তলিয়ে গেছে ফসল, পানিবন্দি হাজারো মানুষ

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা ২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

শাহজাদপুরের ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ২০ হাজার মানুষ। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী প্রধান সড়ক প্রচণ্ড স্রোতে ধসে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ৪টি গ্রাম। কুড়িগ্রামের পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। গো-চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। নওগাঁয় কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে নিচু এলাকার ফসলের মাঠ। পাকা আউশ ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষক। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নিমতলা, খারিজাগাতি ও মোল্লাপাড়া এলাকায় পদ্মার পাড় ভাঙছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বালুভরা বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালাচ্ছেন পাউবোর কর্মীরা।

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা এই পরিস্থিতি শুধু অব্যাহতই নয়, আরও অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলো হলো-কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর। এসব জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার, তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, পদ্মা ও মেঘনার অন্তত ১২টি পয়েন্টে বইছে বিপৎসীমার উপরে পানি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যমুনা আরও তিন পয়েন্টে বিপৎসীমা পার করতে পারে। এগুলো হচ্ছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি, পাবনার মথুরা এবং জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্ট।

বিজ্ঞাপন

এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়- রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। আগামী তিন দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের কাঁচা রাস্তা ও বাড়িঘর ডুবে গেছে। মানুষজন নৌকায় চলাচল করছে। উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দি গ্রামের অনেকে উঁচু চৌকি ও মাচায় বসবাস করছেন। টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকে নোংরা পানি পান করছেন। কাঁচা ঘাসের অভাবে বাথান এলাকার কৃষকেরা তাদের গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মন্ডল বাজার সংলগ্ন ডাকাতিয়া গ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানির তীব্র স্রোতে ওই সড়কের প্রায় ২০০ ফুট ধসে নদীতে বিলীন হয়েছে। গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি এরেন্ডাবাড়ী, দেওয়ানগঞ্জের খোলাবাড়ী, নয়াগ্রাম, চরডাকাতিয়া, চর মাগুরীহাট, চর বাহাদুরাবাদ, হাজারী গ্রাম, মন্নিয়া বাজার, আজিজলপুরসহ অন্তত ১০টি গ্রামের লোকজন প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতেন। সড়ক ধসে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তীব্র স্রোতে নৌকায় যাতায়াত করছেন মানুষ। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সড়কের ধারে অনেক কৃষককে আক্ষেপ করতে দেখা যায়।

কুড়িগ্রামের ৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমির ফসল জলমগ্ন হয়েছে। এর মধ্যে রোপা-আমন ৮ হাজার ২০ হেক্টর এবং শাক-সবজি ৯০ হেক্টর। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের বড়াইবাড়ী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেখানে ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

নওগাঁয় কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে নিচু এলাকার ফসলের মাঠ। পাকা আউশ ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষক। মাঠের ধান কাটার উপযোগী হয়ে পড়লেও পানিতে ডুবে থাকায় কৃষকরা তা ঘরে তুলতে পারছেন না। নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, রাণীনগর উপজেলায় দেখা গেছে, মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে পাকা সোনালি আউশ ধান। অতি বর্ষণে ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় পাকা ধানের শীষগুলো যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমতলা, খারিজাগাতি ও মোল্লাপাড়া এলাকায় পদ্মার পাড় ভাঙছে। পরিস্থিতি সামলাতে সেখানে সাড়ে চার হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এদিকে বাঘায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির আউশ ও সবজি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। গবাদিপশু নিয়েও তারা বিপাকে পড়েছেন। অনেকে পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বালুঘাট এলাকার একটি আম বাগানে আশ্রয় নিয়েছেন।

গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডাব্লিউটিসির ট্রাফিক অফিসার মো. জামাল হোসেন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পদ্মায় প্রবল স্রোত বইছে। স্রোতের মুখে ফেরিগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। দেড়-দুই কিলোমিটার ভাটিপথ ঘুরে চলাচল করায় ফেরি পারাপারে সময় অনেক বেশি লাগছে। এদিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৪ নম্বর পন্টুনের পকেটপথ পানিতে তলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। ঘাটটি চালু করতে মেরামতকাজ করছে বিআইডাব্লিউটিএ।