হিংস্রতাকে জয় করে শিয়ালের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

খাবার দিচ্ছেন আরজু

খাবার দিচ্ছেন আরজু

সভ্যতার অগ্রগতিতে যখন বন্যপ্রাণীরা অস্তিত্ব সংকটে, তখন শিয়াল পন্ডিতের সাথে মানুষের বন্ধুত্ব সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান বন্যপ্রাণী প্রেমী ফজলুল করিম আরজু সখ্য গড়ে তুলেছেন শিয়ালদের সঙ্গে। একটি–দুটি নয়, ২০ থেকে ২৫টি শিয়ালের সঙ্গে গড়ে উঠেছে তাঁর এই সখ্যতা। ভালোবাসা দিয়ে শিয়ালের হিংস্রতাকে জয় করেছেন তিনি।

জানাগেছে, সন্ধ্যা নামলেই শেয়ালের দল ঝোপঝাড় ও গর্ত থেকে দল বেঁধে বেড়িয়ে জড়ো হয় পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ডাক বাংলোর সামনে। অপেক্ষা করে কখন আসবে ফজলুল করিম আরজু। কারণ প্রতিদিনই রাতে শিয়ালের জন্য খাবার নিয়ে হাজির হন তিনি। এভাবেই ধীরে ধীরে শেয়ালের সঙ্গে বন্যপ্রাণী প্রেমী আরজুর সখ্যতা গড়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, বিহারের ভেতরে ডাক বাংলোর সামনে অপেক্ষায় প্রায় ২০-২৫টি খেঁক শেয়াল। কিছুক্ষণ পর হাতে অনেকগুলো পাউরুটি ও রান্না করা খাবার নিয়ে ডাক বাংলোর সামনে আসেন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু। খাবার দিয়ে শুরু হয় কাছে ভেড়ানোর চেষ্টা, সাথে ডাকাডাকি। ডাক শুনে গর্ত থেকে বেড়িয়ে আসলো আরও বেশ কয়েকটি শেয়াল। এভাবে ধীরে ধীরে খেঁক শিয়ালের সাথে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলেছেন তিনি। তাই এখন সন্ধ্যা নামতেই ডাক দিলেই ছুটে আসেন এসব শিয়াল। শেয়ালগুলোও তাঁর ভালোবাসা পেয়ে আপন করে ঘিরে ধরে তাকে। কাছে বসে খাওয়ান আরজু।

স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার জুড়ে প্রায় অর্ধশত খেঁকশিয়ালের বসবাস। মাটির ডিবিতে গর্ত করে বসবাস করে শিয়ালগুলো। বছর দুয়েক আগে পাহাড়পুর বিহার ও জাদুঘরে যোগদান করেন আরজু। যোগদানের পর থেকেই পদক্ষেপ নিতে দেরি করেন নাই বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীর বংশ বিস্তারে এগিয়ে আসতে। নিরাপদ করেছেন শেয়ালগুলোর আবাসস্থল।

বিজ্ঞাপন

বিহারের সাইট পরিচালক সারোয়ার হোসেন বলেন, শিয়াল হিংস্র হলেও তাদের হিংস্র আচরণ কখনই চোখে পড়েনি তার। ভালোবাসায় সব হিংস্রতা জয় করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, ক্ষুধা পেলেই বাসার দরজায় এসে শব্দ করে, ডাকাডাকি করে ওরা। লকডাউনে দীর্ঘদিন বিহার ও জাদুঘরে বন্ধ ছিল দর্শনার্থীদের আগমন। ফলে চরম খাবার সংকটে পড়েছিল খেঁকশিয়ালগুলো। কিন্তু অভুক্ত থাকতে হয়নি কাউকে। ক্ষুধার্ত শিয়ালগুলোর জন্য আলাদা করে চাল কিনে রান্না করা ভাত, খিচুরি পাউরুটি খেতে দেওয়া হয়েছিল। এখনও খেতে দিতে হয়। শিয়ালগুলোকে খাবার দিতে আমার ভালো লাগে।

তিনি আরও বলেন, এই কাজে সহযোগিতা করেন বিহারের সাইট পরিচালক সারোয়ার হোসেন ও আরও কয়েকজন। তারাও খাবার দেন। তাদের ডাকেও সারা দেয় শিয়ালগুলো। অল্পদিনেই খেঁকশিয়ালগুলো পোষ মেনেছে বলেন তারা।