গণহত্যায় শহীদ, স্মৃতিসৌধের ফলকে লেখা মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের নাম বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিসৌধের ফলকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে লেখা হয়েছে। চলতি বছর ওই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করে গণপূর্ত ও গৃহায়ন অধিদপ্তর।
গত ২১ আগস্ট ফলকটি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নজরে আসলে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দ্রুত ভুল সংশোধন করে ফলক পরিবর্তনের দাবি জানান।এদিকে স্মৃতিসৌধের ফলকে তথ্যগত ভুলের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও জেলা গণপূর্ত ও গৃহায়ন বিভাগ একে অপরকে দায়ী করেছেন।
জানা গেছে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট পাকবাহিনী একটি বিশেষ ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিসকা রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পড়ে। এরপর তৎকালীন বিসকার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সলিম উদ্দিন (অবাঙালি) এবং আল বদর কমান্ডার আব্দুল মান্নান ফকিরের নেতৃত্বে উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত শালীহর গ্রামে হানা দিয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তাণ্ডব চালায় পাকবাহিনী। সেদিন গ্রামে ঢুকেই পাকবাহিনী প্রথমেই গুলি করে হত্যা করে নিরীহ কৃষক নবর আলীকে। এরপর একে এক মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনীকান্ত বিশ্বাস, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, খৈলাস চন্দ্র নম দাস, শত্রগ্ন নম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায় চরণ বিশ্বাসকে। সেদিন পাক বাহিনী গ্রামের বাসিন্দা ছাবেদ আলী বেপারীকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
শহীদ পরিবার ও স্থানীয়রা জানান শালীহর গ্রামের বধ্যভূমিতে চলতি বছর গণপূর্ত ও গৃহায়ন অধিদপ্তরের অধীনে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিসৌধের ফলকে শালীহর গ্রামে গণহত্যায় শহীদ ১৪ জন সহ মোট ১৬ জনের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে লেখা হয়েছে। ফলকে নাম থাকা অপর দুজন হলেন ছাবেদ আলী বেপারী ও মধু সূদন ধর। এরমধ্যে ১৯৭১ সালের ১৬ মে মধু সূদন ধর ও ২১ আগস্ট ছাবেদ আলীকে শালীহর গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। পরে তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে শালীহর গণহত্যায় শহীদ জ্ঞানেন্দ্র মোহন করের বাবার নাম স্মৃতিসৌধের ফলকে কৃষ্ণমোহন কর লেখা হয়েছে। সঠিক নাম হবে শ্রীনাথ কর। এমন অভিযোগ করেছেন জ্ঞানেন্দ্র মোহন করের ছেলে শহীদ পরিবারের সদস্য শীতাংসু কর বলেন, শালীহর গণহত্যায় আমার বাবা জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর শহীদ হয়েছেন। কিন্ত স্মৃতিসৌধের ফলকে আমার বাবার পিতার (আমার দাদা) নাম শ্রীনাথ করের স্থলে ভুলবশত কৃষ্ণমোহন কর লেখা হয়েছে। এছাড়াও গণহত্যায় শহীদ রামেন্দ্র চন্দ্র সরকারের নাম ভুলবশত স্মৃতিসৌধের ফলকে আমেন্দ্র চন্দ্র সরকার লেখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জেলা গণপূর্ত ও গৃহায়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত নামের তালিকা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধে নামফলক করা হয়েছে। ওই তালিকা সেখানে প্রেরণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে ভুল তথ্য দ্রুত সংশোধন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ বলেন, স্মৃতিসৌধে নাম ফলকের তালিকা গণশহীদ হিসাবে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কাউকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ভুল সংশোধনের জন্য বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।