং শাহ পরান নামের ফেরিগুলোতে স্থাপন করা হয় ফগ এ্যান্ড সার্চ লাইট। তবে হালকা কুয়াশায় ফগ লাইটগুলো কিছুটা কাজে আসলেও ঘন কুয়াশায় পুরোটাই অকেজো ওইসব ফগ লাইট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড় একটি ফেরির মাস্টার অভিযোগ করে বলেন, সরকারিভাবে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা ফগ লাইট শুরু থেকেই কোনো কাজে আসেনি। অযথাই ব্যয় হয়েছে সরকারি টাকা। ঘন কুয়াশায় একদম অকেজো ওই ফগ লাইটগুলো। যে কারণে নদী এলাকায় কুয়াশা বেশি হলে দুর্ঘটনা এড়াতে বাধ্য হয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয় বলে জানান তিনি।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় কথা হয় মুখলেস নামে এক বাসচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আধ ঘণ্টার নৌরুট পারাপারের সুযোগ পাননি। এতে করে দিন দিন গাড়িতে যাত্রী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ এই রুট ব্যবহারে আগ্রহী নয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনিসহ একাধিক বাসচালক।
কাওসার হোসেন নামের এক ট্রাক চালক বলেন, ঘন কুয়াশায় শীতকালে প্রায় প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। যার ফলে আধ ঘণ্টার নৌরুট পারাপারের জন্য তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এতে করে শারীরিক ও আর্থিকভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট এলাকার ভোগান্তি আজ নতুন নয়। খাম-খেয়ালিভাবে চলছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের কার্যক্রম। দেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। অথচ এমন সময়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের এমন সীমাহীন ভোগান্তি খাম-খেয়ালিপনা ছাড়া ভিন্ন কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিউলি তাসনিম নামে হানিফ পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, ১১ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আধ ঘণ্টার নৌরুট পারাপারের সুযোগ পাননি তাদের বহনকারী বাস। ১১ ঘণ্টা একটি গাড়িতে একই স্থানে বসে থাকা বেশ কষ্টকর। এরপর আবার আশেপাশে নেই কোনো টয়লেট এবং খাবারের দোকান। কুয়াশা মানে ফেরিঘাট এলাকায় সীমাহীন ভোগান্তি। এই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরেও এতে কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই। স্বাধীন দেশে এমন ভয়াবহ পরাধীনতা কাম্য নয় বলে জানান তিনি
পাটুরিয়া ফেরিঘাটের মেরামত কারখানা মধুমতির নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সরকারিভাবে ৫ কোটি টাকা ব্যয় করে ১০টি ফগ লাইট কেনা হলেও সেগুলো কুয়াশার সময় কোনো কাজেই আসে না। যে কারণে নৌরুটে দুর্ঘটনা এড়াতে কুয়াশা বেড়ে গেলে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন করপোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, ফগ লাইটের বিষয়ে তিনি কোনো কিছু জানেন না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করার পরামর্শ দেন তিনি।