সর্বশেষ প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে সকল সাধারণ বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনকারীদের বয়সসীমা ২ বছর বৃদ্ধি করে ৩২ করা হলেও চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে কোন বয়স বৃদ্ধি হয়নি। ফলে চিকিৎসকরা এই ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও চিকিৎসারত শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত জোট 'ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশনস অব বাংলাদেশ'।
এই প্রেক্ষিতে বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩৪ বছর করা এবং অনতিবিলম্বে এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশনস অব বাংলাদেশ কর্তৃক 'বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকদের বয়সসীমা পূর্বের ন্যায় দুই বছর বৃদ্ধিপূর্বক ৩৪ বছর করা এবং অবিলম্বে এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার দাবিতে' আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ইউনাইটেড মেডিক্যাল অরগানাইজেশান অব ডক্টরসের মুখপাত্র ডা. মোবারক হোসেন বলেন, গত ২৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের প্রজ্ঞাপনে আবেদনকারীর বয়সসীমা ২১ থেকে ৩২ বছর উল্লেখ করা হয়। অন্যান্য বিসিএস আবেদনকারীর স্নাতক শেষ করতে যেখানে ন্যূনতম ৪ বছর প্রয়োজন হয়, সেখানে চিকিৎসকদের এমবিবিএস/বিডিএস স্নাতক ও ইন্টার্নশিপ শেষ করতে নূন্যতম ৭৮ মাস বা সাড়ে ৬ বছর লাগে।
তাই পূর্ববর্তী সকল সাধারণ বিসিএস পরীক্ষায় যেখানে আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৩০ বছর ছিল সেখানে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ বছর ছিল। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে সবার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২ বছর বৃদ্ধি করে ৩২ করা হলেও চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে কোন বয়স বৃদ্ধি হয়নি। ফলে চিকিৎসকরা এই ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে সচেতন চিকিৎসক মহলের দাবি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসক মহলের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ১৭ ডিসেম্বর (২০২৪) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এখনও বয়স বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে ৪৭ তম বিসিএস পরীক্ষায় গত ২৯ ডিসেম্বর (২০২৪) থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক মহল সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইতিমধ্যে চিকিৎসক সমাবেশ করা, জাতীয় নাগরিক কমিটির সাথে যোগাযোগ করা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়বৃন্দের সাথে দেখা করাসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সাথে অসংখ্যবার যোগাযোগ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সকল ব্যক্তিবর্গ চিকিৎসকদের বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে ইতিবাচক হওয়া সত্ত্বেও এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
এসময় চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মঈনুদ্দিন চিশতী বলেন, স্বাস্থ্য সেবা মানুষের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এই স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য রাষ্ট্র জনগণের নিকট দায়বদ্ধ। এই দায়বদ্ধতাকে কাঁধে নিয়ে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এদেশের চিকিৎসক সমাজ অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালন করার পথপরিক্রমায় চিকিৎসক সমাজ নানা সময় নানা অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছে, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ঠিক এই রকমই বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকেরা বয়সসীমার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা.গোলাম সামদানি বলেন, জুলাই ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে এই রকম একটি যৌক্তিক বিষয় সমাধান না করা এই রাষ্ট্রের বিপ্লবের পরিপন্থী হবে বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না। তাই সরকারের নিকট আবেদন থাকবে, বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকদের বয়সসীমা পূর্বের ন্যায় দুই বছর বৃদ্ধি পূর্বক ৩৪ বছর করে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
ইউনাইটেড মেডিক্যাল অরগানাইজেশান অব ডক্টরসের মুখপাত্র ডা. মোবারক হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াহাব, চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী প্রমুখ।