বেনাপোল বন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, (বেনাপোল) যশোর
বেনাপোল বন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

বেনাপোল বন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

  • Font increase
  • Font Decrease

বেনাপোল স্থলবন্দরে ব্লিচিং পাউডারবাহী ভারতীয় ট্রাকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানাবেন।

মঙ্গলবার (৮ জুন) বিকাল ৫ টায় বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এর আগে সোমবার (৭ জুন) সন্ধ্যা ৭ টায় বন্দরের ৩৫ নম্বর পণ্যগারের সামনে মহাসড়কের ওপর দাড়িয়ে থাকা এ ট্রাককে আগুন ধরে মালামালসহ ট্রাকটি সম্পূর্ণ ভষ্মিভুত হয়। পরে এক ঘণ্টা চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে গত বছরের মত আবারো বেনাপোল বন্দরে আগুনে পুড়েছে আমদানি পণ্য ব্লিচিং পাউডারবাহী ভারতীয় ট্রাক। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এনিয়ে গত দুই দশকে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে বড় ধরনের ৯ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে টনক নড়েনি বন্দর কর্তৃপক্ষের। অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও জনবল না থাকায় বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়ে পথে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বন্দরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জনবল বাড়ানোর বিষয়ে এর আগেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান তার জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন তারা।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বন্দরের ১০ নম্বরসহ ১০টি পণ্যগারে আগুনে পুড়ে ক্ষতি হয় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য, ২০০১ সালে ২৬ নম্বর পণ্যগারে
অগ্নিকাণ্ড ক্ষতি হয় ৩০ কোটি, ২০০৫ সালে ১০ ও ৩৫ নম্বর পণ্যগারে আগুনে ক্ষতি হয় ৭০ কোটি, ২০০৯ সালের পহেলা জানুয়ারিতে ৩৫ নম্বর পণ্যগারে আগুনে ক্ষতি হয় প্রায় ৫০০ কোটি, একই বছরের ২২ জুন ২৭ নম্বর পণ্যগারে আগুনে ক্ষতি হয় ১৫০ কোটি, ২০১৬ সালে ২ অক্টোবরে ২৩ নম্বর পণ্যগারে আগুনে পুড়ে ক্ষতির পরিমাণ দাড়ায় আনুমানিক  ৫০০ কোটি টাক, ২০১৮ সালের ৬ জুন বন্দরের ২৫ নম্বর শেডে আগুন ধরে এক ট্রাকের পণ্য নষ্ট হয়। ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালে এ আগুনের ঘটনায় প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায়। ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট বন্দরের ৩৫ নম্বর শেডে অগ্নিকাণ্ড প্রায় ৫০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায় এবং সর্বশেষ গত ৭ জুন বেনাপোল বন্দরের ৩৫ নম্বর পণ্যগারের সামনে মহাসড়কের ওপর দাড়িয়ে থাকা ভারতীয় ব্লিচিং পাউডারবাহী ট্রাকে আগুন লেগে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয় ব্যবসায়ীদের। এছাড়া ছোটখাটো আরও ৫ থেকে ৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এ সময়ে।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্যের ধারণ ক্ষমতা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সেখানে সব সময় আমদানি পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। বন্দরে জায়গা সংকটে অনেক সময় সাধারণ পণ্যগারে কেমিক্যাল পণ্য রাখা হয়। এতেই আগুনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। আর যখন আগুন ধরে তখন বন্দরের পর্যাপ্ত জনবল ও সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় নেভানোর আগেই সব পুড়ে শেষ হয়ে যায়।

বর্তমানে এখানে আমদানি পণ্য রক্ষানাবেক্ষণে ৪৪টি পণ্যগার, ৪ টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি রপ্তানি টার্মিনাল ও একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল ও একটি আমদানিকৃত চ্যাচিজ রাখার টার্মিনাল রয়েছে।যেখানে ১৬৩ জন আনসার সদস্য,বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী পিমার ১০৩ জন ও এপিবিএন নামে একটি নিরাপত্তা সংস্থার ২০ সদস্য আমদানি পণ্যের রক্ষানাবেক্ষণে ও নিরাপত্তায় কাজ করছে। তবে এসব চাহিদার তুলনায় অনেকাংশে কম।

এ সময় তিনি আরো জানান, তিন বছর ৩ আগে বেনাপোল বন্দরের ২৩ নম্বর পণ্য গুদামে তার আমদানিকৃত প্রায়  ২৫ লাখ টাকা মূল্যের পণ্য আগেুনে পুড়ে ছাই হয়। এতে এক প্রকার তার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ক্ষতিপূরণের আবেদন করলেও এখনও কিছু পাননি তিনি। 

