পুরাতন ক্ষত না সারতেই নতুন ক্ষতের পূর্বাভাস!

  • মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এক বছর কাটতে না কাটতেই ফের ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ধেয়ে আসছে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের দিকে। সর্বশেষ আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতি এখনো কা‌টিয়ে উঠতে পা‌রে‌নি উপকূলবাসী, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ফের ক্ষয়ক্ষ‌তির আশঙ্কা করছে সবাই।

বিভাগীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলার নদীর তীর ও বেড়িবাঁধের পাশে প্রায় ২০ লক্ষা‌ধিক মানুষের বসবাস। গত ১৫ বছর ধরে খুলনার এসব উপকূলীয় অঞ্চলে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারংবার মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাড়ছে জোয়ারের পানি

এরম‌ধ্যে উল্লেখযোগ্য, ২০০৮ সালের মে মাসে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। যার ক্ষত থেকে এখনও সেরে ও‌ঠতে পাড়েনি উপকূলবাসী। পুরাতন ঝড়ের ক্ষত না সারতেই নতুন ঝড় ইয়াসের চোখ রাঙানি‌তে শ‌ঙ্কিত উপকূলবাসী।

উপকূলকবাসীদের অ‌ভি‌যোগ, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতের পর এক বছর কেটে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই বেড়িবাঁধ না হওয়ায় নতুন করে উপকূলীয় জনপদ প্লা‌বিত হতে পারে। দুর্বল বেড়িবাঁধে নামমাত্র সংস্কার করা হয়, তাই নিত্যনতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলীয় এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ হয় না। প্রতিবছর জীবন-জী‌বিকার জন্য নতুন সংগ্রাম চা‌লি‌য়ে যেতে হয়।

বিজ্ঞাপন

উপকূলীয় দাকোপের বা‌সিন্দা ইসমাইল উ‌দ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, উপকূলের মানুষ সব সময়ই ঝুঁকি‌তে থাকে। এ‌ক‌দি‌কে প্রতিবছর নতুন নতুন ঝড়, আবার ঝড় থেমে গে‌লেও বাঁধ সংস্কারে বছরজু‌ড়ে সংগ্রাম লে‌গেই থাকে। উপকূ‌লের বা‌সিন্দারা যতই ক‌ষ্টে থাকুক, কর্তৃপক্ষ কখ‌নোই তা চো‌খে দেখে না। কারণ ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্রপল্লীতে।

বাঁধ ছুঁই ছুঁই পানি

উপকূলীয় কয়রার আবু সাঈদ বলেন, প্রাকৃ‌তিক দুর্যোগ কবলিত উপকূলীয় জনপদের মানুষ একটি ঝড়ের ক্ষতি সা‌রিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের নতুন ঝড় আঘাত হানে। প্রলয়ঙ্করী এসব ঘূর্ণিঝড় যেনো লণ্ডভণ্ড করতেই আসে।

জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙন সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। ষাটের দশকে উপকূলীয় এলাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধগু‌লো সবশেষ ২০২০ সা‌লের আম্ফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। টিকে থাকার স্বার্থে মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে অনেক জায়গায় রিং-বাঁধ দেয়। নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। রিং বাঁধ দেওয়া হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি।এখন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর খবরে নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলবাসী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ রয়েছে এক হাজার ৬৫০ কিলোমিটার। এরম‌ধ্যে ষাটের দশকে মাটির তৈরি এসব বেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। কিন্তু অধিকাংশ স্থানে এখন তার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে প্রায় একশ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

নদীতে বাড়ছে জোয়ারের পানি ও উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে বড় সমস্যা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্বল বেড়িবাঁধ। বাঁধগুলো অ‌নেক পুরাতন তাই এখন নাজুক। নানা কারণে বাঁধগুলোর সক্ষমতা কমেছে স্বীকার করেন তি‌নি। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে ৪৮০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য সাতটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এগু‌লো বাস্তবায়ন হলে উপকূলের দুর্দশা কমবে ব‌লে আশা প্রকাশ ক‌রেন তি‌নি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত ব‌লেন, উপকূলীয় অঞ্চ‌লের পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাটির কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাঙন বাড়ছে, বাঁধগুলো টিকছে না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবাধ জোয়ার-ভাটার (টিআরএম) মাধ্যমে ভূমি উঁচু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।