'বেক্সিমকোর চাপে সরকার টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারে নাই'

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। 

করোনার ভ্যাকিসন নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, টিকা ব্যবস্থাপনায় শুরু থেকেই নয় ছয় দেখেছি। বেক্সিমকোর চাপের কারণে সরকার টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারে নাই। যদিও রাশিয়া ও চীন আমাদের সাথে চুক্তি করতে চেয়েছিল। টিকা বিক্রি করে সরকারি দলের এক অতি ক্ষমতাসীন ব্যক্তির লাভের জন্য রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলেছে।

বিজ্ঞাপন

এ সময় তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেও বিগত ১০ বছরের স্বাস্থ্য সেবায় এডিপি বাস্তবায়ন এই বছরের সবচেয়ে কম। প্রথম ১০ মাসে বরাদ্দের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। এরপর নতুন করে বরাদ্দ বাড়ানো কতটুক যৌক্তিক সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। 

রোববার (৬ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাকালে দেয়া বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ, ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমার’। করোনাকালে উন্নয়নের সঙ্গা ছিল জীবন এবং জীবিকা। এই দুই খাতে ভীষণভাবে লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়েছে ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট। সম্পূরক বাজেটে ১৯ টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধির তালিকা দেয়া হয়েছে। তাতে যে সকল মন্ত্রণালয় বাদ পড়েছে সে সকল মন্ত্রণালয় হচ্ছে- কৃষি, সমাজ কল্যাণ,  শ্রম ও কর্মসংস্থান, খাদ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসস্থান মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে কৃষিতে বরাদ্দ ছিল অপ্রতুল। এই বাজেটে আরো কমেছে। খাদ্য শস্যের আমদানি সাম্প্রতিক অতীতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে। কিছু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি করার কথা বললেও দেখা যাচ্ছে চলতি অর্থবছরে প্রথম দশ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেও বিগত ১০ বছরে স্বাস্থ্য সেবায় এডিপি বাস্তবায়ন এই বছরের সবচেয়ে কম। প্রথম ১০ মাসে বরাদ্দের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। অথচ করোনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব ছিল স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

তিনি বলেন, অর্থ খরচে এতো অদক্ষতা দেখিয়েছি সেই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানো যে কি? সেটা দেশের মানুষ ভাল জানে। বরাদ্দকৃত অর্থ খরচে স্বাস্থ্য খাতে ন্যূনতম কোন প্রতিফল দেখতে পাইনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী বাজেটে মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে হওয়া উচিত। অথচ আমাদের বরাদ্দ ছিল জিডিপির মাত্র দশমিক ৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে সব চেয়ে কম বরাদ্দ। আবার যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেটাও কেন ঠিক ঠাক ব্যয় করা গেল না সেটা নিয়েও প্রশ্ন থাকে।

তিনি আরো বলেন, চিকিৎসা সেবা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিখাতে ব্যয় কমার বদলে ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাড়িয়েছে ৭২ শতাংশে। স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যায়। টিকা ব্যবস্থাপনায় শুরু থেকেই নয় ছয় দেখেছি। সব ডিম এক ঝুঁড়িতে রাখার ফল হয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট ৬ মাসে দেড় কোটি ডোজ টিকা দেবার কথা থাকলেও এবং সেই টিকার মূল্য পরিশোধ করার পরেও টিকা আসছে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ। অন্যদিকে বেক্সিমকো লাভ করে ৩৮ কোটি টাকা। নিজের ব্যবসায়ী স্বার্থ রক্ষায় সরকার বেক্সিমকোর চাপের কারণে টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারে নাই। যদিও রাশিয়া ও চীন আমাদের সাথে চুক্তি করতে চেয়েছিল। সরকারি দলের এক অতি ক্ষমতাসীন ব্যক্তির লাভের জন্য রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলেছে।

রুমিন ফারহানা প্রথম আলোর জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম এর মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, যখন এখন ‘এক কোটি দেব পরে আরো এক কোটি পাবেন’ এবং স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম দুর্নীতি তুলে ধরেছেন তখন তাকে চরমভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে। মানুষের চিন্তা বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তি গণমাধ্যমের স্বার্থে প্রথম আলোর জেষ্ঠ্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। রোজিনাকে ৬ ঘণ্টা ধরে যে হেনস্থা করা হলো যারা এই জন্য দায়ি তাদের ব্যপারে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে সেটাও জানতে চাই। কোন গণমাধ্যমকে রিপোর্ট প্রকাশ করার জেরে হেনস্থার শিকার হতে হয় নানারকম হুমকির মুখে পড়তে তখন আর কোন গণমাধ্যমই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২ তম। মিয়ানমার এবং আফগানিস্তানের অবস্থান তার চাইতে ভালো।

তিনি বলেন, এই দেশে উন্নয়ন হয়েছে গুটি কয়েক মানুষের। ধনী আরো ধনী হয়েছে। গরিব আরো গরিব হয়েছে বৈষম্য আরো বেড়েছে। করোনায় দারিদ্রের সংখ্যা ২০ শতাংশ থেকে বাড়ে দাড়িয়েছে ৪২ শতাংশে।