স্থানীয় আমদানি কারক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনের অভিযোগ, পণ্যগারে জায়গার অভাবে খোলা আকাশের নিচে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রাখা হচ্ছে মূল্যবান আমদানি পণ্য। এতে প্রায়ই চুরি হচ্ছে পণ্য। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের আগে বন্দরের পণ্যগার থেকে চুরি বেড়ে যায়। আর যখন চুরির পরিমাণ বেড়ে যায় তখন বাঁচতে বন্দরের স্টোর কিপাররা ইচ্ছা করেই পণ্য গুদামে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে প্রচার করে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট আগুন লেগেছে। ধামা চাপা পড়ে যায় চুরির ঘটনা। গত দুই দশকে এনিয়ে ৯ বার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে কয়েকশ আমদানিকারক। বিভিন্ন আইনি জটিলতায় টাকা না পেয়ে ব্যবসা বন্ধ হয়েছে অনেকের।

আমদানি কারক চেীধুরী এন্টারপ্রাইজের মালিক বিলাল চৌধুরী জানান, বছর ৭ আগে বেনাপোল বন্দরের পণ্য গুদামে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড তার ১৫ লাখ টাকার আমদানি পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তিনি ক্ষতিপূরণের আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত কোন টাকা পায়নি। এমন কি বন্দর কর্তৃপক্ষ আগুনের কারণও তাকে জানায়নি। ওই ঘটনার পর থেকে পুঁজি হারিয়ে আর তিনি ব্যবসা করতে পারেননি।

বেনাপোল পৌর ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা রতন কুমার দেবনাথ জানান, বন্দরে আগুন লাগলে তারা সাহায্যে এগিয়ে যায়। তবে খবর পেতে দেরি হলে তাদের কিছু করার থাকেনা। গত ৭ জুলায় বন্দরে ভারতীয় ট্রাকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তারা লোক মুখে খবর পান। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়নি। আগুন নেভানোর আগেই ট্রাক ও মালামাল পুড়ে শেষ হয়ে যায়। খবর যদি আগে পেতাম হয়তো কিছুটা ক্ষতি কম হতো।

বেনাপোল বন্দরের ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান জানান, এত বড় স্থলবন্দরে মাত্র ৪ জন জনবল নিয়ে তাকে কাজ করতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটলে আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়। বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত জনবল নিয়োগ হয়নি। বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের  ঘটনা ঘটলে যশোর, মনিরামপুর ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতা নিয়ে বন্দরের আগুন নেভাতে হয়।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার মঙ্গলবার (৮ জুন) সন্ধ্যায় জানান, বন্দরে ফায়ার সার্ভিস অফিসে প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগে বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে নিদিষ্ট পণ্যগারে পণ্য নামানোর ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম হতো। তবে এখন নিয়ম মেনেই স্টোর কিপাররা পণ্য নামিয়ে থাকেন। বন্দরে পণ্য চুরি একেবারে নেই বললে চলে। আগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিপূরন পায় তার জন্য চেষ্টা করে থাকেন তিনি। তবে নানান প্রতিবন্ধকতায় ক্ষতিপূরণ পাওয়া জটিল হয়ে দাড়ায়। সর্বশেষ ভারতীয় ট্রাকে আগুনের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।

আপাতত ধারণা করা হচ্ছে ব্লিচিং পাউডারে পানি পড়ে তেজক্রিয়া হয়ে আগুন ধরেছে। তবে তদন্ত শেষে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণও ক্ষতির পরিমাণ জানানো হবে।

   

হাসপাতালের এক্সরে মেশিন নষ্ট, ভোগান্তিতে রোগীরা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী 
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নীলফামারীর সৈয়দপুরের ১০০ শস্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে হাত এক্সরে করাতে এসে মমতা বেগম শুনেন, সরকারি হাসপাতালে এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। বাইরের হাসপাতালে এক্সরে করাতে বেশি টাকা লাগে যা বহন করা কষ্টসাধ্য।

