মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলা: বসুন্ধরা গ্রুপের বক্তব্য
কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ আটজনের বিরুদ্ধে ‘হত্যা ও ধর্ষণের’ অভিযোগে মামলা করেছেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।
গত সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মাফরুজা পারভীনের আদালতে এ মামলার আবেদন করেন তানিয়া। পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৬ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। বিষয়টি বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহ মো. আবদুল কাইয়ুম নিশ্চিত করেছেন।
বসুন্ধরার এমডি আনভীর ছাড়াও তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা বেগম, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহানকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মুনিয়ার ভাড়া বাসার মালিক ইব্রাহিম আহমেদ রিপন ও তার স্ত্রী শারমিন, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং সাইফা রহমান মিম নামে একজনকেও আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মামলাটিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজানো হয়েছে বলে দাবি করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বসুন্ধরা গ্রুপকে হেয়প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদী অবাস্তব, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক তথ্য দিয়ে মামলাটি সাজিয়েছেন। যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ এই ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা মোকাবিলা করবে। বসুন্ধরা গ্রুপ বরাবরই দেশের প্রচলিত আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অতীতে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে যখনই কোনো ষড়যন্ত্র হয়েছে, তখনই আইনগত প্রক্রিয়ায় আদালতে বিচারপ্রার্থী হয়েছে বসুন্ধরা। জনৈকা তানিয়ার মামলাও আইনগতভাবে মোকাবেলা করবে বসুন্ধরা কর্র্তৃপক্ষ। আমরা আশা করছি, ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হবে ইনশাআল্লাহ।’
গত ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বোন তানিয়া। এরপর গত ১৯ জুলাই মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে বসুন্ধরার এমডির কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে তার অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। পুলিশের ওই প্রতিবেদনে অনাস্থা (নারাজি) জানিয়ে মুনিয়ার বোন ও মামলার বাদী তানিয়া অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের আবেদন করেন। তা খারিজ করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী গত ১৮ আগস্ট চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে বসুন্ধরার এমডিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
গতকাল বসুন্ধরা গ্রুপের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘একই বাদী ইতিপূর্বে তার বোন মোসারাত জাহান মুনিয়ার অপমৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের নাম জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। পুলিশের তদন্তে তার সে অভিযোগ যে অসত্য তা বেরিয়ে এসেছে, যা তদন্তকারীগণ আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছেন এবং আদালত বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উক্ত মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই তানিয়া বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নাম জড়িয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অভিযোগ থেকে দেখা গেছে, কথিত ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী মিসেস আফরোজা বেগম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের স্ত্রী মিসেস সাবরিনা সোবহানকে আসামি করা হয়েছে। ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্যতম অপরাধের সঙ্গে দেশের স্বনামধন্য বৃহৎ শিল্পপরিবারের সদস্যদের নাম জড়িয়ে তাদের হেয়প্রতিপন্ন এবং মূলত ব্ল্যাকমেইল করাই এই মামলার প্রধান উদ্দেশ্য। এমন অভিযোগে পিতা, মাতা, সন্তান ও পুত্রবধূকে আসামি করার ঘটনায় স্পষ্টত বোঝা যায়, আনিত অভিযোগ কতটা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এসব ঘটনার সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তাদের পরিবারের কারোরই কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। বসুন্ধরা গ্রুপকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’