চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালায় দুই সহোদর
`চানাচুররর…গরম গরম চানাচুর। একবার খান বারবার খেতে ইচ্ছে করবে’- মাদারীপুর শিবচরের বাংলাবাজর লঞ্চ ঘাটে প্রতিদিনই শোনা যায় এমন হাঁকডাক। যে বয়সে হাতে বই থাকার কথা সে বয়সে চানাচুর বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছে শিশু মিজান (১৪) ও বাপ্পী (১২)। সম্পর্কে তারা দুই সহোদর।
সোমবার (২৫ জানুয়ারী) দুপুরে সরেজমিনে দুই ভাইকে ওই ঘাটে চানাচুর বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ সময় চানাচুর খেতে খেতে জানা যায় তাদের কষ্টের কাহিনী। মিজান স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি ও বাপ্পী দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। পরে অভাবের তাড়নায় পড়াশুনা চালানো সম্ভব হয়নি।
মিজান জানায়, শিবচরের মাদবরেরচর ইউনিয়নের ফকিরকান্দি গ্রামের নিজেদের বসতভিটে ছিল। কিন্তু ৭/৮ বছর আগে সেটা পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এরপর বাবা মায়ের সাথে চলে আসেন বাংলাবাজার ঘাটের সাথে কুমেড়পার এলাকায়। সেখানে ভাড়া বাসায় থেকে বাবা বাবুল ফকিরও একই কাজ করতেন। এক বছর আগে বাবাকে হারায় তারা।
সে আরও জানায়, আগে সে বাবাকে সহযোগিতা করতো। তিন বছর ধরে পুরোদমে সে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। পরে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে ছোট ভাই বাপ্পীকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাট এলাকায় চানাচুর বিক্রি করে তারা। বাড়িতে মা আর এক ছোট ভাই চানাচুরের মসলা বানায়। প্রতিদিন দুই ভাই এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা বেচাবিক্রি করে। এতে তাদের আয় থাকে ৫০০-৬০০ টাকা।
মিজান জানায়, বাবা মারা যাওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পরে তারা সবাই। মাকেও অন্যোর বাড়িতে কাজ করতে দেয় না তারা। এখন তাদের আয়ে সংসার চালে প্রতি মাসে কিছু সঞ্চয়ও হয়।
ঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে চানাচুর বিক্রি করে প্রায় ২০ জন যুবক। লঞ্চে সিরিয়াল দিয়ে বিক্রি করেন তারা। কোনও কোনও দিন দুই থেকে তিনটি লঞ্চে চানাচুর বিক্রি করে তারা।
হায়দার আলী নামের এক যুবক জানায়, প্রতিদিন সেখানে ৪০/৪৫ জন হকার চানাচুর, ছোলা, মুড়ি বিক্রি করে। প্রদিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলে তাদের বিকিকিনি।