হাসপাতালটিতে এক্সরে মেশিন টানা ২০ দিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় সেবা-বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েকশত মানুষ৷ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ফি দিয়ে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করছেন রোগীরা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ২০০ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন এ হাসপাতালে। একদিনে দুর্ঘটনাসহ হাত-পা ভাঙা নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসেন গড়ে ২০-২৫ জন। গত ১৬ এপ্রিল হঠাৎ এক্সরে মেশিনের ইউপিএস নষ্ট হওয়ার কারণে অচল হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত মেশিনটি অচল হয়ে আছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক্সরে করতে আসা রোগীরা মেশিন নষ্ট হওয়ায় ফেরত যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রুমের দরজায় একটি চিরকুটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাময়িক সময়ের জন্য এক্সরে বন্ধ আছে লিখে রেখেছেন। বিশেষ করে দূর থেকে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।  

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী হালিম বলেন, আমার ছোট বাচ্চা অসুস্থ। বাসায় খেলার সময়ে পড়ে গিয়েছিলো খুব কান্নাকাটি করছে। হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শে এক্সরে করাতে আসলাম  এসে শুনি মেশিন নষ্ট এখন বাইরে বেশি টাকা দিয়ে এক্সরে করাতে হবে। 

আরেক রোগী জিয়ারুল হক বলেন, এখানে এক্সরে করতে আসলাম এসে শুনি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। পরশুদিন এসেও আমি ঘুরে গেছি; আজকেও মেশিন ঠিক হয়নি ৷ এখানে করলে আমারা সুবিধা পাই। বাইরে করাতে গেলে বেশি টাকাও লাগে কষ্টও হয়।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর ১০০ শস্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার নাজমুল হুদা বলেন, এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়েছে। আমরা এটি দ্রুত চালু করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। 

;

শ্রমিক দিবসে স্বামীর হাতে নারী শ্রমিকের মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান মে দিবসে পারিবারিক কলহের জেরে সাভারের আশুলিয়ায় স্বামীর বেধরক মারধরে পোশাক শ্রমিক স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। 

বুধবার(০১ মে) সন্ধ্যায় আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

নিহত ময়না বেগম(৬০) আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচট এলাকায় পরিবারের সাথে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি স্থানীয় গ্রামীণ নিটওয়্যার লি. পোশাক কারখানায় ক্লিনার পদে চাকরি করতেন ।

গ্রেফতারকৃত স্বামী তৈমুর রহমান(৬৫) পেশায় দিনমজুর। তাদের গ্রামের বাড়ি নওগা জেলার নিয়ামতপুর থানার নিরাপাড়া গ্রামে।

নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিকালে পারিবারিক কলহের জেরে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ময়না বেগমকে মারধর করে তার স্বামী। পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের শরীরে কিল-ঘুষির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।

আশুলিয়া থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বদিউজ্জামান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিবারে আর্থিক অনটন নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ চলে আসছিল। নিহতের পরিবার বাদি হয়ে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।



;

ফেসবুকে কম দামে ইলিশ বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনীসহ সারাদেশে অনলাইনে কমদামে ইলিশ মাছ বিক্রির নামে চলছে অভিনব প্রতারণা। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নামে-বেনামে পেইজ খুলে বাজার-মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক ও অকল্পনীয় কমদামে ইলিশ মাছ বিক্রির নামে প্রতারণার নতুন কৌশল শুরু করেছে একটি চক্র।

বাজারে এক কেজি ওজনের যে মাছের দাম ২ হাজার থেকে ২২শ টাকা; ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’, ‘চাঁদপুরের ইলিশ’, ‘ইলিশ বাজার’, ‘মাছের আড়ত চাঁদপুর’ নামে বিভিন্ন পেইজে তেমন ৬ পিসের ৬ কেজি ওজনের মাছের মূল্য দেখাচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩৩শ টাকা।

পেইজগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপন আর লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। অর্ডার কনফার্ম করার নামে ডেলিভারি চার্জ ও মাছের বাক্সের খরচ বাবদ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা অগ্রীম আদায় করছে পেইজগুলো। এরপর নির্দিষ্ট সময় পার হলেও মাছ পাঠানো দূরে থাক, ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় প্রতারক চক্রগুলো। এমন তথ্যের অনুসন্ধানে বের হয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইলিশ মাছ লিখে সার্চ দিলেই ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর, ইলিশ বাজার, চাঁদপুরের ইলিশসহ বিভিন্ন নামে একাধিক পেইজের সন্ধান পাওয়া যায়। এতএত পেইজের ভিড়ে কোনটি আসল কোনটি নকল বুঝে উঠা দায়! তবে অধিকাংশ পেইজের বিক্রির কৌশল ও ধরণ একই।

