বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলার আসামি ও মামলা বাণিজ্যের কয়েক লাখ টাকা কামানো সিকদার লিটনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৫ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে ফরিদপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে রাজধানী বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুর জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়েজ আহম্মেদ।
তিনি জানান, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের প্রতারণা করে আসছিল সিকদার লিটন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে মামলা বাণিজ্যে পারদর্শী সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিকাশ হিসাব নম্বরে তিনমাসে সাড়ে ২২ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে।
জানা গেছে, সিকদার লিটন পুলিশের তালিকায় একজন চিহ্নিত প্রতারক ও দাগী আসামি। গত ২০ জুলাই যমুনা ফিউচার পার্কের পাশে কুড়িল জোয়ার সাহারা কেন্দ্রীয় মসজিদের গলির মুখে পাকা রাস্তার ওপর গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা যান। এই ঘটনায় শফিকুল ইসলাম নামে একজন মামলা করেন। আদালতের আদেশে ২৫ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানা পুলিশ মামলাটি নথিভূক্ত করে। সেই মামলায় এজাহারনামীয় ২৭ নম্বর আসামি কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সিকদার লিটন। এছাড়া মোহাম্মদপুর থানায় মোছা. নাদিরা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট দুপুরে মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজের সন্নিকটে জনতার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে গুরুতর জখম ও হুকুম প্রদানের অপরাধে অভিযোগ করেছেন বাদী। মামলায় সিকদার লিটনকে মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা বলে অভিযুক্ত করেছেন বাদী। যেখানে তাকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সিআর-১২৫/২৫ মামলাটির এজাহার থানায় রুজু করা হয়।
২০২০ সালে এক মামলায় দীর্ঘ চারবছর কারাগারে ছিল সিকদার লিটন। এর আগেও বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে থেকেছে ভয়ঙ্কর এই প্রতারক। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেল থেকে বেরিয়ে এসে ভয়ঙ্কর এই প্রতারক মামলা বাণিজ্যসহ নানা প্রতারণামূলক কাজ শুরু করেছে।
যার একটি প্রমাণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ভাই মো. জাবেদ গুলিবিদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে ১৩ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ বিষয়ে তারা এখন পর্যন্ত কোনো মামলা-মোকাদ্দমার পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ, সিকদার লিটন নিজেকে জাবেদের খালাতো ভাই দাবি করে ঢাকার আদালতে একটি সিআর মামলার আবেদন করে, যা সম্পূর্ণ ও বানোয়াট। কারণ, এই সিকদার লিটন নামের ব্যক্তির সঙ্গে নিহত জাবেদের পরিবারের কোনো রকম আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এমনকি তাকে কোথাও কোনো মামলার আবেদন করার অনুমতি, সম্মতি বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নিও দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় নিহত জাবেদের ভাই মাইনুদ্দীন মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার তদন্ত করছে পুলিশ।
সিকদার লিটন মূলত সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, স্বচ্ছল ব্যক্তিদের টার্গেট করে আজগুবি সব মামলা দিচ্ছিল। ফেসবুক পেজে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রমণ করে পোস্ট দেয় প্রতিনিয়ত নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে চাঁদাবাজি করাই তার প্রধান উদ্দেশ্য। আর এসব অপকর্ম করতে এই প্রতারক এখন বিএনপি সমর্থক দাবি করা শুরু করে। অথচ, গত দেড় দশক ধরে সিকদার লিটন নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করত। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত দলটির হয়ে ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে এলাকায় পোস্টারিং/প্রচার করেছিল।