‘দিন-রাত বৃষ্টি হলেও পানি যাতে নেমে যায় সেই মহাপরিকল্পনা নিচ্ছি’

  • শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দিনের এই পুঞ্জিভূত সমস্যার সমাধানে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার পাশাপাশি চলছে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনাও।

জলাবদ্ধতা নিরসনে সেই পরিকল্পনা কী? নগরবাসী কবে থেকে জলাবদ্ধতামুক্ত মহানগরী দেখতে পাবেন- বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

মেয়র বলেছেন, জাদুর কাঠি তো কারো কাছে নেই, আলাদিনের চেরাগও নেই। তবে এটুকু বলতে পারি আমরা কোন সময়ক্ষেপণ করি নাই। যেদিন থেকে দায়িত্ব পেয়েছি, সেদিন থেকেই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে চলছি। যার সুফল নগরবাসী পেতে আরাম্ভ করেছে।

বার্তা২৪.কম: রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘ দিনের এই পুরনো দুর্ভোগ নিসরনে আপনার পরিকল্পনা কি?

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস: জলাবদ্ধতা নিরসনে আমি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয় সোচ্চার হওয়ার কারণে দীর্ঘদিনের অবহেলিত বিষয়টা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাহেব নজর দেন। এবং তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেওয়ায় আমরা খালগুলো ওয়াসা থেকে পেয়েছি। এরপর আমরা সাথে সাথেই কাজ আরম্ভ করেছি। এ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় প্রায় ১০ লাখ টন পলি এবং বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা ওয়াসা থেকে যে নর্দমা, নালাগুলো পেয়েছি, শাখা প্রশাখা, অন্তর্জাল সেগুলো আমরা পরিষ্কারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এরই মাঝে যে খাল ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কার করেছি সেটার সুফল ঢাকাবাসী পাওয়া আরম্ভ করেছে। আগে পানি নিষ্কাশনে যে সময় লাগতো, এখন তার চেয়ে অনেক কম সময় লাগছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন কিছুদিন আগে ঢাকাতে ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়া সত্বেও তিন ঘণ্টার মধ্যেই মোটামুটি ঢাকা শহরের পানি সরে গেছে। এটার কারণ হলো পানি প্রবাহ বা পানি নিষ্কাশনের জায়গা পাচ্ছে। আমরা অন্তর্জালগুলো, নালা-নর্দমা যদি পুরোদমে পরিষ্কার করতে পারি তাহলে এটার সুফল আরও পাবে। কিন্তু এটাই সমাধান নয়। সমাধান হলো দীর্ঘমেয়াদি।

যেদিন থেকে দায়িত্ব পেয়েছি, সেদিন থেকেই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে চলছি- মেয়র তাপস

বার্তা২৪.কম: জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাটা কী?

বিজ্ঞাপন

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস: আমরা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। যেটার মাধ্যমে ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড, ঐতিহাসিক যে তথ্য রয়েছে সেটার ওপর নির্ভর করে ধারণক্ষমতা ও সক্ষমতা সেভাবে বৃদ্ধি করতে চাই। যাতে করে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হলেও দ্রুত পানি নেমে যায়। এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৩৩ মিলিমিটার। তাই ঢাকা শহরে ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও যদি হয় বা সারা দিন রাত ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টিও যদি হয় তাহলে সেই বৃষ্টির পর পানি যাতে উপরিভাগে জমে না থাকে, একটু সময় নিলেও সেটা যেন ভূগর্ভস্থ জায়গায় চলে যেতে পারে এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে নিষ্কাশিত হতে পারে, সেই অবকাঠামোর উন্নয়ন করছি। কারণ ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি হবেই, ঢাকা শহরের উন্নতি হবে, আবাসন বাড়বে, চাপ বাড়বে সুতরাং আমরা এমন কিছু করতে চাই না এখন করলাম ৫ বছর পরেই আবার একই সমস্যা বিরাজমান থাকে। সুতরাং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় আমরা সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা সৃষ্টি করলে আগামী ৫০ বছর ঢাকাবাসীকে সুফল দিবে। সেই লক্ষ্যে নিয়েই মহাপরিকল্পনার আওতায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সাজাচ্ছি।

