শ্রমিকদের আটকে রেখে মাছ ধরতে বাধ্য করার অভিযোগ

  • আলমগীর মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আটক শ্রমিকরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

আটক শ্রমিকরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

এ যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। রাঙামাটি শহরের উপকন্ঠে কাপ্তাই হ্রদেই চলছে এ বর্বরতা। শ্রমিকদের আটকে রেখে হ্রদে মাছ ধরতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে আটকে থাকা শ্রমিকরা নিজেদের দ্রুত উদ্ধার করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, সাতজন শ্রমিককে ঠিকমতো তিন বেলা ভাত খেতে দেওয়া হয় না। মাঝে মাঝে মরিচ মেখে ভাত দেওয়া হয় শ্রমিকদের। তীব্র শীতের মধ্যে নিশিরাতেও কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাদের। কথামতো কাজ না করলে জালের রশি টানার লাঠি দিয়ে এলাপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয়। এমনকি পাওনা টাকা পরিশোধ না করে জিম্মি রেখে প্রতিনিয়ত কেচকি জালের খোপে কাজ করানো হচ্ছে নীরিহ  এসব শ্রমিকদের।

বিজ্ঞাপন
মাছ ব্যবসায়ী হেলাল ও তার ভাগিনা নয়ন
মাছ ব্যবসায়ী হেলাল ও তার ভাগিনা নয়ন ছবি: বার্তা২৪.কম

অভিযোগ আছে, ক্ষমতাসীন দলের এক নেত্রীর প্রত্যক্ষ মদদেই চলছে এমন অমানবিক কর্মকান্ড। থাকা-খাওয়া নিশ্চিতের পাশাপাশি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নীরিহ হতদরিদ্র শ্রমিকদের এনে জিম্মি করে রেখে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার কাজে বাধ্য করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। রাঙামাটি শহরের কোতয়ালী থানাধীন কাপ্তাই হ্রদের ওপারে বালুখালী এলাকায় সাতজন শ্রমিককে নির্মম নির্যাতন করে জিম্মি রেখে জালের নৌকায় কাজ করাচ্ছে জনৈক হেলাল নামের এক মাছ ব্যবসায়ী।

জিম্মি শ্রমিকরা হলেন-  বরিশালের স্বরূপকাঠি থানাধীন ইন্ধারহাট ইউনিয়নের বিঞ্চুকাটি গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হাওলাদারের ছেলে মো. রহিম (৪০), ভোলার চরফ্যাশনের আমেনাবাদ এলাকার আব্দুস কুদ্দুসের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (১৭), ঝালকাটি জেলার কাঠালিয়া থানাধীন পাতিয়ালঘাটা ইউপি’র ৯নং ওয়ার্ডের জুলখালি গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে মো. রুবেল (১৮), কুমিল্লার দাউদকান্দির চশৈলপাল পাড়াস্থ হাজিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিলের ছেলে মো. জিসান (২২), দিনাজপুর জেলার বিরলথানাধীন ৯নং ইউপি’র মঙ্গলপুর গ্রামের ছিদ্দিক হোসেনের ছেলে নাসির (১৮), কিশোরগঞ্জ জেলাধীন ছাতির ইউপি’র ছাতির চর গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে মো. রাশেদ মিয়া (৩০) এবং চট্টগ্রামের চকরিয়ার ইলিশিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. ফরিদ (১৫)।

বিজ্ঞাপন
হ্রদে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আটক শ্রমিকরা
হ্রদে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আটক শ্রমিকরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

সম্প্রতি স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকরা সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তারা জানান, মাছ ব্যবসায়ী হেলাল তাদেরকে ঠিকমতো খাবার না দিয়ে একাধারে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে বাধ্য করে। এমনকি তারা অসুস্থ হলেও নূন্যতম চিকিৎসা করানো হয়না। প্রতিদিনই মরিচ মেখে ভাত খেতে দেওয়া হয়। এছাড়াও হেলালের ভাগিনা নয়নকে দিয়ে শ্রমিকদেরকে বেদড়ক পেটানো হয়।

এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া প্রতিবেদকসহ গণমাধ্যমকর্মীরা সরকারের জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে শ্রমিকদের জিম্মির বিষয়টি জানায়। পরবর্তীতে কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন থানার এসআই ওসমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠান। আর শ্রমিকদের উদ্ধারে থানা পুলিশের টিম সেখানে গেছে বলে জানান কোতয়ালী থানা কর্তৃপক্ষ। তবে মাছ ব্যবসায়ী হেলাল ও তার ভাগিনা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনার পর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সাংবাদিকরা ফিরে আসার পর শ্রমিকদের ধরে অজ্ঞাতস্থানে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ আছে, বালুখালীর তথাকথিত মেম্বার আছিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মাছ ব্যবসায়ী হেলাল ও তার ভাগিনা নয়ন একটি ইঞ্জিন চালিত বোটে করে শ্রমিকদের সরিয়ে নেয়।

কোতয়ালী থানার এসআই ওসমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা জিম্মিদশা থেকে শ্রমিকদের উদ্ধার করতে গেলেও ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি। তবে আমরা জানতে পেরেছি, হেলাল ও তার ভাগিনা নয়ন শ্রমিকদের বটতলাপাড়ার দিকে নিয়ে গেছে। বিষয়টি আমি আমার সার্কেল এসপিকে অবহিত করেছি এবং হেলালের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি জিডি করেছি।’