ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার মধ্যে চলছে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণ
-
-
|

রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণ। ছবি: বার্তা২৪.কম
রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরুর দেড় বছর চলছে। এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করা না গেলে প্রকল্পে বাড়তে পারে জটিলতা। বিলম্ব হতে পারে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মহাসড়ক নির্মাণ।
এদিকে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার সঙ্গে করোনার কারণে পাথর আর বৈধ বালুর সংকটও দেখা দিয়েছে। এতে করে চলমান নির্মাণ কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। সড়ক নির্মাণ প্রকল্প প্যাকেজ-৭ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী ম. আফিদ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্যাকেজ-৭ এ গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি থেকে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করছে সরকার। এর মধ্যে পলাশবাড়ি থেকে ধাপেরহাট পর্যন্ত আট কিলোমিটার ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার দুই কিলোমিটার সড়কের দুই ধারের ভূমি প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাছে এখন পর্যন্ত হস্তান্তর করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পীরগঞ্জের বড়দরগা, লালদিঘী ও পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের আগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়াতে এখন সেখানে চলছে সড়ক নির্মাণ কাজ। সড়কের দুইপাশে বালু-পাথর আর ইট-খোয়ার স্তুপ পড়ে আছে। নির্মাণ শ্রমিকের কোথাও মাটি চাপা দিচ্ছে। আবার কোথাও বালু ফেলছে। সড়কের কোথাও কোথাও বালু ফেলা শেষে খোয়া ব্যবহারের পর পাথরও ফেলানো হয়েছে। ছিটানো হচ্ছে পানি। সঙ্গে রোলার মেশিনের চাপায় বসানো হচ্ছে পাথর-খোয়া আর বালু।
শুধু তাই নয়; সড়কের দুই পাশের কোনো কোনো জায়গাতে স্থাপনা সরিয়ে ফেলা ও জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়াতে মহাসড়কের ব্যাপকতা যেন অনেকটাই দৃশ্যমান। কিছু দূর পর পর কালভার্টগুলো জানান দিচ্ছে মহাসড়কের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রংপুর-ঢাকা যাতায়াতের ব্যস্ততম এই সড়কটি। ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন সড়কের কিছু অংশে কংক্রিটের কাজ শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রকৌশলী ম. আফিদ হোসেন বলেন, ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে রয়েছে কংক্রিট ঢালাই সড়ক রয়েছে সাড়ে ৮ কিলোমিটার। এই কংক্রিট সড়ক নির্মাণ করা হবে পীরগঞ্জের লালদিঘী, খেদমতপুর, গাইবান্ধার ধাপেরহাট ও পলাশবাড়িসহ অন্যান্য বাজার এলাকায়। আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে পীরগঞ্জের লালদিঘিতে ৩০ মিটার, পীরগঞ্জে ৬৯ মিটার, ধাপেরহাটে ৩০ মিটার ও পলাশবাড়িতে ১৭৮ মিটার। সড়কের মধ্যে ৩০টি কালভার্ট থাকবে। ইতোমধ্যে ২৬টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ভূমি অধিগ্রহণে সৃষ্ট জটিলতার কারণে পলাশবাড়ি থেকে ধাপেরহাট এলাকায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব ঘটছে। এই অংশের ৮ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কোন ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। একই অবস্থা পীরগঞ্জ উপজেলার বাসস্টপ এলাকার দুই কিলোমিটার অংশে।

এদিকে মহাসড়কের জন্য রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ১৭৬ দশমিক ৮৮ একর ভূমির প্রয়োজন। ইতোমধ্যে রংপুর অংশে ৭৮ দশমিক ২৪ একর পাওয়া গেছে। গাইবান্ধা অংশের ৩৩ দশমিক ৪৪ একর ভূমি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
নির্মাণাধীন এই রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে ব্যয় হবে ৫২৫ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণ শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২২ জুন মাসে। ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।
জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে রংপুর জেলা প্রশাসকের কাছে ১২০ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখন পর্যন্ত ৯৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী মো. আফিদ হোসেন।
সড়ক নির্মাণ প্রকল্প প্যাকেজ-৭ এর উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ সাইমুম আতিক জানান, সাড়ে ৮ কিলোমিটার কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ ও ৪টি আন্ডারপাস নতুন করে সংযুক্ত করায় প্রকল্প ব্যায় প্রায় অর্ধেক বাড়বে। এসব কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা হবে সড়কের দু’পাশের বাজার এলাকায়। যাতে করে সড়কের কোন ক্ষতি না হয়। ইতোমধ্যে সড়ক নির্মাণের জন্য পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি, বিটিসিএলএর তারসহ বিভিন্ন স্থাপনা অপসরণ করা হয়েছে।