বইমেলায় ক্ষোভ ঝাড়লেন প্রকাশকরা
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের দু'দিন আগেই ১২ এপ্রিল শেষ হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। শনিবার (১০ এপ্রিল) সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদকে উদ্ধৃত করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা চলার কথা ছিল।
সাধারণত প্রতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা শুরু হয়ে চলে পুরো মাস। এবার করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শুরু থেকেই অনিশ্চয়তায় পড়ে বইমেলা। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর একুশে বইমেলা ভার্চুয়াল বা অনলাইনে করার কথা উঠেছিল। পরে অনিশ্চয়তার রেশ কাটিয়ে গত ১৮ মার্চ উদ্বোধন করা হয় ৩৭তম অমর একুশে বইমেলার।
বইমেলা শুরুর পর থেকে মেলায় তেমন কোন বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল না চোখে পড়ার মতো। এবারের বইমেলায় করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মেলার আয়তনও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১৮ মার্চ উদ্বোধন হওয়ার পরে থেকে মেলা ছিল ক্রেতাবিহীন। তবে ছুটির দিনগুলোতে কিছুটা ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল।
গত ৫ এপ্রিল সোমবার থেকে সারাদেশে শুরু হয় সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের লকডাউন। এরপর থেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে বই প্রকাশকরা।
তাদের দাবি এবারের বই মেলায় তাদের আশানুরূপ বই বিক্রি হয়নি। তারা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন থেকেই তারা শঙ্কা করছিল নির্ধারিত সময়ের আগেই বইমেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার। তাদের সেই আশঙ্কাই আজ সত্যি হলো।
১২ এপ্রিল শেষ হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সরকারের এমন ঘোষণার পর প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা সবাই এবারের বইমেলার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক হুমায়ূন কবির বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের প্রতিদিন স্টল চালু করতে যে খরচ হয় তাও বই বিক্রি করে উঠাতে পারছি না। যত দ্রুত বইমেলা বন্ধ হবে ততই আমরা লোকসান থেকে রক্ষা পাব। এবারের বইমেলায় লাভজনক কিছুই পাইনি।
মেলায় অনুপম প্রকাশনীর ম্যানেজার শাহিন আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, স্টলের কর্মীদের বই মেলায় না রেখে বাংলাবাজারের দোকানে রাখলে লকডাউনে পাইকারি বিক্রি আরও ভালো হত। তাদের বাইরে মার্কেটিং করালেও ব্যবসার উন্নতি পেতাম।
মেলা জুড়ে গুটি কয়েকজন বইপ্রেমী দেখে তাদের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কম এর প্রতিবেদকের।
তিসান নামের এক এমবিএ করা শিক্ষার্থী জানায়, শাহবাগে একটি কাজ শেষ করে বইমেলায় এসেছি। বিশেষ কোন প্ল্যান ছিল না। করোনা তো তাই মেলায় আসার তেমন কোন মুড নেই। বন্ধুরা সবাই করোনা আতঙ্কে ঘরে বসে।
বইমেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবারের বই মেলার থেকে এবারের করোনাকালীন বইমেলায় আমরা প্রতিটি স্টল মালিকদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এবারের বইমেলায় প্রতিটি স্টল বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত টাকার ৫০% করে অর্থ নেওয়া হয়েছে। যা বিগত দিনে এমন সুযোগ কখনই ছিল না। তবে সরকার থেকে এখনও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি তাদের বিষয়ে। যদি সরকার থেকে তাদের ক্ষতিপূরণে প্রণোদনা দেওয়া হয় তাহলে তারা অবশ্যই পাবে।
উল্লেখ্য, শুরুতে শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং অন্যান্য দিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলছিল। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এখন সময় কমিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও বইমেলা বন্ধ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতেও প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একুশে বইমেলা চলছে।