ক্রেতাদের বিশ্বাস যোগাতে একই ধরনের পোস্ট ও সে পোস্টে নিজেদের লোকজন দিয়ে পণ্য বুঝে পাওয়ার কমেন্ট বা ভালো রিভিউ করায় পেইজগুলো। এসব রিভিউ দেখে তাদের ফাঁদে পা দিলেই ক্রেতার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় অর্ডার কনফার্মের অগ্রিম টাকা।

পেইজগুলো ঘুরে দেখা যায়, সাইজ ও পরিমাণের ভিত্তি করে ৬ কেজি ইলিশ মাছের দাম দেখানো হয় ১৬শ টাকা থেকে ৩৩শ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে কেজি প্রতি ২৬৬ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা দাম দেখানো হচ্ছে; যা কোনভাবেই বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পেইজগুলোতে ১কেজি ওজনের ৬টি মাছের মূল্য ৩৩শ টাকা, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ৮ টি মাছের মূল্য ২৯শ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ১২টি মাছের মূল্য ১৯শ টাকা, ৩৩০ গ্রাম ওজনের ১৮ টি মাছের মূল্য ১৬শ টাকা দেখানো হচ্ছে। এছাড়াও ৬ কেজি ইলিশ মাছের ডিমের মূল্য ২৯শ টাকা উল্লেখ করা হয়।

সম্প্রতি অনলাইন থেকে মাছের অর্ডার করে প্রতারিত হয়েছেন ফেনী শহরে বাসিন্দা বদরুল আলম। বার্তা২৪ কে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা ইলিশ মাছ খেতে পছন্দ করে। বাজারে ইলিশ মাছের দামের তুলনায় অনলাইনে কমদামে ইলিশ বিক্রির পোস্ট দেখে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর পেইজে দেয়া নম্বরে কল করে ১০ কেজি মাছের অর্ডার করি। কুরিয়ার চার্জ ও বাক্সের বাবদ ৫৫০ টাকা বিকাশে পেমেন্ট করি। দুদিন পর হঠাৎ কল করে বলে আপনার মাছ ফেনীতে এসে পৌঁছেছে। ৫ মিনিটের মধ্যে বিকাশ বা নগদে মাছের মূল্য পরিশোধ করুন। কুরিয়ার সার্ভিস ম্যানের কাছে দাম পরিশোধ করে মাছ বুঝে নেব বললে সে গরম হয়ে ফোন কেটে দেয়। এরপর একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।’

আরাফাত হোসেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে যে মাছ কেজি ২ হাজার টাকা অনলাইন সে মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায়। কমদাম দেখে ৬ কেজি ইলিশ মাছ অর্ডার করেছিলাম। ডেলিভারি চার্জের বাবদ বিকাশে ৫৫০ টাকা দেয়ার পর ওই নাম্বারে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে  না। পেইজে মেসেজ দিলেও কোনো উত্তর মিলছে না। পরে বুঝলাম প্রতারকের খপ্পরে পড়েছি।’

তাসমি আক্তার নামে এক গৃহিণী বলেন, ‘বেশ কয়েক মাসে আগে এরকম একটি পেইজে মাছের অর্ডার করে মাছও পেলাম না অগ্রীম পাঠানো ৪০০ টাকাও ফেরত পাইনি।’

ফেনী ডাক্তার পাড়ার বাসিন্দা বাবু ভুঁইয়া নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এদের প্রতারণার ধরণও খুব ইউনিক। আপনি যখন পেইজের নাম্বারে কল দিবেন। প্রথম কয়েকবারে এরা কল ধরবে না। পরে কল ব্যাক করে সুকৌশলে কাস্টমার থেকে ডেলিভারি চার্জ বাবদ টাকা হাতিয়ে নেয়। দ্বিতীয় ধাপে মাছ নির্দিষ্ট এলাকায় এসে গেছে বলে টাকা দাবি করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্রেতারা দ্বিতীয় ধাপে টাকা দিতে রাজি হন না। তবে ডেলিভারি চার্জের টাকাও আর ফেরত পান না।

এ বিষয়ে ফেনী বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রহিম উল্ল্যাহ বলেন, ‘অনলাইন সম্পর্কে আমার ধারণা কম। তবে মাঝে মাঝে কিছু ক্রেতা বলেন অনলাইনে আমাদের থেকে অনেক কমে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। ২২শ টাকায় মাছ বিক্রি করে দুই একশ টাকা লাভ করতে কষ্ট হয় আমাদের। আমার বুঝে আসে না এরা ৫শ টাকায় কেমনে ইলিশ মাছ বিক্রি  করে।’

