রাজাকার পূত্র হাবিব মুক্তিযোদ্ধা পূত্র রুহেলের পিএস!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাজাকার পূত্র হাবিব মুক্তিযোদ্ধা পূত্র রুহেলের পিএস!

রাজাকার পূত্র হাবিব মুক্তিযোদ্ধা পূত্র রুহেলের পিএস!

আবুল হাসনাত ওরফে হাবিব খান। যার পিতা ছিলেন রাজাকার, তিনিও পিতার আদর্শের উত্তরসূরী। ছাত্র জীবনে জামায়াতের অংঙ্গসংগঠন শিবিরের রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার পিতার ছেলে সেই হাবিব এখন ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলের রাজনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শক ও পিএস হিসেবে কাজ করছেন হাবিব খান। রুহেলের হাত ধরেই হাবিবের গায়ে এখন মুজিবকোট। সাবেক শিবিরের এ নেতা এখন বনে গেছেন পাক্কা আওয়ামী লীগারে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, হাবিব খানের বাবা আব্দুল হান্নান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বিরোধিতাকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত রাজাকার। মিরসরাইয়ের ১৩ মায়ানী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার কর্তৃক তৈরি করা রাজাকারের তালিকায়ও নাম রয়েছে তার। স্থানীয়রাসহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরসরাইয়ের ১৩ মায়ানী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আমিনুজ্জামান এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে বিজ্ঞপ্তি

আব্দুল হান্নান যে রাজাকার ছিলেন তা নিয়ে মিরসরাইয়ের ১৩ মায়ানী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আমিনুজ্জামান বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

আমিনুজ্জামান বলেন, মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে আব্দুল হান্নান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত রাজাকার। আব্দুল হান্নানের পরিবারের একাধিক সদস্য মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। যুদ্ধের সময় অভিযুক্ত হান্নান পাকহানাদার বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বাড়ি চিনিয়ে দিতে সহায়তা করতেন। পরে তার দেখানো ঘর-বাড়িগুলো পাকবাহিনী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতো।

আব্দুল হান্নান সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান বলেন, স্থানীয় সবাই জানে আব্দুল হান্নান রাজাকার ছিলেন। শুধু তিনিই নন পরিবারের কাজল নামে আব্দুল হান্নানের এক ভাতিজাও পাকহানাদার বাহিনীর সাথে যুক্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন।

আব্দুল হান্নান স্বাধীনতা বিরোধী সক্রিয় লোক ছিলেন জানিয়ে ৭ নং ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন বলেন, উনি দেশ বিরোধী ছিলেন বলেই রাজাকারের তালিকায় তার নাম এসেছে। তাদের পরিবারের আরও একজন স্বাধীনতা বিরোধী লোক আছেন তার নাম কাজল। তিনি সার্ভেয়ারের কাজ করেন। সম্পর্কে তিনি আব্দুল হান্নানের ভাতিজা ।

আব্দুল হান্নানের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরজেলা ছাত্রলীগ নেতা তানভির হোসেন চৌধুরী তপু বলেন, যেহেতু হাবিব খান আমাদের আপকামিং লিডারের পিএস সেহেতু এই সম্পর্কে আমার কিছু বলা উচিত না। তবে আপনি যেটা প্রশ্ন করেছেন সেটা আমিও জানি। শুধু আমি নই, স্থানীয়রা সাবাই জানে।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, এসব মিথ্যা। এই ধরনের কোনো কাজের সাথে আমি কোনো দিন সম্পৃক্ত ছিলাম না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজাকার আব্দুল হান্নানের ৬ সন্তানের মধ্যে ৫ মেয়ে ১ ছেলে আবুল হাসনাত। তিনি ২০০৮-১২ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সে সময়ে তিনি শিবিরের সক্রিয় নেতা ছিলেন। লোকমুখে শোনা যায়, আবুল হাসনাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইতুল মাল সম্পাদক ও স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

পরবতীর্তে নিজের নাম আবুল হাসনাত পরিবর্তন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাবিব খান হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করেন। নাম বদল করে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করে নজর কাড়েন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলের। এক সময় রুহেলের একান্ত সহচর হয়ে ওঠেন রাজাকারপুত্র হাবিব, ভাগিয়ে নেন রুহেলের পিএস পদও।

এদিকে হাবিব খানের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসবের কোনো সত্যতা নেই। যারা বলছেন আমার বাবা রাজাকার ছিলেন তাদের তথ্য প্রমাণ দিতে বলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে অন্যকোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথাও অস্বীকার করেন হাবিব খান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মাহবুবুর রহমান রুহেলের পিএস হিসেবে রাজাকার পুত্র হাবিবের পরিচিতি দেওয়া বা নিয়োগের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমালোচিত হলেও নেতার ইমেজের কথা চিন্তা করে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ তারা।

হাবিব খানের বাবা আব্দুল হান্নান রাজাকার ছিলেন এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান রুহেল বলেন, অসম্ভব! এরকম কিছু হওয়ার কথা না। বিষয়টি আমার জানা নেই, আপনারা আবার চেক করে দেখেন।

স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের রাজাকার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এমন তথ্য মাহাবুবুর রহমান রুহেলকে জানানো হলে তিনি বলেন, এমন কিছু হলে আমার কাছে তথ্য আসার কথা। আচ্ছা আমি ব্যাপারটি দেখছি।