ইউপি নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত দক্ষিণাঞ্চল

  • জহির রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইউপি নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত দক্ষিণাঞ্চল

ইউপি নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত দক্ষিণাঞ্চল

আগামী ২১ জুন বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় স্থগিত হওয়া ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নিবার্চন। নির্বাচনের দিন যতই এগোচ্ছে ততই বাড়ছে সহিংসতা। ঘটছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর, হামলা-মামলার ঘটনা।

স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে. বরিশালের হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক হামিম ঘরামী বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ ১০/১৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থাকা চারজনকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

বাবুগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থণ দেওয়া এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

একই অভিযোগে বরিশাল সদর উপজেলায় দুইজন, বানারীপাড়া ১ একজন, মুলাদীতে ৩ জন, বাকেরগঞ্জে ৪ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এদের মধ্যে অনেকেই চেয়ারম্যান প্রার্থী। বাকিরা তাদের সমর্থক।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাতকাছিমা নামক বাজারে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থী মোশারেফ হোসেন খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) নাজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল কান্তি বিশ্বাসের সমর্থকদের একই স্থানে মিছিলকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়াও মঠবাড়িয়ায় ইউপি নির্বাচনী প্রচারণার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আ.লীগ প্রার্থীর ৬ জন কর্মী আহত হয়েছে। এসময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন আকন (নৌকা) বাদী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান (অটোরিকশা) ও তার ভাই মিজানুর রহমানসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

বরগুনার আয়লা পাতাকাটায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলুর সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের কর্মীরা। এসময় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় ১৫টি মোটরসাইকেল। প্রায় ৩০ জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। প্রার্থী মজিবুল হক কিসলুর অভিযোগ-ঘটনার পর মোশাররফ হোসেনসহ ১৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

ঝালকাঠি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লিয়াকত আলী তালুকদারের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন মেয়র নিজেই। তবে এঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ২১ জুন বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে বরিশালে ৫০টি, পিরোজপুরে ৩২টি, ঝালকাঠীতে ৩১টি, বরগুনায় ২৯টি, পটুয়াখালীতে ১৯টি ও ভোলায় ১২টি রয়েছে।

মোট ১৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৬টি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৬ জন চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত সদস্য ( মহিলা মেম্বর) ৭ জন ও ৩১ জন সাধারণ সদস্য (মেম্বর) নির্বাচিত হয়েছেন।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী চেয়ারম্যানের মধ্যে বরিশাল জেলায় ১৪ জন, ভোলায় ৬ জন, ঝালকাঠীতে ৩ জন, পটুয়াখালীতে ২ জন ও পিরোজপুরে ১ জন । আর সংরক্ষিত সদস্যের মধ্যে ভোলায় ৩ জন, ঝালকাঠীতে ২ জন, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে একজন করে।

এছাড়াও মেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে বরিশালে ১৫ জন, ভোলায় ৬ জন, বরগুনায় ৪ জন, পটুয়াখালীতে ৩ জন, ঝালকাঠীতে ২ জন ও পিরোজপুরে ১ জন রয়েছে।

আরও জানা গেছে, এই ১৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ভোটার রয়েছে ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৪৪ জন ও ১৪ লাখ ৩০ হাজার ২৫ জন নারী ভোটার রয়েছে।

বরিশাল পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি আখতারুজ্জামান জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন সহিংসতা চাই না। চাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা বর্হিভুত কাজ করে তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তবে আমরা নীতি বজায় রেখে কাজ করছি। কারও পক্ষে কিংবা কারও বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দেওয়া।

গত শনিবার (১২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা কোন দল বা কোন মতের তা বিবেচ্য বিষয় নয়; নির্বাচন কমিশনের কাজ হলো সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা।

নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন তিনি