‘বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে সেটা অন্ধও দেখতে পাবে’
সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের জনজীবনের মানের যে উন্নয়ন হয়েছে। সেটা অন্ধ হলেও দেখতে পারবে। এটা একজন শত্রুও অস্বীকার করা উচিত না।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমার এলাকায় গিয়ে দেখলাম সেখানে ফ্রিজ আছে, বিউটি পার্লার আছে, ভান্ডারিয়াতে। আমি বললাম কোথায় আসলাম? গোপালগঞ্জে আসলাম কি না! সত্যি এটা অবিশ্বাস্য। যারা এই দেশটাকে চোখ খুলে দেখে না তাদের চোখ খুলে দেখা উচিত। সমালোচনা আমিও করতে জানি, সমাধানও তো করতে হবে, আমাদেরকেই করতে হবে। এই সংসদেই করতে হবে, এই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, করোনার মধ্যে এই বাজেটের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের জাতির ভেতরে, মানুষের ভেতরে ধন্যবাদ শব্দটা তারা বৈধ করেছে, কিন্তু ব্যবহার করে না তাদের দৈনন্দিন জীবনে। ধন্যবাদ বললেই বলে যে দালালি করে। আরে কার দালালি করব? কিসের জন্য দালালি করব। আল্লাহ যা দিয়েছেন হাজার শুকরিয়া। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সকল মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বে এখন এমন একটা সময় যাচ্ছে সকাল বেলা যিনি রাজা, বিকাল বেলা তিনি ফকির। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ একটা বাজেট দিয়েছে। এই বাজেট গতবারের চাইতে সামান্য একটু বেশি। একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে, স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, এটা অত্যান্ত আশার কথা।
প্রবীণ এই সংসদ সদস্য বলেন, অনেক বছর আগের কথা প্রেসক্লাবে আমরা আড্ডা মারছিলাম, কিছু বিদেশি সাংবাদিকও ছিল। তারা আমাকে বলল কি উন্নয়নের কথা তোমরা বল। যে দেশের মানুষকে মানুষ টানে, রিকশার কথা উল্লেখ করেছে তারা। আজকে যন্ত্র চালিত যানবাহনের সংখ্যা এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে এক সময় ঢাকা থেকে এলাকায় যেতাম স্পিডবোটে, চাঁদপুরের কাছে আসার সময় দেখতাম বড় বড় পাল তোলা নৌকা। সেগুলো এখন নাই। ছোট ছোট নৌকাগুলোও ইঞ্জিন চালিত। কৃষি ক্ষেত্রে যতখানি আশা করি ততটুক করতে পারি নাই।
তিনি বলেন, আমি পার ক্যাপিটাও বুঝি না জিডিপিও বুঝি না, কিন্তু প্রায় ৩৬ বা ততোধিক সময়ে দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে দেখার অন্যান্য সুযোগ আল্লাহ দিয়েছিলেন। কি পরিবর্তন সেটা লক্ষ্য করেছি। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যখন প্রথম যাই কি ছিল? হোগলা পাতার ঘর, গোলপাতার ঘর, ছনের ঘর। এখন সেখানে টিনের ঘর তো ডাল ভাত। দালান হয়েছে, ৬ তলা দালান।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমি পত্রিকার লোক, সত্য আমি বলব। যারা সমালোচনা করে তাদের দেশটাকে আরও একনিষ্ঠ ভাবে দেখা উচিত ছিল। দেশে কোন অভাব নেই। হ্যাঁ অভাব আছে কোনটার? ব্যবস্থাপনার।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে অর্থমন্ত্রণালয়ের একটা টানাপোড়েন সেই পাকিস্তান আমল থেকে চলে আসছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলেন বড় করেন, অর্থমন্ত্রী বলেন ছোট করেন। যে বাজেট দেওয়া হয়েছে তার ৪০ শতাংশ ব্যবহার করতে সক্ষম হব। এমন সময় ছিল এই সেদিনও, যেদিন ২০ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হতাম না। বাজেট বাস্তবায়নে সেই অবকাঠামো এখনো সৃষ্টি করতে পারি নাই, কিন্তু হচ্ছে, হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ভেতরে কিছু শুভঙ্করের ফাঁক আছে। যারা সক্রিয় সংসদ সদস্যগণ আছেন, যারা মন্ত্রীবর্গ আছেন, যারা নিজ এলাকার জিনিসটাকে ইমপার্শিয়াললি দেখার চেষ্টা করেন, বোঝার চেষ্টা করেন তারা দেখবেন বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার পর ট্যাক্স টুক্স কাটার পরে আমার এলাকায় যদি ১০০ টাকা দেওয়া হয় আমি আসলে ৬০ টাকা পাই। আমাকেও চোর বলে, কন্ট্রাকটারকেও চোর বলে, অফিসারদেরকেও চোর বলে। এখন কি করে ভাঙ্গিয়া বলব ভাই আমাকে তো আসলে ১০০ টাকা দেয় নাই।