সংকটে কুমারখালীর ঝাড়ু কারিগররা
পরিষ্কার পরিছন্নতার কাজে হাতে তৈরি ঝাড়ু বা বাড়ুনের ব্যবহার আনেক আগের। বাসাবাড়ি কিংবা অফিস, হোটেল বা রেস্টুরেন্ট, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করতে এই পণ্যটি ব্যবহার কর হয়। এটাকে এক প্রকার কুটির শিল্পও বলা হয়। এই শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ছনখড়, প্রাকৃতিতেই জন্মে। বিশেষ করে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বেশি জন্মে এই ছনখড়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এলংগীপাড়ার শতাধিক পরিবার বংশ পরম্পরায় ধরে রেখেছে এই পেশা। বর্তমানে ওই এলাকা বাড়ুন বা ঝাড় পট্টি হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু এলাকার শত বছরের ঐতিহ্য থাকলেও মেলেনি কুটির শিল্প হিসেবে বিসিকের স্বীকৃতি। ফলে সরকারি বা বে-সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত বাড়ুন শিল্পের এই একশত পরিবারের কারিগররা।
সম্প্রতি এলংগীপাড়ার বাড়ুন পট্টি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ ছনখড় ঝাড়া দিচ্ছেন, কেউ গুছি বাঁধছেন, কেউ মুড়াচ্ছেন আবার কেউ দড়ি দিয়ে বেঁধে পূর্ণাঙ্গ বাড়ুন বা ঝাড়ু তৈরি করছেন।
কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় শত বছর আগে ইসমাইল নামের একজন কারিগর এই অঞ্চলে প্রথম ঝাড়ু বা বাড়ুন তৈরির কাজ শুরু করেন। এরপর ইসমাইলের ছেলে সেলিম, তার ছেলে কালামের হাত বদলে বংশ পরম্পর চলছে এই শিল্পটি। যান্ত্রিক যুগে বিকল্প থাকলেও এতটুকু কদর কমেনি ঝাড়ু বা বাড়ুনের।
আরও জানা গেছে, ঝাড়ু বা বাড়ুন তৈরির প্রধান কাঁচামাল ছনখড় এখানকার কারিগরদের দূরের এলাকা থেকে কিনতে হয়। বছরের চৈত্র-বৈশাখসহ কয়েকমাস পাওয়া যায় ছনখড়। কিন্তু সারাবছর কাজ চালাতে কাঁচামাল কিনে মজুদ রাখতে হয়। তবে কারিগররা অসচ্ছল হওয়ায় পর্যাপ্ত কাঁচামাল মজুদ করতে পারেন না। অনেকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সংরক্ষণ করলেও সুদ বেশি হওয়ায় লাভ থাকে না।
জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ বাড়ুন তৈরিতে ৩-৫ জনের সঙ্গবদ্ধ দল লাগে। প্রতিটি বাড়ুন বা ঝাড়ু তৈরিতে খরচ হয় ৫-৬ টাকা, যা বাজারে বিক্রি হয় ৭-১০ টাকায়। দলবদ্ধভাবে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ বাড়ুন তৈরি করা সম্ভব।
এ বিষয়ে এলংগীপাড়ার বাবুল শেখ ও আতিয়ার শেখ জানান, ছোট থেকেই বাড়ুন বানানো কাজের সাথে সম্পৃক্ত তিনি। শুনেছেন তার বাপ-দাদার দাদারও এ কাজ করতেন। এ পেশায় সম্মান না থাকায় সমাজে কেউ মূল্যায়ন করেন না। এমনকি কেউ কোন সহায়তাও করেনন না। তারপরও তারা এ পেশা ছাড়তে পারেন না।
ঝাড়ু কারিগর মাজেদা খাতুন জানান, ঘরের কাজের পাশাপাশি বাড়ুন তৈরি করে তার দৈনিক আয় ১৫০/২০০ টাকা। আগের মতো চাহিদা না থাকায় অনেকে পেশা বদলাচ্ছেন। তবে সরকারি সহায়তা পেলে এটাকে শিল্প হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব।
করিম শেখ জানান, এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ছনখড় মজুদ করে রাখতে হয়। কারণ আমাদের শিল্প খাত হিসেবে স্বীকৃতি না থাকায় ঋণ দেয় না কোনও ব্যাংক।
কুষ্টিয়া বিসিক’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, ‘ঝাড়ু বা বাড়ুন কুটির শিল্প হলেও কুষ্টিয়ায় এই শিল্পের কোনও স্বীকৃতি মেলেনি। আমি এখানে সম্প্রতি যোগ দিয়েছি। ইতোমধ্যে এলংগীপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রথমে তাদের স্বীকৃতি এবং পরে সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।’