বসতভিটা হারিয়ে ৮ পরিবারের মানুষ এখন আশ্রয়হীন
সোনা মিয়া, জরিনা বেওয়া ও নুরুজ্জামানসহ ৮টি ছিন্নমূল পরিবারের মানুষদের বসবাস ছিলো ঘাঘট নদীর একটি দ্বীপে। এ দ্বীপেই যুগ যুগ ধরে বসবাস করছিলেন তারা। এরই মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ করে দেওয়া হয় তাদেরকে। এখন এইসব মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে।
সরেজমিনে শুক্রবার (০৫ মার্চ) দুপুরের দিকে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের ঘাঘট নদী ঘেঁষে পুরাণলক্ষীপুর দ্বীপে দেখা গেল আশ্রয়হীন-গৃহহীন মানুষদের আর্তনাদ। এসময় কেউ খোলা আকাশের নিচে, আবার কেউ কেউ অস্থায়ী জরাজীর্ণ ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
জানা যায়, কামারপাড়া ইউনিয়নের পুরাণলক্ষীপুর দ্বীপে সোনা মিয়া, জরিনা বেওয়া, জহুরুল ইসলাম, নজু মিয়া, নুর আলম মিয়া, নুরুজ্জামান, তাহের মিয়া ও আবু সাঈদ আকন্দ গংরা বাপ-দাদার আমল থেকে বসবাস করে আসছিলেন। তবে এই বসতভিটা ছাড়া অন্য কোন জমিজমা কিংবা অর্থ সম্পদ ছিল না তাদের। তারা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে ও দিনমজুরি শ্রমিক হিসেবে আয়-রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
এদিকে, ওইসব পরিবারের বসতভিটার মালিকানা নিয়ে অপর একটি পক্ষের সঙ্গে বিজ্ঞ আদালতে চলছিল আইনি লড়াই। মামলাটির বাদি ছিলেন একই গ্রামের জনৈক এক ব্যক্তি। এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে সম্প্রতি বাদি পক্ষে রায় দেন আদালত। এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১৭ দিন আগে ওই ৮ পরিবারকে আকস্মিকভাবে উচ্ছেদ করে দেন বাদি গংরা। এসময় ভেঙে ফেলা হয় ঘরবাড়ি। যেন চোখের সামনে নিমিষে শেষ হলো তাদের সহায় সম্বল। করার কিছুই নেই। কারণ, আইনের ঊর্ধ্বে গরিব-ধনী কেউ নয়।
বিদ্যমান পরিস্থিতির স্বীকার ৮ পরিবারের মানুষরা এখন বসতভিটা-ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নতুন করে জমি কিনে অন্য কোথাও ঘরবাড়ি বানাবে এমন সামর্থও নেই তাদের। আপাতত অন্যের জমিতে সেই ভাঙা ঘরের টিন দিয়ে এক চালা ঘর তোলা হলেও, এ ঘরে নেই কোন বেড়া। তবুও কোনোমতে বসবাস করে আসছে সেখানে। তাদের মধ্যে অনেকে বাস করছে খোলা আকাশের নিচে। এমনকি ঠিকভাবে দৈনন্দিন রোজগার না থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। যেন দুর্ভোগ বা কষ্টের সীমা নেই ভিটা হারা মানুষদের।
ভুক্তভোগী সোনা মিয়া বলেন, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। এরই মধ্যে হারাতে হলো বাপ-দাদার বাসতভিটা। এখন অন্যের জমিতে এক চালা ঝুপড়ি ঘর তুলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিনযাপন করছি।
আরেক ভুক্তভোগী জরিনা বেওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে স্বামী নইবর রহমান মারা গেছেন। তার রেখে যাওয়া ভিটায় কোনোমতে বসবাস করছিলাম। এখন সেই ভিটাটুকুও হারাতে হলো। ঘর তোলার মতো আর কোন জায়গা জমিও নেই। এমন কি জমি কেনারও সামর্থ নেই। তাই অন্যের জমিতে জরাজীর্ণ ঘরে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানান, ওই ৮ পরিবারের মানুষদের কথা শুনেছি। খতিয়ে দেখে সহযোগীতার চেষ্টা করা হবে।