এরজন্য অবশ্যই অর্থায়ন লাগবে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাছে অর্থায়ন চাইবো। টাকা পেলে সেই কার্যক্রম হাতে নেব, কিন্তু তাই বলে আমরা এখন বসে নেই। আমরা স্বল্পমেয়াদি কাজ হাতে নিয়েছি। এখন যে ধারণ ক্ষমতা আছে সেটা যেন সঠিকভাবে ব্যবহৃত করা যায় সেই লক্ষ্যে সকল নালা-খাল পরিষ্কার করে যাচ্ছি। মধ্যমেয়াদি কাজের অংশ হিসাবে যেখানে যেখানে সংযোগের অবকাঠামো নেই বা নষ্ট হয়ে গেছে, ওয়াসার অনেক অন্তর্জাল নালা-নর্দমা ভেঙে গেছে সেগুলো পরিবর্তন করে প্রয়োজন অনুসারে কাজ করছি। যেখানে যেটা প্রযোজ্য সেভাবেই দিব।

বার্তা২৪.কম: ঢাকাবাসী কবে থেকে এর সুফল পাবে?

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস: এরই মাঝে প্রায় ১০৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে যেটা নিজস্ব অর্থায়নে দরপত্র সম্পন্ন করেছি। কাজ চলমান রয়েছে। আগামী বছর আরো কাজ হবে। নিজস্ব অর্থায়নে ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছি হয়তোবা এই কাজটি হয়ে গেলে আরো ৫০ কোটি টাকা লাগতে পারে সেটাও নিজস্ব অর্থায়নে করব। সুতরাং স্বল্পমেয়াদি-মধ্যমেয়াদি কাজ সম্পন্ন করতে পারলে ঢাকাবাসী সুফল পাবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো অতি ভারী বৃষ্টি হলে তিন ঘণ্টা, ভারী বৃষ্টি হলে ২ ঘণ্টা এবং মাঝারি ভারী বৃষ্টি হলে ১ ঘণ্টার মধ্যেই যাতে করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারি। তাহলে জলাবদ্ধতা একটু সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। কিন্তু এটা কিন্তু সমাধান নয়। এটা হলো মধ্যমেয়াদি কার্যক্রম। সমাধান হবে যদি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করতে পারি এবং সেই কাজটা আরম্ভ করতে চাই।

বার্তা২৪.কম-এর একান্ত সাক্ষাৎকারে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস

বার্তা২৪.কম: মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়সীমা কত বছর?

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস: আমরা তো মহাপরিকল্পনার আওতায় কাজ করছি। আমরা ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা করছি। ৩০ বছরের জন্য আমরা ঢাকা শহরকে কি করে রেখে যেতে চাই, সেটার আওতায় কাজ শেষ করব ।

বার্তা২৪.কম: এই বর্ষায় যদি ভারি বা মাঝারি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে কি আবারও পানিতে হাবুডুবু খাবে নগরবাসী?

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস: দেখুন জাদুর কাঠি তো কারো কাছে নেই। আলাদিনের চেরাগও নেই। সেটা ঢাকাবাসীও উপলব্ধি করবে। তবে এটুক বলতে পারি আমরা কোন সময়ক্ষেপণ করি নাই। যেদিন থেকে দায়িত্ব পেয়েছি সেদিন থেকেই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে চলছি। আমাদের প্রাথমিক যে কাজ ছিল সেটা হলো নিচের দিকে নদীর মুখ পর্যন্ত পানি যাওয়ার সুযোগ ছিল না, সেজন্য সেই জায়গাগুলো পরিষ্কার করতে করতে আমরা ভিতরে চলে এসেছি। ঢাকার মধ্যে এখন নালা-নর্দমা অন্তর্জাল রয়েছে যেগুলো আমরা পেয়েছি সেগুলো বন্ধ আছে, নষ্ট আছে সেই জায়গাটা যদি সংস্কার না করি তাহলে পানিটা যাওয়ার কোনো সুযোগ পাবে না নদী পর্যন্ত। সেই কাজটা হাতে নিয়েছি। আমরা যেমন পরিষ্কার করছি আবার সংস্কারও করছি। অবকাঠামোগুলো সংস্কার করতে হয়তো এ বছর লেগে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের থেমে থাকলে হবে না, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দিনে দিনে অবস্থা ভালো হবে। খারাপের দিকে আমরা যেতে দেব না। সেই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। ব্যাপক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ঢাকা শহরে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় অল্প সময়ের মধ্যে সেই বৃষ্টির পানিকে সম্পূর্ণরূপে ভূগর্ভস্থ ধারণ করার ক্ষমতা সৃষ্টি করতে হবে। সেই সক্ষমতা এখন নেই এবং সেই সক্ষমতা নিয়ে কোনো পরিকল্পনাও আগে করা হয়নি। সুতরাং আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করব যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জলাবদ্ধতাকে তাদের প্রতিকূলতা হিসেবে দেখতে না পায়।