অনলাইনে কম দামে মাছ বিক্রির পোস্ট দেখে প্রতারিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পৌর হকার্স মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী মিলন। তিনি বলেন, অনলাইনে কমদামে মাছ বিক্রির পোস্ট ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে বাজারে এসে দেখে-শুনে মাছ ক্রয় করা উত্তম।

অনলাইনে পণ্য কিনে মানহীন পণ্য সরবরাহ ও সঠিক পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ বেশ পুরোনো।  তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাম্প্রতিক শুরু হওয়া কম দামে ইলিশ কিংবা সাগরের মাছ বিক্রির প্রতারণা রোধে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

;

চাকমা তরুণীকে চীনে পাচারের অভিযোগে মামলা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পাহাড়ি চাকমা তরুণীকে তুলে নিয়ে রাজধানীতে আটকে রেখে চীনে পাচারের অপচেষ্ঠা করছে উল্লেখ করে এবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগীর বোন। বুধবার (১ মে) বিকেলে তরুণীকে উদ্ধারের আকুঁতি জানিয়ে রাঙামাটির নানিয়ারচর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়।

এই মামলায় পাহাড়ি চার নারী পাচারকারী ও চারজন পুরুষ পাচারকারিসহ মোট আটজনের নাম উল্লেখ করে আরো ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। নানিয়ারচর থানা পুলিশ মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে। তদন্তের স্বার্থে আসামিদের বিস্তারিত জানাতে অপারগতা জানিয়েছে থানা পুলিশ।

মামলার এজাহারে ভিকটিমের বোন উল্লেখ করেন, তারই ছোট বোন ২১ বছর বয়সী বিউটি চাকমাকে (ছদ্মনাম) নার্সিংয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে গত ১ এপ্রিল  ঢাকায় নিয়ে যায়। প্রথমে রাঙামাটির নানিয়ারচর থানাধীন বুড়িঘাট ইউনিয়নের গর্জণতলী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বের করে নানিয়ারচরের ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের জুরাছড়ি বেনুবন এলাকায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে সেখান থেকে তাকে মাইক্রোবাস যোগে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, মাইক্রোবাসে যাওয়ার সময় আসামিদের কথাবার্তায় নার্সিং পড়তে যাওয়া বিউটি চাকমা বুঝতে পারেন তিনি নারী পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়েছেন।

মামলার এজাহারে তরুণীর বড়বোন বলেন, জনৈক রিকা চাকমার নেতৃত্বে একদল নারী পাচারকারি বিউটিকে চীনের নাগরিকের সাথে জোর করে বিয়ে দেয় এবং তার সাথে আপত্তিকর ছবিও তোলে। রাজধানীর অজ্ঞাতস্থানে বন্দি অবস্থা থেকে যেকোনো সময় তাকে চীনে পাচার করে দেওয়া হতে পারে।

গত ৭ এপ্রিল বিউটি তার বড়বোনকে ফোনে এসব তথ্য জানিয়ে তাকে উদ্ধারের আঁকুতি জানায়। বিষয়টি লিখিত আকারে নানিয়ারচর থানা পুলিশকে অবহিত করে মানবপাচার মামলা করে ভুক্তভোগীর বড় বোন।

নানিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ আজম উদ্দিন মাহমুদ মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে জানান, ভুক্তভোগীর বোনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মানবপাচার ও প্রতিরোধ আইন ২০১৮ এর ৬/৭/৮ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলা নং-১ তারিখ: ০১/০৫/২০২৪ইং। এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহাম্মেদ জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ি নারীদের চীনে পাচারের খবরে টনক নড়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। ইতিমধ্যে পাচার চক্রের সদস্যদের ধরতে কাজ শুরু করেছে রাঙামাটির পুলিশ।

প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদ মাধ্যমে পাহাড় থেকে নারীদের চীনে পাচারের বিষয়টি রাঙামাটির পুলিশের নজরে এসেছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর মন্তব্য করে এই বিষয়ে আমলে নিয়ে পুলিশ নিষ্ঠার সাথেই তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি চাকমা তরুণীকে চীনে পাচারের মূল হোতা ঢাকা উত্তরার ১৪ সেক্টরে বসবাস করা রিকা চাকমা নামের একজন চাকমা নারী। তার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলাধীনর রাঙ্গাপানি ছড়া গ্রামে। এই মামলায় তার সাথে রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন সাপছড়ি ইউনিয়নের কামারপাড়ার এক পুরুষ ও একজন নারী, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার উদাল বাগান এলাকার দুই নারীসহ অজ্ঞাত ঠিকানার দু’জন পুরুষের নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

;