সড়ক-নৌপথে আসছে কোরবানির পশু, রাজধানীর চাহিদা ২৫ লাখ
চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির গরু ঢুকতে শুরু করেছে রাজধানীতে। নদী ও সড়ক পথ ধরে আসা এসব গরু তোলা হবে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে। ভালো দামের আশায় যানবাহন সংকট ও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে এসব গরু নিয়ে ব্যাপারিরা নানা ভোগান্তির মধ্যেও বেছে নিয়েছেন রাজধানীর হাটগুলো।
বুধবার রাজধানীর প্রবেশ মুখ গাবতলী, সায়েদাবাদসহ নারায়নগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিগত ঈদের তুলনায় খুব কম গরুই আসছে এবার রাজধানীর হাটগুলোর উদ্দেশ্যে।
ঈদের আর সাত দিন বাকি। এত দিন গরুর হাট বসবে কী না এটা নিয়ে একটা সন্দেহ ছিলো ব্যাপারী, হাট ইজারাদার আর সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে। কিন্তু সেই সন্দেহের অবসান হয়েছে, সরকারি নির্দেশনা মেনে পশুর হাট বসানো যাবে বলে অনুমতিও মিলেছে। সেই সাথে বুধবার মধ্য রাত থেকে শিথিল হবে কঠোর বিধিনিষেধ। তখন রাজধানী মুখী গরুরবাহী পরিবহন বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।
তবে এখনো প্রায় প্রতিদিন ট্রাক ও পিকআপে করে গরু ঢুকছে রাজধানীতে এমনটা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ রোডস এ্যান্ড হাইওয়ের এসিস্ট্যান্ড সুপারেন্টেন অব পুলিশ অমৃত সূত্রধর।
তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সড়কে গরুবাহী পরিবহন চোখে পড়ছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হিসেব করলে বিগত সময়ের থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম গরুবাহী পরিবহন দেখা যাচ্ছে এবার। তবে এখন যেহেতু পশুর হাট বসানোর অনুমতি মিলেছে এবং বুধবার মধ্যরাত থেকে শিথিল করা হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ সেহেতু রাজধানীমুখী গরুবাহী পরিবহনের চাপ বাড়বে শিগগিরই।
কোভিড পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর ঘাটতি হবে না বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কোরবানির প্রস্তুতি কার্যক্রম নিয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ঈদুল আজহায় ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল ও ভেড়া এবং ৪ হাজার ৭৬৫টি উট-দুম্বা উঠতে পারে।
রাজধানীর বৃহৎ পশুর হাট গাবতলীতেও আসতে শুরু করেছে গরু। গাবতলী এলাকায় দায়িত্বরত দারুস সালাম জোনের ট্র্যাফিক কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখন পর্যন্ত গাবতলী হয়ে ঢাকার পশুর হাটগুলোতে গরু বা অন্যান্য পশু খুব কম ঢুকতে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেহেতু বিধি নিষেধ শিথিল হওয়ার পরে সড়কে গরু বা অন্যান্য পশুবাহী পরিবহনের চাপ বাড়বে। সাধারণত ঈদের তিন থেকে চারদিন আগে সড়কে এসব পশুপাখি পরিবহনের চাপ বেশি থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না আশা করি।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এবার ঢাকা বিভাগে গরু, ছাগল, ভেড়া, উটসহ কোরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা রয়েছে ২৪ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৩ টি। বিপরীতে ঢাকায় যোগান রয়েছে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৩২ টি পশুর।
অতিরিক্ত চাহিদা কীভাবে পূরণ হবে জানতে চাইলে জিনাত সুলতানা বলেন, বাকি যে ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯০ টি পশুর ঘাটতি আছে। এসব পশুর ঘাটতি পূরণ করা হবে ঢাকার বাইরে রাজশাহী, রংপুর, চটগ্রাম, খুলনা ও কুষ্টিয়া এলাকা থেকে আসা পশু দিয়ে। মূলত এসব এলাকা থেকে আসা পশুই বিক্রি হয় ঢাকায় বিভিন্ন হাটে। ঐসব হাট থেকে পশু কিনেই অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করবে ভোক্তারা।
উল্লেখ্য,মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মিটবে বলে প্রতিবেশী দেশ থেকে পশু আনা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সীমান্ত দিয়ে গরু-মহিষ আসা ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।