সুরসম্রাজ্ঞী ফিরোজা বেগম নেই সাত বছর
উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুলসংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। নজরুলসংগীত সম্রাজ্ঞী ফিরোজা বেগমের আজ মৃত্যুবার্ষিকী। সাত বছর আগে এই দিনে তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে গেছেন। সুকণ্ঠী এই শিল্পীর ৮৪ বছরের কিংবদন্তি জীবনের অবসান ঘটে ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। নজরুলের গানের পাশাপাশি গজল, ভজন, ঠুমরি আর আধুনিক গানেও রেখেছেন অসামান্য অবদান।
ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই। জন্মস্থান ফরিদপুর। বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী। মা কওকাবন্নেসা বেগমও ছিলেন সংগীতানুরাগী ও সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারিণী।
১৯৪২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ইসলামী গান নিয়ে ফিরোজা বেগমের প্রথম রেকর্ড বের হয়। পেয়েছেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের দুর্লভ সান্নিধ্য। স্বয়ং জাতীয় কবির কাছ থেকে গানের তালিম নিয়েছেন। নয় বা দশ বছর বয়সে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। এর পর কীর্তিমান সুরকার, গীতিকার ও সংগীতশিল্পী কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড করেন ফিরোজা বেগম। সেটি ছিল তার দ্বিতীয় রেকর্ড। পরে এই মানুষটিরই সহধর্মিণী হন ফিরোজা বেগম। তারা ১৯৫৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির তিন সন্তান তাহসিন, হামিন ও শাফিন। তাঁরাও সংগীতের সঙ্গে জড়িত।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ৩৮০টির বেশি একক অনুষ্ঠানে গান করেছেন তিনি। নজরুলসংগীত ছাড়াও তিনি গেয়েছেন আধুনিক গান, গীত, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত। এ পর্যন্ত তাঁর ১২টি এলপি, চারটি ইপি, ছয়টি সিডি ও ২০টির বেশি অডিও ক্যাসেট বেরিয়েছে।
‘নূরজাহান’, ‘চাঁদ সুলতানা’, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী’, ‘নয়ন ভরা জল গো তোমার’, ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি’, ‘আমি চিরতরে দূরে সরে যাব’—নজরুলের এমন অনেক কালজয়ী গানের মাঝে অমর ও অক্ষয় হয়ে থাকবেন তিনি।
ফিরোজা বেগম স্মরণে ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ফিরোজা বেগম স্বর্ণপদক' প্রবর্তন করা হয়। নজরুলসংগীতে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, নজরুল একাডেমি পদক, নেতাজি সুভাষচন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি স্বর্ণপদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।